
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১৯.৫ ওভারে ১৬৯/৬ (শামীম ১৪*, নাসুম ১*; তানজিদ ০, লিটন ২৩, সাইফ ৬১, হৃদয় ৫৮, জাকের ৯, মেহেদী ০)
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: সাইফ হাসান।
শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে ১৬৮/৭ (শানাকা ৬৩*, ওয়েল্লালাগে ০*; নিসাঙ্কা ২২, মেন্ডিস ৩৪, মিশারা ৫, পেরেরা ১৬, আসালাঙ্কা ২১, কামিন্দু ১, হাসারাঙ্গা ২)
এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে লঙ্কানদের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের ৪ উইকেটে হারিয়ে সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে টাইগাররা।
অবশ্য শুরুতে যেভাবে দাপট দেখিয়ে খেলছিল বাংলাদেশ তাতে জয়টা অনায়াসেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ ওভারে ও তার আগের ওভারে মিলিয়ে দ্রুত ৩ উইকেট হারালে জমে ওঠে ম্যাচ। ১৮.৩ ওভারের আগে পর্যন্ত স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১৫৯। হৃদয় ওই ওভারে ৫৮ রানে থামতেই শেষ ওভারে জাকের (৯), মেহেদীর (০) বিদায়ে ১৬৮ রানে ৬ উইকেট হারালে জন্ম নেয় নড়বড়ে পরিস্থিতির। ২ বলে জিততে প্রয়োজন পড়ে ১ রান। পঞ্চম বলে অবশ্য সিঙ্গেল নিয়ে সব শঙ্কা উড়িয়ে দেন নাসুম।
পুরো জয়ের কৃতিত্ব ব্যাট হাতে দুজনের। ওপেনিংয়ে নামা সাইফ হাসানের ও তাওহীদ হ্রদয়ের। সহজ জয়ের ভিতটা শুরুতে গড়ে দেন সাইফ। ৪৫ বলে ফেরার আগে করেন ৬১ রান। তানজিদ তামিম শূন্য রানে ফিরলে লিটনের সঙ্গে মিলে যোগ করেন ঝড়ো ৫৯ রান। পাওয়ার প্লেতে সাইফের ঝড়েই মোমেন্টাম পেয়ে যায় বাংলাদেশ। লিটন ২৩ রানে ফিরলে আবার হৃদয়কে নিয়ে ৫৪ রান যোগ করেন সাইফ। সাইফ আউট হলে হৃদয় দায়িত্ব নিয়ে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে গেছেন। শামীমকে নিয়ে যোগ করেন ঝড়ো ৪৫ রান। দলকে জয়ের কাছে নিয়ে হৃদয় ৫৮ রানে ফিরলে শামীম প্রান্ত আগলে জয় নিশ্চিতে অবদান রাখেন। ১২ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন শামীম।
লঙ্কানদের হয়ে ২১ রানে দুটি উইকেট নেন দাসুন শানাকা, ২২ রানে দুটি নেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাও। একটি নেন দুশমন্থ চামিরা।
হৃদয় আউট ৫৮ রানে
সাইফের পর বাংলাদেশকে জয়ের কাছে নেওয়ার কাজটা করছিলেন তাওহীদ হৃদয়। তুলে নেন ফিফটি। ১৮.২ ওভারে দলের ১৫৯ রানে এলবিডাব্লিউকে ৫৮ রানে কাটা পড়েন তিনি। হৃদয় রিভিউ নিলেও লাভ হয়নি। চামিরার বলে আউট হওয়ার আগে তার ৩৭ বলের ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছয়।
৩১ বলে হৃদয়ের ফিফটি
সাইফের বিদায়ের পর প্রান্ত আগলে খেলছেন তাওহীদ হৃদয়। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে চতুর্থ ফিফটির দেখা পেয়েছেন তিনি। হৃদয় ফিফটি পেয়েছেন ৩১ বলে।
সাইফের বিদায়ে ভাঙলো ৫৪ রানের জুটি
৬০ রানে লিটনের বিদায়ের পর দুর্দান্ত জুটিতে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন সাইফ হাসান ও তাওহীদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেটে ৪৫ বলে ৫৪ রান যোগ করেন তারা। ১৪তম ওভারের শেষ বলে ফিফটির দেখা পাওয়া সাইফকে থামান হাসারাঙ্গা। তাতে ৪৫ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় ৬১ রানে কাটা পড়েন সাইফ। বাংলাদেশ ১১৪ রানে হারায় তৃতীয় উইকেট।
৩৬ বলে সাইফের ফিফটি
শূন্য রানে তানজিদের বিদায়ের পর সাইফ হাসানের ঝড়ো ব্যাটিংয়েই এগোচ্ছে বাংলাদেশ। ১১তম ওভারে ৩৬ বলে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। তার আগেই ১০ ওভারে সাইফের ব্যাটে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৮২।
