
কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার পোশাকশ্রমিকেরা । ছোট - বড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শ শিল্পকারখানায় চাকরি করা হাজার হাজার শ্রমিক ভয় নিয়ে আসা- যাওয়া করেন । অনেক সময় তাঁরা কারখানার সামনেই হামলা , মারধর , বেতনের টাকা ছিনিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হন । শ্রমিকদের দাবি , ফটকে মাদকাসক্ত অপরাধীরা বসে থাকে । সুযোগ বুঝে তাঁদের ওপর হামলা চালায় । বাধ্য হয়ে অনেকে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন । তবে পুলিশের ভাষ্য , শ্রমিকদের নিরাপত্তায় তারা কাজ করে যাচ্ছে ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় , উপজেলার ডেকো গার্মেন্টস , রিদিশা গার্মেন্টস , ডিবিএল গার্মেন্টস , এক্স সিরামিক , রিদিশা বিস্কুট কারখানা , নিট হরাইজন গার্মেন্টস , ফখরুদ্দিন গার্মেন্টস , চায়না গার্মেন্টস , ঢাকা হ্যামস্ , রাতুল গার্মেন্টস , ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেড , আমান গার্মেন্টস , সিজি গার্মেন্টস , মেঘনা গার্মেন্টসসহ উপজেলার বেশির ভাগ পোশাকশ্রমিকের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে । অপরাধী চক্রের সদস্যরা বেশির ভাগ মাদকাসক্ত । চিহ্নিত অপরাধী । দলবেঁধে কারখানার ফটকের সামনে অবস্থান নেয় । বেতনের সময় তাদের উৎপাত বাড়ে । ঘরে ফেরার পথে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা হয় । অনেক সময় তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর অর্থ হাতিয়ে নেয় চক্রটি ।
রাতুল গার্মেন্টসের শ্রমিক ফজলুর হক বলেন, ‘গার্মেন্টসে চাকরির কারণে আমাদের বিভিন্ন সময় রাতে বসতবাড়িতে ফিরতে হয় । গত এপ্রিলে কর্মস্থল থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম । হঠাৎ করে কয়েকজন যুবক - কিশোর পথরোধ করে । প্রথমে আমার কাছে টাকা দাবি করে । কেন টাকা দেব— এমন কথা বলার পরপরই রাস্তার পাশের জঙ্গলে আমাকে তুলে নেয় । শারীরিক নির্যাতন করা হয় । এরপর ৩ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তিতে ছেড়ে দেয় । পরে অন্য কারখানায় চাকরি নিই । 'ভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দেননি বলে জানান ফয়জুর ।
ফখরুদ্দিন গার্মেন্টসের শ্রমিক মিনারা খাতুন বলেন , ‘ গত ৯ আগস্ট রাতে কর্মস্থল থেকে এক সহকর্মীর সঙ্গে বাসায় ফিরছিলাম । রাস্তায় কয়েকজন এসে আমাদের পথরোধ করে বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলতে থাকে । একপর্যায়ে ওরা আমাদের বিয়ের কাবিননামা চায় । আমি বারবার বলার পরও আমাদের পরিচয় শুধু সহকর্মী — এটা মানতে চায় না ওরা । বিভিন্নভাবে অপবাদ দিয়ে আমাদের অপমান - অপদস্থ করে । এরপর সঙ্গে থাকা কিছু টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেয় । মানসম্মানের ভয়ে আইনের আশ্রয় নিইনি । '
ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেড কারখানার শ্রমিক সানোয়ার হোসেন বলেন , ১২ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টার দিকে কয়েকজন সহকর্মী কারখানার সামনের দোকানে গল্প করছিলাম । হঠাৎ পাঁচজন ছেলে এসে আমাকে টেনেহিঁচড়ে পাশে নিয়ে যায় । এরপর মারধর করে দাবি করে আমার কাছে নাকি তারা টাকা পাবে । আমাকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি সঙ্গে থাকা বন্ধুরা আমার স্ত্রীকে জানালে সে আমাকে ফোন করে । ওরা জঙ্গলে নিয়ে মারধর করে বলে , ফোন করে স্ত্রীকে বল টাকা নিয়ে আসতে । এরপর একটি গভীর জঙ্গলে নিয়ে হাত - পা বেঁধে অনেক নির্যাতন করে । স্ত্রী একজনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে এলেও চাহিদামতো টাকা না দেওয়ায় ছাড়েনি । স্ত্রীর সামনে আমাকে মারধর করে । এরপর স্ত্রী ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানালে পুলিশ এসে জঙ্গল থেকে আমাকে উদ্ধার করে । এরপর ভয়ে ভয়ে কারখানায় যাওয়া - আসা করি । ’
ক্রাফটসম্যান ... ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেড কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র রায় বলেন , ‘ কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা খুবই জরুরি । চলতি মাসে আমাদের একজন শ্রমিককে তুলে নিয়ে হাত - পা বেঁধে নির্যাতন করা হয় । কারখানার মূল ফটকের সামনে একটি দোকান থেকে তাঁকে তুলে নেওয়া হয় । খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধার করে । এখন পর্যন্ত অপরাধীরা আইনের আওতায় আসেনি । ' শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি ) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন , শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব সময় কাজ করছে পুলিশ । তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে । এ ছাড়া তাঁদের নিরাপত্তায় পুলিশ অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে ।