
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে চুরির অভিযোগে আটক আব্দুল্লাহর (২৩) পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে আব্দুল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সলিমগঞ্জ ক্যাম্পের পুলিশ বাড়াইল গ্রাম থেকে আব্দুল্লাহকে আটক করে। নিহত আব্দুল্লাহ বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের আবুল মিয়ার ছেলে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ শনিবার রাতে ফাঁড়িতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্যাতন চালানো হয়। পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে বাড়াইল গ্রামের তবির মিয়ার বাড়িতে প্রায় ৫ লাখ টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় নবীনগর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এরই সূত্র ধরে দুই দিন আগে পুলিশ মাসুদ রানা (৩০) ও বাবু মিয়া (২৩) নামে দু’জনকে আটক করে। যদিও অভিযোগ রয়েছে তিনজনকে একসঙ্গে গ্রেফতার করা হয়।
দু’জনকে চালান করা হয় একজনকে চালান করা হয়নি। পুলিশ জানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ রানা তার শ্যালক আব্দুল্লাহকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করে। এর জেরে শনিবার দুপুরে বাড়াইল গ্রামের মাসুদ রানার ভাড়া বাসার সামনে স্থানীয় লোকজন আব্দুল্লাহকে আটক করে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সলিমগঞ্জ ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
অভিযোগ উঠেছে, আহত অবস্থায় তাকে শনিবার আটক করা হলেও রবিবার বিকেলে কেন হাসপাতালে পাঠানো হলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানিয়েছে পুলিশের নির্যাতনে আব্দুল্লাহর মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে রবিবার বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে আব্দুল্লাহকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আব্দুল্লাহর মা জোসনা বেগম বলেন, আমার ছেলে অপরাধী হলে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দিত, এভাবে জীবন দিতে হবে কেন? পুলিশের হেফাজতে আমার ছেলের মৃত্যুর বিচার চাই।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সাকিল মিয়া বাদী হয়ে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সলিমগঞ্জ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. মহিউদ্দিন, তবি মিয়া, আলামিন, আয়নাল হকসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০–২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা সম্মিলিতভাবে আব্দুল্লাহকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন এবং পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন।
আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সলিমগঞ্জ ক্যাম্প ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। উত্তেজনা বাড়তে থাকায় প্রশাসন ফাঁড়িটি বন্ধ করে দেয় এবং সেনা মোতায়েন করে।
এই ব্যাপারে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম জানান, চুরির মামলার সঙ্গে জড়িত আব্দুল্লাহকে জনতা গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। রোববার দুপুরে তার অবস্থার অবনতি হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রকৃত অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা হবে।