Image description
♦ এক বছরে ২৫ আবেদন জারি হয়েছে মাত্র চারজনের বিরুদ্ধে ♦ তালিকায় আছেন শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে-মেয়ে সাবেক মন্ত্রী গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও হত্যা মামলার আসামি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। গত এক বছরে মাত্র চারজনের বিষয়ে রেড নোটিস জারি করেছে ইন্টারপোল। তাঁরা হচ্ছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ। অন্য তিনজন হলেন আরিফ সরকার, মহসিন মিয়া ও আওলাদ হোসেন।

ইন্টারপোলে এখনো ঝুলে আছে ২১ জনের নোটিস। বিদেশে পলাতক ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিনটি ধাপে আবেদন করা হয়।

শেখ হাসিনাসহ যাঁদের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির আবেদন করা হয়েছে, তাঁরা হলেন শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। এ ছাড়া সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

আগের বিভিন্ন মামলায় পলাতক মোহাম্মদ আলী, জেবুন্নেসা আকতার এবং হাবিব খানের বিরুদ্ধেও রেড নোটিস জারির আবেদন করা হয়েছে। 

এদিকে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ে মালিক পক্ষের গাফিলতি এবং দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থান করার অভিযোগে টিএনজেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন শামীম, ডার্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান ইত্তেমাদ উদ দৌলাহ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাবিল উদ দৌলাহ এবং রোর ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুল ইসলাম ও উজ্জ্বল হায়দারের বিরুদ্ধেও রেড নোটিস জারির জন্য ইন্টারপোলে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম আদালত, গাজীপুর এবং প্রথম ও তৃতীয় শ্রম আদালত, ঢাকায় করা মামলাকে ভিত্তি করে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। 

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, যে চারজনের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে হত্যা মামলায় পলাতক আরিফ সরকার ও মহসিন মিয়া।

সম্প্রতি দুবাই থেকে মহসিন মিয়াকে দেশে ফেরত আনা হয়। আর স্ত্রী হত্যার অভিযোগে অস্ট্রেলিয়াতে পলাতক আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে জারি নোটিস জারি হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি হয়েছে। ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

সূত্র জানান, আদালত, প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) অথবা তদন্ত সংস্থার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারির আবেদন করে থাকে। শেখ হাসিনাসহ যে ২৫ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির আবেদন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে করা আবেদনে আর্থিক অপরাধের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। আর অন্যদের বিরুদ্ধে করা আবেদনে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য-উপাত্ত যুক্ত করা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করতে গত বছরের নভেম্বরে পুলিশ সদর দপ্তরকে অনুরোধ করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) মো. রেজাউল করিম বলেন, বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করতে ইন্টারপোল সহযোগিতা করে থাকে। বিদেশে পলাতক ব্যক্তিদের সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলে সেটি সংশ্লিষ্ট দেশ ইন্টারপোলকে জানায়। যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি এখনো হয়নি, সেসব আবেদন ইন্টারপোলে প্রক্রিয়াধীন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যা-গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি, ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় একটি এবং বিগত সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে আরও একটি মামলা রয়েছে।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্র জানায়, গত এক বছরে অন্তত ১০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিস জারির জন্য পুলিশের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের সদস্যরা। দুদকের ইতিহাসে এটিই প্রথমবার, যখন একই সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একযোগে রেড নোটিস জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেড নোটিস চেয়ে পাঠানো প্রতিটি চিঠির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিস্তারিত পরিচয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, ঠিকানা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংযুক্ত করা হয়েছে।