Image description

রাজধানী ঢাকায় যানজট নিরসনের জন্য সড়কের কয়েকটি সিগন্যালে পরীক্ষামূলকভাবে আধুনিক প্রযুক্তির ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র স্থাপন করেছে সরকার। এই প্রযুক্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সিগন্যাল ও যানবাহন। বলা হয়েছে, এই প্রযুক্তিতে সংকেতবাতি চালুর পর ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা আর হাতের ইশারায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করবেন না। সংকেতবাতি মেনে চলতে হবে সব যানকে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা শুধু সংকেত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। তবে, যে উদ্দেশ্যে এই প্রযুক্তি সড়কে স্থাপন করা হয়েছে তা আসলে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কাজে আসছে না এ সব ট্রাফিক সিগন্যাল।  কারণ সড়কের যানবাহন বা পথচারী কেউই এই প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত না, কেউ মানছে না এই পদ্ধতির ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ট্রাফিক পুলিশরা হাত দিয়ে আগের মতোই নিয়ন্ত্রণ করছেন সিগন্যাল। 

বৃহস্পতিবার একাধিক ট্রাফিক ইন্টারসেকশন ঘুরে এ চিত্র দেখা  গেছে। সরজমিন পরীক্ষামূলকভাবে  স্থাপিত এ সব ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র-সংশ্লিষ্ট একাধিক সিগন্যালে দেখা গেছে, ট্রাফিক লাইটসহ যন্ত্রগুলো কাজ করছে ঠিকই, কিন্তু পথচারী বা যানবাহনের চালকরা কেউই ওই সিগন্যাল মানছেন না। ট্রাফিক পুলিশ আগের মতোই ইশারা দিয়ে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করছেন, সিগন্যাল দিচ্ছেন। সিগন্যাল বাতির সঙ্গে লাগানো ছোট ছোট মাইকগুলোর মাধ্যমে দেয়া বিভিন্ন নির্দেশনা মানছেন না যানবাহন চালকরা। তবে, ট্রাফিক বাতি ও ওই যন্ত্রে দেখানো সময় অনুযায়ী সিগন্যাল ছাড়া বা গতি থামানোর চেষ্টা করছেন। পথচারীরা আগের মতোই বিপজ্জনকভাবে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। বিভিন্ন সিগন্যালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ বলছে, এই সিস্টেমে ভোগান্তি আরও বেড়েছে ট্রাফিক পুলিশের। কারণ তাদের অল্প সময় পরপর সিগন্যাল ছাড়তে হচ্ছে। আবার সিগন্যাল দিতে হচ্ছে। অল্প অল্প করে ধরে রেখে পুনরায় আবার ছাড়তে হচ্ছে। তারা জানিয়েছে, নতুন প্রযুক্তির এই পদ্ধতি তাদের কোনো কাজে আসছে না। কেননা তারা আগের মতো দাঁড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে তারা বলছেন, কিছু সিগন্যালে গাড়ির চাপ অনেক বেশি হওয়ায় এই প্রযুক্তিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে চালুর ফলে কিছু ত্রুটিও ধরা পড়ছে। এগুলো পর্যালোচনা করে চূড়ান্তভাবে হয়তো সবক’টি ইন্টারেকশনে এই প্রযুক্তিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। 

নুরুল ইসলাম নামের একজন ট্রাফিক পুলিশ বলেন, এই যন্ত্রগুলো আমাদের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। অযথা লাগিয়ে রেখেছে। বাস্তবে আমরাই সব করছি। এখন আরও ঘনঘন ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়তে হচ্ছে, আবার সিগন্যাল দিতে হচ্ছে। বাতির পাশে সময় গণনা হয়। সময় হলেই সিগন্যাল ছেড়ে দিতে হচ্ছে। কিন্তু সব গাড়ি ঠিকমতো সিগন্যাল ক্রস করতে পারছে না। ৬০ মিটারের দূরত্ব ৫ সেকেন্ডে ক্লিয়ার হওয়া যায় না। সড়কে বিভিন্ন ধীরগতির যানবাহন যেগুলোর জন্য সময় একটু বেশি লাগে। নামপ্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন ট্রাফিক পুলিশ বলেন, ট্রাফিক সিগন্যালগুলো আছে কি নাই, আমরা সেটা বুঝি না। সব আমরাই করছি। তবে, এগুলো ঠিকমতো কাজ করলে পথচারীদেরও ভালো হতো, আমাদেরও ভালো হতো। আমাদের আর এভাবে দিনভর থাকা লাগতো না। তবে, সিগন্যাল বাতিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কর্মকর্তারা বলছেন, পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে সিগন্যাল মেনে চলতে জনসচেতনতার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।     

সমপ্রতি ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত সাতটি ইন্টারসেকশনে পরীক্ষামূলকভাবে এই স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করা হয়। সাতটি ইন্টারসেকশন হলো- হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, সোনারগাঁও (কাওরান বাজার), ফার্মগেট, বিজয় সরণি, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং জাহাঙ্গীর গেট মোড়। এতে ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। দেশীয় প্রযুক্তিতে লাল-সবুজ-হলুদ বাতির খুঁটি বসানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন যৌথভাবে এই কাজ করেছে।

পরীক্ষামূলকভাবে বসানোর পর সুফল পেলে আরও ১৫টি ইন্টারসেকশনে ওই ট্রাফিক ব্যবস্থা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।  
প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ প্রযুক্তির সংকেত বাতি পরিচালিত হচ্ছে আধা-স্বয়ংক্রিয় (সেমি অটোমেটেড) পদ্ধতিতে। স্বাভাবিক সময়ে সংকেত বাতি চালু ও বন্ধের বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট সময় পরপর কোনো এক পাশের রাস্তায় যান চলার কিংবা থামার জন্য সবুজ ও লাল বাতি জ্বলবে বা নিভবে। সড়কের কোনো একপাশের যানবাহনের চাপ বুঝে প্রয়োজনে এ সংকেত বাতি ম্যানুয়ালিও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ফলে যানজট পরিস্থিতি বুঝে নিয়ন্ত্রণকক্ষে থাকা অপারেটরকে নির্দেশনা দেবেন ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা। সে অনুযায়ী অপারেটর সবুজ-লাল বাতি জ্বালিয়ে কোনো একপাশের যানগুলোকে চলার বা থামার সংকেত দেবেন।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার মানবজমিনকে বলেন, আমরা যে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তি প্রতিস্থাপন করেছি। কিন্তু এগুলো কার্যকর ব্যবহারের দায়িত্ব এখন জনগণের। যন্ত্রগুলো ঠিকঠাক মতো কাজ করছে আমি দেখেছি। কিন্তু এগুলো মানতে হবে পথচারী ও যানবাহনগুলোর। পথচারী এবং যানবাহনের চালকরা ঠিকমতো মানতে চান না। তাই এই প্রযুক্তির বিষয়ে যথেষ্ট প্রচার-প্রচারণা চালানো দরকার, সকলে যেন এটি জানতে পারে এবং মেনে চলে। তবে যেহেতু পরীক্ষামূলকভাবে বসানো হয়েছে, আমরা দেখছি আরও।