পাওয়ার প্লেতে সাইফ ঝড়ের পর ফিরলেন লিটন
১ রানে পড়েছিল বাংলাদেশের প্র্রথম উইকেট। তার পর ১৬৯ রানের লক্ষ্যে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে চাপ সামলেছেন ওপেনার সাইফ হাসান। তার বারুদে ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ ৬ ওভারে ১ উইকেটে যোগ করে ৫৯ রান। সাইফ এই সময় ১৯ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় তুলেন ৩৪ রান। লিটন খেলছিলেন রয়ে-সয়ে। তবে সপ্তম ওভারেই তাকে ২৩ রানে বিদায় দেন হাসারাঙ্গা। আক্রমণে এসে বাংলাদেশ অধিনায়ককে তালুবন্দি করান তিনি। লিটনের ১৬ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার।
শুরুর ওভারেই ফিরলেন তানজিদ
১৬৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুর ওভারেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। নুয়ান থুশারার বলে বোল্ড হয়ে শূন্য রানে ফিরেছেন ওপেনার তানজিদ তামিম। তাতে ১ রানে পড়ে বাংলাদেশের প্রথম উইকেট। তামিম গ্রুপ পর্বেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন।
বাংলাদেশকে ১৬৯ রানের লক্ষ্য দিলো শ্রীলঙ্কা
সুপার ফোরে বাংলাদেশের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ১৬৯ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তারা দাসুন শানাকা ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটে তুলেছে ১৬৮ রান। লঙ্কান অলরাউন্ডার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩৭ বলে অপরাজিত থাকেন ৬৪ রানে। তাতে ছিল ৩টি চার ও ৬টি ছক্কার মার!
শুরুটা ও শেষটা দারুণ ছিল শ্রীলঙ্কার। ওপেনিং জুটিতেই পাওয়ার প্লেতে ৪৪ রান যোগ করেছিলেন নিসাঙ্কা ও কুশল। নিসাঙ্কার আউটের পর কুশলও দ্রুত ফিরলে মাঝ ইনিংসে পথ হারিয়ে বসে তারা। পরে প্রমোশন পেয়ে ব্যাট করতে নামা শানাকার ঝড় ম্যাচে ফেরায় তাদের। এই সময় ক্যাচও মিস হয় তার। সুযোগগুলো নিতে পারলে লঙ্কানদের আরও কম রানে বেঁধে ফেলা যেত।
বল হাতে সবচেয়ে মিতব্যয়ী ছিলেন মোস্তাফিজ। তার কারণে শেষ দিকে রান পায়নি লঙ্কান দল। ২০ রানে নেন ৩ উইকেট। মাঝের দিকে লঙ্কানদের বিপদে ফেলেন অফস্পিনার মেহেদী হাসান। ২৫ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন। শুরুর জুটি ভাঙা তাসকিন ৩৭ রানে নেন একটি উইকেট। সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছিলেন শরিফুল ইসলাম। কোনও উইকেট না পেলেও খরচ করেন ৪৯ রান।
মোস্তাফিজের শেষ ওভারে পড়লো তিন উইকেট
আসালাঙ্কা-শানাকা জুটি রান বাড়িয়ে নিচ্ছিল শেষ দিকে। মোস্তাফিজের ১৯তম ওভারে এসেই জুটি ভাঙে আসালাঙ্কার রান আউটে। একই ওভারে মোস্তাফিজের বলে আউট হন নতুন ব্যাটার কামিন্দুও (১)। তাতে দ্রুত সময়ে ১৫৬ রানে পতন হয় ষষ্ঠ উইকেটের। একই ওভারের শেষ বলে নতুন ব্যাটার হাসারাঙ্গাকেও (২) তালুবন্দি করান কাটার মাস্টার।
শানাকার ৩০ বলে ফিফটির পর রানআউট আসালাঙ্কা
১৩.৪ ওভারে ৯৭ রানে পড়ে চতুর্থ উইকেট। তার পর ঝড়ো জুটি গড়েন দাসুন শানাকা ও চারিথ আসালাঙ্কা। শানাকা ঝড়ে নাসুমের ১৫তম ওভারে আসে ১৭ রান। পরের ওভারে আসালাঙ্কা চড়াও হন তাসকিনের ওপর। তোলেন ১৪! শানাকা ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩০ বলে তুল নেন ফিফটি। তাও আবার শরিফুলের ১৮তম ওভারের শেষ দুই বলে টানা দুই ছক্কা হাঁকিয়ে। শানাকার ফিফটির পরের ওভারেই অবশ্য আসালাঙ্কার রানআউটে ভাঙে ২৭ বলে ৫৭ রানের বিস্ফোরক জুটি। লঙ্কান অধিনায়ক ১২ বলে ১চার ও ১ ছক্কায় করেছেন ২১ রান।
পেরেরাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন মোস্তাফিজ
