Image description
♦ জ্বলছে না বাসাবাড়ির চুলা ♦ শিল্পাঞ্চলে গ্যাসসংকট পুরোপুরি কাটেনি ♦ সিএনজি স্টেশনে গাড়ির দীর্ঘ লাইন

দিনভর অপেক্ষা করেও গ্যাসের চুলা জ্বালাতে পারছেন না ঢাকার অনেক এলাকার বাসিন্দা। টানা হোটেলের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। কেউ কেউ ইলেকট্রিক চুলা ও রাইস কুকার কিনে সাংসারিক ব্যয় বাড়িয়েছেন। গ্যাসের অভাবে পুরো উৎপাদনে যেতে পারছেন না শিল্প মালিকরা। সরকার শিল্পে গ্যাস সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি করায় অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও শিল্পাঞ্চলে গ্যাসসংকট এখনো কাটেনি। থমকে আছে ব্যবসা-বাণিজ্য। নগরীর সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ এতই কম যে, তাদের খরচ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। কেউ আবার গ্যাসের অভাবে স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছেন। সব মিলে আবাসিক, শিল্পকারখানা ও সিএনজি স্টেশনগুলোতে চলছে গ্যাসের জন্য হাহাকার। বাংলাদেশ তেল গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দৈনিক ২৮ শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর বিপরীতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। অর্থাৎ দৈনিক ১২ শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তিতাস কর্তৃপক্ষ লাইন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে। এ ক্ষেত্রে যেসব এলাকায় গ্যাসসংকট হচ্ছে সেখানে কারিগরি কোনো সমস্যা হতে পারে। বর্তমানে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খাতের চেয়ে শিল্পখাতেই বেশি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আমরা নতুন করে গ্যাস কূপ খনন ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। এ ছাড়া তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি।

রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় গ্যাসের জন্য হাহাকার দিন দিন বাড়ছে। গ্যাসের অভাবে অনেক গ্রাহক বিকল্প হিসেবে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার শুরু করেছেন। মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং, পল্লবী, কুড়িল, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, শনির আখড়া, আজিমপুর, বাসাবো, বনশ্রী, রামপুরা, মুগদা, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দিনের বেলা এসব এলাকায় গ্যাসের চাপ একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। রাতে কিছুটা ফিরলেও তা এতই কম যে পানি গরম করতেই দীর্ঘ সময় লেগে যায়। উত্তরখানের গৃহিণী সালেহা আক্তার বলেন, ‘আগে সপ্তাহে অন্তত শুক্রবার গ্যাস থাকত। কয়েকদিন ধরে তাও থাকছে না। ছোট বাচ্চাদের বাইরে থেকে খাবার এনে দিচ্ছি। এতে স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে আবার খরচও বেড়ে যাচ্ছে।’

বনশ্রীর এইচ ব্লকের বাসিন্দা মাহবুবুর আলম বলেন, ‘ভোর হলেই গ্যাস চলে যায়। সারা দিন আর গ্যাসের দেখা মেলে না। রাইস কুকারে কোনোরকম ভাত-ডাল রেঁধে খাচ্ছি। কিন্তু এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না।’

শিল্পোদ্যোক্তারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গ্যাসসংকটের কারণে শিল্পে নতুন সংযোগ বন্ধ আছে। এতে বিনিয়োগও থেমে আছে। বাড়ছে না নতুন কর্মসংস্থান। কারখানায় গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই থাকার কথা। কিন্তু এখন পাওয়া যাচ্ছে ৫ থেকে ৬ পিএসআই। কোনো কোনো এলাকায় তা ৩ পিএসআইয়ের সমান। রাতে কিছুটা গ্যাস পাওয়া গেলেও দিনে মিলছে না। সিএনজি, এলপিজি ও ডিজেল দিয়ে উৎপাদন ধরে রাখতে গিয়ে মালিকরা অনেকে হিমশিম খাচ্ছেন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিস অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারাস অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. শাহরিয়ার বলেন, নবীনগর থেকে মানিকগঞ্জের লাইনে গ্যাসের চাপ নেই বললেই চলে। এসব এলাকায় গ্যাসের চাপ তিন পিএসআই। তবে সাভার, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া ও গাজীপুর জোনে আগের থেকে গ্যাসের চাপ সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে পাঁচ থেকে সাত পিএসআই করে চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনো শিল্প মালিকদের উৎপাদন ধরে রাখতে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সিএনজি ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গ্যাসসংকটের প্রভাব পড়েছে পরিবহন খাতেও। সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। সিএনজি স্টেশনগুলো থেকে বলা হচ্ছে কমপ্রেসার চালু করেও চাহিদার অর্ধেক গ্যাস তারা দিতে পারছেন না। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারগুলো। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরও অর্ধেক জ্বালানি নিয়েই তারা স্টেশন ছাড়ছেন। এরই মধ্যে সাভারের ডেলটা ডর্কইয়ার্ড নামের একটি সিএনজি স্টেশনের মালিক গ্যাসের চাপ না পেয়ে সিএনজি স্টেশন বন্ধ করে সেখানে চকোলেট কারখানা করছেন। বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি বলেন, স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপের অবস্থা খুব বেশি খারাপ। সরকারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি ১৫ পিএসআই গ্যাস সরবরাহ করার কথা। কিন্তু অনেক বছর ধরেই তা দেওয়া হচ্ছে না। আগে ৫ থেকে ৭ পিএসআই গ্যাসের চাপ পেতাম। এখন দিনে ২ থেকে ৩ পিএসআই-এর ওপর উঠছেই না। ঢাকার বাইরেও অবস্থা ভালো না। সরকারের সঙ্গে কথা বললে আমাদের জানানো হয় যে, তারা শিল্প খাতেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। গ্যাসসংকটের জন্য উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্যাসসংকটের অবস্থা এমন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে অনেক স্টেশন মালিক ব্যবসা চালাবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।