Image description
গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে নাম করে আটকে দেয়া হচ্ছে দেশের অনেক সম্মানিত নাগরিকদের

এসবি’র ইমিগ্রেশনের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ এখনও ফ্যাসিস্ট সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামের ঘনিষ্ট কর্মকর্তাদের হাতে। একাধিক চক্রের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা খরচ করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ ও তাদের সহযোগিরা কোন বাধা ছাড়াই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সহযোগী এবং জুলাই-আগস্ট গনঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার খুনী এবং ওই সব মামলার আসামিরাও প্রভাবশালী চক্রের হাত ধরে যখন তখন বিদেশ যাচ্ছেন। অথচ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নাম করে দেশের অনেক সম্মানিত নাগরিক যারা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকেও আটকে দেয়া হচ্ছে। স্বৈরাচার হাসিনার সুবিধাভোগি আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তারা এখনও ইমিগ্রেশনে রন্ধ্রে রন্ধ্রে কর্মরত আছে। স্বপদে বহাল থাকায় তারাই কৌশলে ইমিগ্রেশন দিয়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ খুনি পুলিশ কর্মকর্তাদের ভারতসহ বিদেশ পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে। দেশের স্পর্শকাতর অতিগুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ইমিগ্রেশনে সৎ ও পেশাদার পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে পুলিশের ইমেজ পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল (রা:) আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সকল ইমিগ্রেশনে যখন কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে বিদেশে যাওয়ার সময় আটকে দেয়া হয় তখন বলা হয়- আপনার নামে গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে। আপনি বিদেশে যেতে পারবেন না। তখন ওই যাত্রীর পক্ষ থেকে কোন গোয়েন্দা সংস্থা বা কি রিপোর্ট রয়েছে তা জানতে চাইলে কর্তব্যরত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা জানাতে ব্যর্থ হন। অন্যদিকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার কিংবা শনিবার এ ধরনের ঘটনায় শিকার যাত্রীকে বলা হয় অফিস খোলার পর এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অথচ ইমিগ্রেশন সেবা ‘জরুরী সেবা’ হিসেবে ২৪ ঘন্টা সার্ভিস থাকার কথা।

ভুক্তযোগী যাত্রীরা বলছেন, ইমিগ্রেশন দেশের একটি স্পর্শকাতর ও অতিগুরুত্বপূর্ণ পুলিশের ইউনিট। এখানে একজন বিদেশগামী যাত্রীর সমস্যা সমাধান করার ক্ষেত্রে সপ্তাহিক ছুটির বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। ইমিগ্রেশনে ২৪ ঘন্টা সার্ভিসের ব্যবস্থা থাকা জরুরী। এ বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় দেশে অনেক বিদেশগামী যাত্রী শুধু বিদেশ যাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না; বরং মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির মধ্যেও পড়তে হচ্ছে ওইসব যাত্রীকে। পাশাপাশি দেশের ইমিগ্রেশনের সুনামও ক্ষুন্ন হচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইমিগ্রেশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শুক্রবার ইনকিলাবকে বলেন, আমরা যারা ইমিগ্রেশনে কর্মরত রয়েছি তারা শুধু আদেশ পালন করি। আমাদের পক্ষে কোন যাত্রীকে ফেরত পাঠানো বা যেতে দেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার সুযোগ নেই। পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হয় কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সরকারী কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, গত সপ্তাহে তিনি দেশের বাইরে যান। কিন্তু হযরত শাহজালাল (রা:) আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে যাওয়ার পর তার পাসপোর্ট নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাকে জানানো হয়, একটি গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স লাগবে। এক ঘন্টা পরে তাকে পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হয়। তিনি বলেন, আমি আওয়ামীলীগ সরকারের সময় বঞ্চিত-নির্যাতিত কর্মকর্তা এবং সরকারের অনুমতি নিয়ে বিদেশে যাচ্ছি এরপরেও আমাকে হয়রানি করা হয়। এটি পরিকল্পিত হয়রানি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সরকারের একধিক সংস্থার একাধিক কর্মকর্তারা বলছেন, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের পর পুলিশ নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। সে অবস্থা থেকে ফিরতে অনেক দিন সময় লেগেছে। এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বাহিনীতে হাসিনার দোসররা এখনও বহাল আছে। ইতোমধ্যে হাসিনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী, এমপি, খুনি পুলিশ কর্মকর্তারা ইমিগ্রেশন পেরিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। ইমিগ্রেশনের কর্মরত কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ছাড়া এভাবে ফ্যাসিস্টদের বিদেশে যাওয়া কখনোই সম্ভব ছিল না। অনেক সময় সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও ইমিগ্রেশনে কর্মরত কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়-যা খুবই দূঃখ জনক।

