Image description
মাজার-দরগা ভাঙা, অগ্নিসংযোগের ঘটনার নেপথ্যে কারা? আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় ড. ইউনূস ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিয়ে এপ্রিলে চলে যাবেন : ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী পিআর পদ্ধতি দাবিতে আন্দোলনরত জামায়াত ভোটের আগে পরাজয় নিশ্চিত করেই নির্বাচনে যাবে : জাহেদ উর রহমান জামায়াত পিআর ওসিলায় নির্বাচনের বিরোধিতা করে দেশকে তালেবানি রাষ্ট্রে পরিচিত করতে চায় : মোহাম্মদ শাহ আলম এ দেশে কেউ ইসলামের বিরুদ্ধে ও বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে রাজনীতি করে বেশিদিন টিকতে পারেনি : রাশেদ খান

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এটি প্রায় নিশ্চিত। গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টার এ বার্তার পর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা প্রস্তুত। দেশের নির্বাচনী ট্রেন লাইনে উঠে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে? সংবিধানের বিধান মেনে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন করবে নাকি নেপাল থেকে আমদানি করে এনে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে? এ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশের সব রাজনৈতিক শক্তি সা¤্রাজ্যবাদী ভারত ও তাদের নাচের পুতুল হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একাট্টা। সবাই হাসিনার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চায়। কিন্তু জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী হলেও আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দিল্লির নীলনকশা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। ‘জুলাই সদন’ বাস্তবায়ন অজুহাতে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবিতে জামায়াতের বট বাহিনী সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে। অথচ বিএনপিসহ দেশের অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার।

দেশের সুশীল সমাজ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় থেকে শুরু করে সবাই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের পক্ষে এবং নির্বাচন কমিশন সে পথেই অগ্রসর হচ্ছে। অথচ নির্বাচনের ‘পানি ঘোলা’ করতে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া গরম করছে। আওয়ামী লীগ ও ভারতের তাঁবেদার গণমাধ্যমগুলো পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে প্রচারণায় ‘জামায়াতময়’ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় ১২ কোটি ভোটার পড়ে গেছেন দ্বন্দ্বে। নির্বাচনের বাকি মাত্র সাড়ে চার মাস, অথচ কি পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে তা তারা বুঝতে পারছেন না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের উচিত আসন্ন নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা দেশবাসীর সামনে খোলাসা করা। বিশেষ করে ‘নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার’ মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবেÑ ঘোষণা দেয়ার পর নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। এখন প্রধান উপদেষ্টা কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে তা জাতির সামনে খোলাসা করলে এ নিয়ে জনগণ যেমন পরিষ্কার বার্তা পাবেন; তেমনি আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে ভারতের অ্যাজেন্ডা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি জানিয়ে রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা বন্ধ হয়ে যাবে। তারা আরো বলেন, নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে ধোঁয়াশার কারণে যারা নির্বাচন পেছানোর কৌশল করছেন তারা দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই অজুহাত খাড়া করতে একের পর এক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারেন। নির্বাচনের পরিবেশ নেই এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে মাজার-দরগায় হামলার ঘটনা ঘটছে, কেউ কেউ এমন আশঙ্কাও করছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, “পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হলে সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ যে ১০০ আসন পাবে, সেটি সবাই জানে। তারপরও জামায়াত পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি জানাচ্ছে কার্যত নির্বাচন পেছানোর উদ্দেশে। জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন জানে, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হবে না এবং জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করছে। ড. ইউনূসের উচিত সংবিধান মেনে প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন হবেÑ এটি পরিষ্কার করা। অবশ্য সেটি না করলেও ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়। তিনি দুর্বল খেলোয়াড় নন। তার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র আছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তিনি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করে এপ্রিলেই দেশ থেকে চলে যাবেন। সংবিধানের বাইরে গিয়ে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দিকে যাবেন না। এটি মনে রাখতে হবেÑ যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা অনুযায়ী উপদেষ্টা পরিষদ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিদেশি নাগরিক, এনজিওকর্মী, বিশ্বব্যাংকের কর্মীদের বসানো হয়েছে। তারা যতই নিজেদের স্বার্থে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাক না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা চায় তাই হবে। বুঝতে হবে এতদিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দেখত ভারতের দৃষ্টিতে, এখন নিজের দৃষ্টিতে দেখছে। পিআর ছাড়া নির্বাচন করবে না এমন প্রচারণা চালালেও প্রচলিত পদ্ধতির নির্বাচনে জামায়াত সবার আগে অংশগ্রহণ করবে।”

