
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামী সপ্তাহে নির্বাচনি সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অক্টোবরজুড়েই চলবে এ সংলাপ। তবে সংলাপের আগেই নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চূড়ান্ত করতে পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে সংলাপে প্রথম দিকে আমন্ত্রণ পাচ্ছে সুশীল সমাজ; নারী নেত্রী ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা। আর পরে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। সংলাপসূচি চূড়ান্ত করার জন্য ফাইল উপস্থাপন করেছে ইসি সচিবালয়। তারিখ চূড়ান্ত হলেই সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি (আমন্ত্রণ, কতজন প্রতিনিধি আসবে, লিখিত মতামত) পাঠাবে ইসি। এক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটি, পূজা ও অন্যান্য ছুটি বিবেচনায় রেখে অক্টোবরজুড়ে সংলাপ চলতে পারে। ইসির ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, এ সংলাপ এক থেকে দেড় মাস সময়ের মধ্যে কয়েকটি ধাপে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের সংলাপে ডাকা হবে। এদিকে নিবন্ধনে আগ্রহীদের মধ্যে বাছাইয়ে টিকে থাকা নতুন ২২টি দলের মধ্যে ‘যোগ্যদের’ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি চলতি সপ্তাহে দেওয়ার আশা করেছেন ইসির কর্মকর্তারা। তবে চলতি সপ্তাহে না হলে আগামী সপ্তাহে নতুন দলের নিবন্ধন চূড়ান্ত করে বিজ্ঞপ্তি দেবে ইসি সচিবালয়। এক্ষেত্রে অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সংলাপে যাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে, তাদের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। প্রাথমিক তারিখ হিসেবে ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর চিন্তা করা হচ্ছে। আর এই তারিখ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।
এর আগে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, রোডম্যাপে যে সময় রয়েছে, সে অনুযায়ী চলতি মাসের শেষ দিকে সংলাপ শুরু করব। ইসি সচিবালয় এটা জানিয়ে দেবে। দুয়েকদিন এদিক-ওদিক হতে পারে, তবে রোডম্যাপ অনুসরণ করেই এগোব। রোডম্যাপে বলা হয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা সভা হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। ২৩-৩০ সেপ্টেম্বর নতুন দল নিবন্ধন করে গেজেট প্রকাশ এবং সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে সংলাপ। নিবন্ধনে আগ্রহী ২২টি নতুন রাজনৈতিক দলের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে তদন্ত শেষ হয়েছে। সেসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছে কমিশন। নিবন্ধনযোগ্য দলের বিষয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। দলের নাম বা কোনো বিষয়ে আপত্তি থাকলে তা শুনানি করে নিষ্পত্তি করবে ইসি। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তা শেষ করার কথা রয়েছে।
কোন কোন দল নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে তা নিয়ে আভাস দিতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা। কমিশন সভায় আলোচনা হলে প্রয়োজনে পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্তও হতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কানাডা সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। চলতি সপ্তাহের যে কোনোদিন কমিশন সভা হতে পারে।
অন্যদিকে দলগুলোর মতামত না নিয়েই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও নিজস্ব প্রস্তাব মিলিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও আচরণবিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইসি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও সব মহলে অস্বস্তি রয়েছে। নির্বাচনি আইন সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসন, পুলিশের রদবদল, ইসির ভূমিকা, কর্তৃত্ব নিয়ে বরাবরই সংলাপে সরব থাকে দলগুলো। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়েও দলগুলোর মতামত চাইবে ইসি। এ ছাড়া সংলাপে মূল আলোচ্যবিষয় থাকবে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর নির্বাচনি আচরণবিধিমালা। তবে সংলাপে দলগুলো কোনো পরামর্শ দিলে তা আমলে নেবে কমিশন। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল রয়েছে ৫০টি। নতুন নিবন্ধন পাওয়া দলগুলোও এবারের সংলাপে যুক্ত হবে। সে কারণে নিবন্ধন কাজ শেষ করেই আমন্ত্রণসূচি চূড়ান্ত করা হবে।