স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) সূত্র জানায়, সারাদেশে আকাশপথ, স্থলপথসহ যতগুলো ইমিগ্রেশন আছে সবগুলোর সেন্ট্রাল সার্ভার একটাই। অর্থাৎ যে কেউ ইমিগ্রেশন অতিক্রম করতে গেলেই তার নামে কোনো অভিযোগ থাকলে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দিতে পারে। হাসিনার পতনের পর বলা হয়েছিল, জীবনের নিরাপত্তার জন্য ৬২৬ জন নেতাকর্মী ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছেন। ওই ৬২৬ জন পালিয়ে গেল কিভাবে? যারা ইতোমধ্যে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বিচরণ করছে তারা কিভাবে গেলো? এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর কোনো নির্দেশনা থাকলে নিশ্চয় তা কার্যকর হতো। তা যখন হয়নি তার মানে নির্দেশনা ছিল না, নয়তো আওয়ামীপন্থী পুলিশ কর্মকর্তারা সে নির্দেশনা না মেনে সহচরদের বিদেশ পাড়ি জমাতে উল্টো সহযোগিতা করেছে।

একজন ভুক্তভোগি জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশনে হাসিনার দোসররা এখনও বহাল থাকায় সাধারণ মানুষকে আটকে হয়রানি করা অব্যাহত রয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের শত শত নেতা-পাতি নেতা ওই একই ইমিগ্রেশন পাড়ি দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলা ও পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি কাহার আখন্দ হাসিনার ঘনিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। কাহার আখন্দের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলা এবং পিলখানা হত্যা মামলার তদন্ত করে মনগড়া চার্জশীট দেয়ার অভিযোগসহ নানা অভিযোগ রয়েছেন। যে কারণে এর বিনিময়ে হাসিনার সময়ে কাহার আখন্দ পেয়েছিলেন শত শত কোটি টাকা ও একের পর এক পদোন্নতি।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকাসহ সারাদেশের ইমিগ্রেশনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এরই মধ্যে এসবির প্রধান পদে রদবল হলেও এসব কর্তকর্তাদের কোন পরিবর্তন হয়নি। এদের নেটওয়ার্ক অনেক শাক্তিশালী। ফলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তারা এদের হাত ধরে ইমিগ্রেশন দিয়ে পালিয়ে গেছেন অতি সহজেই। তবে নেপথ্যে রয়েছে মোটা অংকের লেনদেন। পালিয়ে যাওয়া অনেককেই আবার জেল থেকে জামিন করিয়ে এনে বিদেশে যেতে সহযোগিতা করা হয়েছে বলে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

একটি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সক্রিয় রয়েছে মানব পাচারে জড়িত বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের সাথে আওয়ামীপন্থ’ী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের যোগসাজশ দীর্ঘদিনের। বিদেশগামী যাত্রীদের হয়রানির পাশাপাশি বিমানবন্দরের বিভিন্ন বিভাগের অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে বিগত সরকারের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তারা (সাবেক আ’লীগ ক্যাডার কর্মকর্তা) আবার সক্রিয় হলে ছাত্র-জনতা আন্দোলনের শত শত শহীদের রুহের যেমন শান্তি পাবে না, তেমনি দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হবে।