কুশল মেন্ডিস, কামিল মিশারার দ্রুত বিদায়ে শ্লথ হয়ে পড়ে রানের চাকা। তখন জুটি গড়েন দাসুন শানাকা ও কুশল পেরেরা। ২৭ বলে ৩২ রানের জুটিতে ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। ১৩.৪ ওভারে পেরেরাকে গ্লাভসবন্দি করিয়ে জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান। পেরেরা ১৬ বলে বিদায় নেন ১৬ রানে। তাতে ছিল ১টি চার।
কুশলের পর মিশারাকেও বিদায় দিলেন মেহেদী
দুই সেট ব্যাটারের বিদায়ের পর খুব বেশি স্বস্তিতে ছিলেন না কামিল মিশারা। তাকে বেশিক্ষণ টিকতেও দেননি মেহেদী। নিজের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই ফিরতি ক্যাচ বানিয়ে বিদায় দেন লঙ্কান ব্যাটারকে। ১১ বল খেলা মিশারা আউট হন ৫ রানে।
কুশল মেন্ডিসকে ফেরালেন মেহেদী
শুরু থেকে বাংলাদেশের ওপর চড়াও হয়ে খেলছিলেন লঙ্কান দুই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। নিসাঙ্কাকে পাওয়ার প্লেতে ফেরান তাসকিন। কিন্তু হুমকি হয়ে ছিলেন কুশল। তার ব্যাটেই ৬ ওভারে ১ উইকেটে যোগ হয় ৫৩ রান। অষ্টম ওভারে ফিরে বিপজ্জনক এই ব্যাটারকে তালুবন্দি করান মেহেদী। সুইপ করতে গিয়ে ২৫ বলে ৩৪ রানে থামেন কুশল। তাতে ছিল ১টি চার ও ৩টি ছয়ের মার।
নিসাঙ্কাকে থামালেন তাসকিন
দুবাইয়ে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামলেও লঙ্কান দুই ওপেনার মিলে ঝড়ো সূচনা এনে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হন তারা। তাতে ৫ ওভারেই ওপেনিং জুটিতে স্কোর দাঁড়ায় ৪৪ রান। পঞ্চম ওভারে তাসকিনের প্রথম বলে নিসাঙ্কা ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। সেই নিসাঙ্কাকেই ওভারের শেষ বলে তালুবন্দি করান তাসকিন। মেরে খেলতে গিয়ে লঙ্কান ওপেনার ১৫ বলে থামেন ২২ রানে। তাতে ছিল ৩টি চার ও ১টি ছয়।
u099fu09b8u09c7u09b0 u09aeu09c1u09b9u09c2u09b0u09cdu09a4u09c7u09b0 u099bu09acu09bfu0964"}"> টসের মুহূর্তের ছবি। টস জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেই আবার তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। কারণ আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে লঙ্কানদের জয়েই নিশ্চিত হতো টাইগারদের পরবর্তী রাউন্ড। শেষ পর্যন্ত সেটিই হয়েছে। এখন আবার সুপার ফোরেই শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি লিটন দাসের দল।
লঙ্কানদের বিপক্ষে ৬ উইকেটে গ্রুপ পর্বে হারলেও আজ রোমাঞ্চকর ম্যাচের আশা করছেন, টাইগারদের বোলিং কোচ শন টেইট। সেই লক্ষ্যে শুরুতে টস জিতে বোলিং নিয়েছে বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কা আবার শোকাবহ আবহে ম্যাচটা খেলতে নামছে। আফগানিস্তান ম্যাচের পর বাবা মারা যাওয়ার দুঃসংবাদ পান শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার দুনিথ ওয়েল্লালাগে। দুনিথের বাবার মৃত্যুতে এদিন এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।
একাদশে কারা
শ্রীলঙ্কা একাদশে কোনও পরিবর্তন আনেনি। আফগানিস্তান ম্যাচের একাদশ নিয়েই খেলছে। তবে বাংলাদেশ দুটি পরিবর্তন নিয়ে খেলছে। উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান ও লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একাদশে ঢুকেছেন অফ স্পিনার মেহেদী হাসান ও বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।
বাংলাদেশ একাদশ: তানজিদ হাসান, সাইফ হাসান, লিটন দাস (উইকেট রক্ষক ও অধিনায়ক), জাকের আলী, শামীম হোসেন, নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।
শ্রীলঙ্কা একাদশ: পাথুম নিসাঙ্কা, কুশল মেন্ডিস (উইকেটরক্ষক), কামিল মিশারা, কুশল পেরেরা, চারিথ আসালাঙ্কা (অধিনায়ক), কামিন্দু মেন্ডিস, দাসুন শানাকাম, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, দুনিথ ওয়েল্লালাগে, দুশমন্থ চামিরা ও নুয়ান থুশারা।