
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পাবনা জেলার পাঁচটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং এরই মধ্যে ঘোষিত প্রার্থীদের পক্ষে জোর প্রচার-প্রচারণা চলছে। বইছে ভোটের আগাম হাওয়া। বিএনপি থেকে এরই মধ্যে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। পাবনা-৫ (সদর) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের পক্ষে আগে থেকেই সমর্থক ও কর্মীদের ব্যাপক তৎপরতা চলছে।
এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামী জেলার সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এই দল ঘোষিত প্রার্থীদের পক্ষে মাঠ গোছানোর কাজ চালাচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন. এই দুটি দলের প্রার্থীদের মধ্যেই মূল ভোটযুদ্ধ হবে। জানা গেছে, এ দুই দল ছাড়াও অন্যান্য দল ভোটের মাঠে সরব রয়েছে। ভোটারদের মধ্যে চলছে আগাম হিসাব-নিকাশ। ঘরে ভোট নিয়ে আলোচনা জমছে ভোটার-সমর্থক-কর্মীদের মধ্যে, বাইরে চলছে প্রচার-প্রচারণার প্রতিযোগিতা।
পাবনা-১ (সাঁথিয়া) : আগে সাঁথিয়া উপজেলার সঙ্গে বেড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এই আসনের আওতায় ছিল। কিন্তু সংসদীয় আসনের নতুন নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী, সাঁথিয়া উপজেলা নিয়ে এখন একক আসন এটি।
এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাংবাদিক এম এ আজিজ, সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি শামসুর রহমান, সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুন্নাহার খানম মিরু, একই কমিটির সদস্যসচিব মো. সালাহ উদ্দিন খান, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক (চীন) সরদার এম জাহাঙ্গীর হোসাইন, তাঁতিদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি হাজি ইউনুস আলী, সাবেক ছাত্রনেতা ডা. মীর মো. শফিকুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য মাসুদুল হক মাসুদ। কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মাসুদুল হক মাসুদ এরই মধ্যে মাঠে ব্যাপকভাবে সরব রয়েছেন। উপজেলার হাট-মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। তরুণ ভোটারদের বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। তরুণদের একটি বড় অংশ তাঁর পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে। এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী দলের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন।
পাবনা-২ (বেড়া-সুজানগর) : এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম রেজা হাবিব। তবে এই আসনের সঙ্গে নতুন করে বেড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা যুক্ত হওয়ায় ভোটার ও প্রার্থীর হিসাবে কিছুটা জটিলতা বেধেছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষে এই আসনে দু-একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাথা চাড়া দিতে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী দলের সুজানগর উপজেলা আমির কে এম হেসাব উদ্দিন। এখানে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম সরওয়ার খান জুয়েলকে দলের প্রার্থী করা হয়েছে।
পাবনা-৩ (চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর) : এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাবেক সংসদ সদস্য ও চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাকসুদুর রহমান মাসুদ খন্দকার, চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য হাসানুল ইসলাম রাজা। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ভাঙ্গুড়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও জেলা জামায়াতের শিক্ষাবিষয়ক কমিটির সদস্য অধ্যাপক মাওলানা আলী আছগার।
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া) : এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু। বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম সরদারও। এখানে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী পাবনা জেলা জামায়াতের আমির ও দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল।
পাবনা-৫ (সদর) : বিএনপি থেকে এই আসনে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তাঁর পক্ষে আগে থেকেই সমর্থক ও কর্মীদের ব্যাপক তৎপরতা চলছে। তবে এরই মধ্যে বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় ও উঠান বৈঠকের মধ্য দিয়ে নিজের মাঠ গোছানোর কাজে ব্যাপক ব্যস্ত রয়েছেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা। আগে থেকেই ধারাবাহিকভাবে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ট্রাস্টের মাধ্যমে নিজ সংসদীয় এলাকার বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা সহযোগিতায় পাশে থাকায় তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বলে মনে করেন কর্মী-সমর্থকরা। তবে এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন আশা করছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুন্নবী স্বপন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুল হক বাবু ও শেখ আবু ওবায়দা তুহিন। এই আসনে জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির প্রিন্সিপাল মাওলানা ইকবাল হুসাইনকে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে ভোটের মাঠে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন মুফতি নাজমুল হাসান।