দেশের মানুষ ১৫ বছর ধরে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। বিনিয়োগ না হওয়ায় দেশে বেকারত্ব বাড়ছে, অর্থনীতির চাকা আটকে যাচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসছে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ফলে নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। মানুষ ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। নির্বাচনের লক্ষ্য স্থির করে সরকার এগোনোয় স্থিতিশীল অবস্থার পথে দেশ। অথচ জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ এবং পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবিতে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। মব সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা এবং মাজার-দরগা ভাঙা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। অনেকটা ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের আগে পরিকল্পিতভাবে যে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছিল, বর্তমানে সে অপচেষ্টা চলছে। গত কয়েক মাসে অর্ধশত মাজারে (মাজার বা সুফি কবরস্থান, দরগা) হামলা চালানোর অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লার হোমনা উপজেলার আসাদপুর গ্রামে মাইকে ঘোষণা দিয়ে চারটি মাজারে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। অথচ বাংলাদেশ হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতার দেশ। ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধসহ সব ধর্ম শ্রেণি ও বর্ণের মানুষ শত শত বছর ধরে একসাথে বসবাস করছে। বাংলাদেশের মতো ‘লিবারেল দেশ’ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। এ দেশে বেশির ভাগ সময় নারী প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেন। সংসদের স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেতাও নারী ছিলেন। এমনকি সংসদ উপনেতাÑ নারীই দায়িত্ব পালন করেন। এ দেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। অথচ বিদেশি চক্রান্তে ২০০৭ সালে যেমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং রাজপথে প্রকাশ্যে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা, অরাজকতা এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলে ওয়ান-ইলেভেন ঘটিয়ে ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দীন ক্ষমতা গ্রহণ করেন; বর্তমানে তেমন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগকে আগামী সংসদে পুনর্বাসনে যেমন পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবির নামে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চলছে; তেমনি অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে আরেক সরকার তথা কিছু উপদেষ্টা ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি সংস্কারের নামে নির্বাচনে পেছানোর চেষ্টায় এসবে ইন্ধন দিচ্ছেন। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যতই বাড়বে, ততই তাদের লাভ।

এ নিয়ে সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, “বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের মোড়লরা নয়া উপনিবেশ সৃষ্টি করছে বিভিন্ন দেশে। সারা পৃথিবী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দেশের করিডোর, গভীর সমুদ্রবন্দর ইজারা দিয়ে মিয়ানমারের সাথে করিডোরের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে আমাদের দেশটিকেও ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। অথচ দেশে জামায়াত স্টেট পাওয়ারের মধ্যে আরেকটি পাওয়ার সৃষ্টি করে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের নামে দেশকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিচ্ছে। ’১৪, ’১৮, ’২৪ সালের হাসিনা নির্বাচনকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। দেশের মানুষ এখন নির্বাচন চাচ্ছে। আর এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল, মৌলবাদী জামায়াত নানা ওসিলায় নির্বাচনের বিরোধিতা করছেÑ দেশে যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে বাংলাদেশে কোথায় যাবে। জামায়াত পিআর ওসিলায় নির্বাচনের বিরোধিতা করে দেশকে তালেবানি রাষ্ট্রে পরিচিত করতে চায়।”

জামায়াতের পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান তার ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন, “জামায়াতের পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে, দলটি ভোটের আগে পরাজয় নিশ্চিত করেই নির্বাচনে যাবে। যতই পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনে যাব না দাবি করুক না কেন, সবার আগে জামায়াতই প্রচলিত পদ্ধতির নির্বাচনে যাবে এবং ইতোমধ্যেই ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলটির নেতারাও জানেন, বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতির ভোট হবে নাÑ তারপরও নির্বাচন পেছানোর চেষ্টায় পিআর ইস্যু নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।”

