Image description

দেশের ব্যবসা-বিনিয়োগ নিয়ে দুশ্চিন্তা কমছে না ব্যবসায়ীদের। গ্যাসসংকট, ডলারসংকট, ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি, রাজনৈতিক সংকট, শ্রম আইন সংস্কার নিয়ে অস্থিরতা-সব মিলিয়ে বিনিয়োগ পরিবেশে নেমে এসেছে গভীর অনিশ্চয়তা। নতুন বিনিয়োগে সাহস পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। পুরোনো বিনিয়োগও পড়ছে ঝুঁকিতে। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলায়ও নানান জটিলতা তৈরি হয়েছে।

ব্যাংকের সুদহার সম্প্রতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ শতাংশে। উদ্যোক্তারা বলছেন, এ সুদে কোনো ব্যবসা টেকসইভাবে চালানো সম্ভব নয়। নতুন বিনিয়োগ করার মতো পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না। সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়ায় আস্থার পরিবেশও তৈরি হচ্ছে না বলে মনে করছেন তাঁরা।

অনেক ব্যস্ত কারখানা এখন আংশিকভাবে বন্ধ। কোথাও উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার শ্রমিক। ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর মতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও এ সংকট বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ নানান প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যদি দ্রুত স্থিতিশীলতা ফেরাতে পারে এবং বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করে, তবে আস্থা ফিরে আসতে পারে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা, গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ এবং শ্রম আইন সংস্কার স্পষ্ট করা জরুরি। তাদের মতে, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য রাজনৈতিক সমঝোতাও জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় ব্যবসাবাণিজ্যের এই অনিশ্চয়তা দীর্ঘমেয়াদি মন্দায় রূপ নিতে পারে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সবমিলিয়ে আসলে জগাখিচুড়ি অবস্থা তৈরি হয়েছে। সমাজের কেউই কোথাও আস্থা রাখতে পারছে না। ব্যাংকের সুদহার বেশি, গ্যাসের সংকট কিছুটা কমলেও সেটা আবার বাড়তে পারে। সবমিলিয়ে পরিবেশ বিনিয়োগবান্ধব নয়। গত এক বছরের পরিসংখ্যানও সেটা বলছে। তিনি বলেন, বিদেশি বা দেশি বিনিয়োগ কিছুই হচ্ছে না। যেসব হচ্ছে সেগুলো আগেকার অসম্পূর্ণ বিনিয়োগ সেটা সম্পূর্ণ হয়েছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকেও এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যবসা-বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো আস্থা। এখনকার পরিস্থিতিতে সেটাই অনুপস্থিত। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা যত দীর্ঘ হবে, অর্থনীতির পুনরুদ্ধার তত বিলম্বিত হবে। এখন সবকিছু থমকে আছে। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এ স্থবিরতা থাকবে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগ যারা করবেন তারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চান। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারান। বিনিয়োগ ছাড়াও অন্যান্য অর্থনীতির সূচকও কম।