Image description
সমুদ্রসম্পদের ব্যবহারে তলানিতে বাংলাদেশ, হয়নি ১০০ মিটার গভীরতার বাইরে জরিপ

ব্লু-ইকোনমির (সমুদ্র বা নীল অর্থনীতি) পুরোটাই অধরা। বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ এবং লবণ ছাড়া আর তেমন সম্পদ ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের নেই গবেষণার গভীরতা। ফলে সমুদ্রের তলদেশে থাকা তেল-গ্যাসসহ অন্যান্য মূল্যবান খনিজ পদার্থ আহরণ করা যাচ্ছে না। এসব অনুসন্ধানের সক্ষমতাও নেই। বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরোলেও ১০০ মিটার গভীরতার বাইরের সমুদ্রসম্পদ সম্পর্কে এখনো কোনো জরিপ করতে পারেনি বাংলাদেশ।

সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর ব্লু-ইকোনমির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দুই ধরনের সম্পদ অর্জন করেছে। একটি প্রাণিজ, অন্যটি অপ্রাণিজ। প্রাণিজের মধ্যে রয়েছে মৎস্য সম্পদ, সামুদ্রিক প্রাণী, আগাছা-গুল্মলতা ইত্যাদি। আগাছা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে ওষুধ তৈরি করা যায়। আগাছার মধ্যে ইসপিরুলিনা খুবই মূল্যবান। সমুদ্রে মাছ রয়েছে প্রায় ৫০০ প্রজাতির। চিংড়ি ৩৬, কাঁকড়া ২০ এবং শামুক-ঝিনুক রয়েছে ৩৩৬ প্রজাতির। রয়েছে শেলফিশ, অক্টোপাস, হাঙ্গরসহ নানান প্রাণীও। অপ্রাণিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে খনিজ ও খনিজ ধরনের সম্পদ। যেমন তেল, গ্যাস, চুনাপাথর। রয়েছে ১৭ ধরনের মূল্যবান খনিজ বালি। জিরকন, রোটাইল, সিলিমানাইট, ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, গ্যানেট, কায়ানাইট, মোনাজাইট, লিক্লোসিন ইত্যাদি। মোনাজাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিমেন্ট বানানোর উপযোগী প্রচুর ক্লে রয়েছে সমুদ্রের তলদেশে। এর কোনোটাই কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ।

বঙ্গোপসাগরে প্রাথমিক সম্ভাবনা যাচাই করতে জার্মানির কোম্পানি স্লামবার্জারকে দিয়ে বহুমাত্রিক জরিপ চালানো হয়েছে। কনকোফিলিপসের পরিচালিত দ্বিমাত্রিক জরিপের তথ্যও আছে পেট্রোবাংলার কাছে। এতেও গ্যাসের সম্ভাবনা দেখা গেছে। অনুসন্ধান কূপ খনন ছাড়া উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত আবিষ্কার করা যায় না। এখন পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে কোনো কূপ খনন করা হয়নি। তবে একই সমুদ্রে গ্যাস পেয়েছে পাশের দুই দেশ ভারত ও মিয়ানমার।

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগর থেকে প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন টন মাছ ধরা হয়। এর মাত্র ০.৭ মিলিয়ন টন আহরণ করে বাংলাদেশ। শকতরা হিসাবে ১০ থেকে ১২ শতাংশ। গভীর সমুদ্রের তলদেশে ভারী খনিজের মধ্যে ইলমোনাইট, টাইটেনিয়াম অক্সাইড, রুটাইল, জিরকন, গার্নেট, ম্যাগনেটাইট, মোনাজাইট, কোবাল্টসহ ভারী মূল্যবান ধাতুর সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব উত্তোলনের প্রযুক্তি নেই বাংলাদেশের। তবে প্রতি বছর বঙ্গোপসাগর থেকে ১৫ লাখ টন লবণ আহরণ করে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে।

সম্প্রতি এক সেমিনারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, সম্ভাবনার ১০ শতাংশের মতো আমরা কাজে লাগাতে পারছি। সক্ষমতা ও উচ্চতর গবেষণার অভাবে এগোনো যাচ্ছে না।

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতে। ২০১২ ও ২০১৪ সালে মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি করে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। জানা গেছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণের জন্য পাইলট প্রকল্প নেয় ২০২০ সালে। টুনা মাছ ধরতে তিনটি লং লাইনার প্রকৃতির ফিশিং ভ্যাসেল সংগ্রহের কথা থাকলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। এ সুযোগে দুটি প্রতিবেশী দেশের (ভারত ও শ্রীলঙ্কার) জেলেরা গভীর জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে বিপুল পরিমাণ মাছ শিকার করছে।