
জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন এবং ভোটে পিআর পদ্ধতি চালুসহ পাঁচ দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি নিয়ে ফের মাঠে নামছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা সাত দল। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গতকাল জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
এর আগে অভিন্ন দাবিতে ১৮ই সেপ্টেম্বর ঢাকায়, ১৯শে সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরে এবং ২৬শে সেপ্টেম্বর সারা দেশে জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে এসব দল।
নতুন কর্মসূচি সম্পর্কে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের চলমান দুর্গোৎসবের কারণে আপাতত রাজপথে তেমন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে না। কেবল জনমত গঠনে গোলটেবিল বৈঠক, আলোচনা সভা সেমিনারের মতো ইনডোর কর্মসূচি দেয়া হবে। দুর্গোৎসবের পর শক্ত কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা আছে বলে জানান জামায়াতের এই নেতা।
ইসলামী আনেদালনের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করবেন শীর্ষ নেতারা। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার সকল রাজনৈতিক দল আমাদের এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে। এরপরও সরকার দাবি পূরণে ব্যর্থ হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
জানা গেছে, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবিতে অনেকদিন থেকে সোচ্চার রয়েছে এইসব দল। তবে সম্প্রতি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ঘটনার পর যোগ হয়েছে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ। এ পর্যায়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ধারাবাহিক সংলাপে আশাব্যঞ্জক ফল না পাওয়ার পর জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা দলগুলো কয়েক দফা বৈঠকে যুগপৎ কর্মসূচি শুরুর বিষয়ে একমত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই যুগপৎ আন্দোলনের নেতৃত্বে আছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, সরওয়ার কামাল আজিজীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিসহ অন্যরা।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষিত হয়েছে সম্প্রতি। তবে দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। এ অবস্থায় পিআর পদ্ধতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি পিআর পদ্ধতির কঠোর বিরোধিতা করে এলেও জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ সমমনা কয়েকটি দল এই পদ্ধতির পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। ফলে পিআর পদ্ধতির পক্ষ-বিপক্ষের বক্তব্য রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। একপর্যায়ে পিআরের পক্ষে জনমত গঠনে বেশ তৎপর হয়ে উঠছে ইসলামী দলগুলো। গত ২৮শে জুন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন। সেখানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি বেশ জোরালোভাবে তুলে ধরেন বিভিন্ন দলের নেতারা। সেদিন ডান ঘরানার ১০টি রাজনৈতিক দল একমঞ্চে উঠে পিআর পদ্ধতির ব্যাপারে দাবি তুলে ধরে বলেছেন, পিআর পদ্ধতি না হলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। মূলত ওইদিন থেকেই এই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। যদিও ওইদিনই বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করে বলেছেন, একটি গোষ্ঠী নির্বাচনকে পিছিয়ে দিয়ে জাতির সর্বনাশ করতে চাচ্ছে। তবে এই দাবির পক্ষের দলগুলো তাদের অবস্থানে বেশ অনড় আছে। জানা যায়, গত ১৩ই জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের ফলে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামী নেপথ্যে থেকে ইসলামী দলগুলোকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে অবশেষে ২৮শে জুন ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে এক মঞ্চে ওঠেন তারা। ওই মঞ্চ থেকে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বিভিন্ন কথা বলেন বক্তারা। তবে ওইদিনই এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, তাদের উদ্দেশ্য আছে। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ৫৩ বছর দেশে আসনভিত্তিক নির্বাচন হয়েছে, আমরা এবার দলভিত্তিক নির্বাচন চাই। এতে প্রত্যেকটি ভোটের মূল্যায়ন হবে। তিনি বলেন, এত বছর ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন পদ্ধতি চলে আসছে। বর্তমান সরকার সংস্কারের মাধ্যমে জাতিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে ওয়াদাবদ্ধ। সরকারের সেই ওয়াদা পূরণ করতে হলে পিআর মানতে হবে। ড. হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, রাষ্ট্রের সংস্কার নয়, শুধু নির্বাচন-সংক্রান্ত যেসব সুপারিশ অতি জরুরি, অন্তত নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত, সেগুলোর সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচন শুধু একটি নির্বাচন নয়; এটি একটি বিপ্লব-পরবর্তী জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের সুযোগ। ফ্যাসিস্টদের বিচার এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্যদিয়েই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।