
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) আরও গতিশীল করতে সংশোধন করা হচ্ছে অধ্যাদেশ। এবারের সংশোধনে নিয়মিত পাঁচ সদস্যের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে খন্ডকালীন আরও পাঁচ সদস্য। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি অর্থাৎ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্যূন গ্রেড-৩ এর একজন করে প্রতিনিধি। এ ছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন করে প্রতিনিধি খন্ডকালীন সদস্য হিসেবে থাকবেন।
‘টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৫৩’-এর আওতায় ১৯৫৬ সালে ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) প্রতিষ্ঠা হয়। যা ১৯৮৭ সালে আইন সংশোধনের মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক গঠন করা হয়। যদিও রাজউক ‘টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৫৩’ আইন অনুযায়ী চলছে। এখন বিদ্যমান এ আইন যুগোপযোগী করে যা এখন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অধ্যাদেশ-২০২৫ নামে অভিহিত করা হচ্ছে। এ আইন ঢাকা মহানগরী ও ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলা ও সাভার উপজেলার প্রজ্ঞাপিত এলাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলা এবং সরকারের দেওয়া বিভিন্ন সময় জারি করা প্রজ্ঞাপন এলাকায় প্রয়োগ করা হবে। তবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও টঙ্গী শিল্প এলাকা বাদ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান এ আইনে রাজউকের অধ্যাদেশে আন্তবদলির বিধান ছিল ‘অতি প্রয়োজনে’, যা সীমিতভাবে প্রযোজ্য ছিল। নতুন প্রস্তাবে সরকারি কর্মকর্তাদের মতো নিয়মিত বদলির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে এক স্থানে তিন বছর পূর্ণ হলে কর্মকর্তাদের রাজউক থেকে চট্টগ্রাম বা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে বদলি করা সম্ভব হবে এবং অন্য কর্তৃপক্ষ থেকেও রাজউকে আসা যাবে। এ ছাড়া থাকছে আন্তসংস্থার পদায়ন। নতুন খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কারও চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে বাধ্যতামূলক অবসর নিশ্চিত করা হবে। এতে কর্তৃপক্ষ অযোগ্য বা অদক্ষ কর্মকর্তাদের সময়মতো বদলি বা অবসর দেওয়ার সুযোগ পাবে। যা আগের আইনে রাজউকের কর্মকর্তারা সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী ৫৯ বছর বয়সে অবসর নিতেন।
এ ছাড়াও নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করা হচ্ছে। সেগুলো হলো- উন্নয়নস্বত্ব বিনিময় : রাজউক এলাকায় সরকারি কোনো উন্নয়ন কাজের ফলে যদি ওই এলাকায় ভূমির মূল্য বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে সরকার ওইসব ব্যক্তির বা জায়গার মালিকদের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ করবে। এটা হতে পারে অর্থ বা ভূমি উন্নয়নের অংশবিশেষ। অবশ্য এ বিষয়ে বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে। সেখানে বিস্তারিত নির্দেশনা থাকবে এবং সবকিছু ভালোভাবে স্পষ্টীকরণ করা হবে।
নগর পুনঃউন্নয়ন : এ উদ্যোগের মাধ্যমে শহরের কোনো ঝুঁকিপূর্ণ, জরাজীর্ণ ও অপ্রতুল এলাকাকে বসবাস উপযোগী করা হবে। বিশেষ করে সহজাত বৈশিষ্ট্য অক্ষুণœœ রেখে পুনঃউন্নয়নের মাধ্যমে ওই এলাকার জীবনমান, অর্থনৈতিক অব্যবস্থা ও কাঠামো উন্নয়ন করে বসবাস উপযোগী হিসেবে তৈরি করা যাবে।
ভূমির পুনর্বিন্যাস : রাজউক এলাকার একাধিক মালিকানাধীন খন্ডিত জমিগুলো একীভূত করে একক ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। পরিকল্পনার আওতায় প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সব ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো অর্থাৎ রাস্তা, ড্রেন, পার্ক ও গণপরিসর অক্ষুণœ রাখতে হবে। একই সঙ্গে কৌশলগত মহাপরিকল্পনা, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, স্বল্প ও নিম্ন আয়ের এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রাজউক অধ্যাদেশ-২৫-এর কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। নতুন কিছু পরামর্শ এসেছে সেগুলো পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।