এটি ঠিক, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জামায়াত ঢুকে গেছে। প্রশাসনের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে জামায়াত সমর্থিত আমলারাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। আবার যারা অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে চান, সেই উপদেষ্টা ও সংস্কার কমিশনের সদস্য, প্রধান উপদেষ্টার একাধিক সহকারী জামায়াত অনুসারী আমলাদের পথ অনুসরণ করছেন। ফলে প্রশাসনযন্ত্র কার্যত জামায়াতের কব্জায় চলে গেছে। অন্যদিকে, দেশের সবচেয়ে বৃহৎ ও ১৭ বছর ধরে নির্যাতিত দল বিএনপির মাঠ পর্যায়ের কিছু নেতার নাম চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে গেছে। বছরের পর বছর ধরে বঞ্চিত-নির্যাতিত নেতাদের কেউ কেউ চাঁদাবাজি করেন। বিএনপি থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে কয়েক হাজার নেতাকে বহিষ্কার এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তারপর প্রশাসনের জামায়াতি চেতনার আমলা, ক্ষমতায় দীর্ঘদিন ধরে থাকার প্রত্যাশী একাধিক উপদেষ্টা বিএনপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করছেন। আর আওয়ামী লীগকে আগামী সংসদে আনার চেষ্টায় পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবির ব্যাপারী ও চিহ্নিত কিছু গণমাধ্যম ও জামায়াত-শিবির-আওয়ামী লীগের হাজার হাজার বট বাহিনী সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপির নামের সাথে ‘চাঁদাবাজ ট্যাগ’ দেয়। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে আগামী সংসদে পুনর্বাসনে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি এবং বিএনপিকে চাঁদাবাজ ট্যাগ দিয়ে যখন চিহ্নিত গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা হচ্ছে; তখন বিএনপিকে পরিকল্পিতভাবে ভোটযুদ্ধে অগ্রসর হতে হবে। দেশের সর্ববৃহৎ দল এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছেÑ এমন ভাব দেখিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামলে ধরা খেতে হবে বিএনপিকে, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মতোই। বিএনপি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে লক্ষে জামায়াত-ইসলামী আন্দোলনসহ দেশি-বিদেশি শক্তি কাজ করছে। নির্বাচনী মাঠে ওই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে বিগত দিনগুলোতে আন্দোলনের সঙ্গী সব দল, রাজনৈতিক শক্তি, ইসলামী ধারার দল-সংগঠন, ওলামা-মশায়েখ, দরগা-মাজারকেন্দ্রিক শক্তিগুলোকে সঙ্গে নিয়েই ভোটযুদ্ধে নামতে হবে বিএনপিকে। অবশ্য এ ব্যাপারের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে জিতে গেছি এমন মানসিকতা পরিহার করতে হবে।

ইসলামবিদ্বেষী চেতনাধারীদের সতর্ক করে দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, “এ দেশে কেউ কখনো ইসলামের বিরুদ্ধে ও বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে রাজনীতি করতে পারেনি, আগামীতেও পারবে না। গণঅধিকার পরিষদ ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। আমরা ইসলামিক দল নই কিন্তু আমরা যারা মধ্যপন্থা অবলম্বন করি, আমরা কেউ ইসলামের বিরুদ্ধে নই। ইসলামিক মূল্যবোধকে ধারণ করে বাংলাদেশের যে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা, সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশের সর্ববৃহৎ দল বিএনপিকে সেটি মনে রেখেই অগ্রসর হতে হবে।”

বিএনপি বিরুদ্ধে সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলার পরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, “বিএনপিকে জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি চর্চার পথে হাঁটতে হবে। নির্বাচনের আগে তথাকথিত প্রগতিশীলতা নয়; বরং ইসলামী মূল্যবোধের মূলশক্তি নিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে নামতে হবে। যতই পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি করা হোক, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে সংবিধান অনুযায়ী হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেটিই চায়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপির মহাসচিবসহ দুজন নেতা, জামায়াত ও এনসিপির একজন করে গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন। ওখানেই বৈঠক হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের গাইডলাইন দেবে। মনে রাখতে হবে, জামায়াতের সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক উপস্থিতি হলেও ভোটের মাঠে জনসমর্থন তেমন নেই। যার কারণে জোট গঠন করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। পিআর পদ্ধতির দাবি নিয়ে আন্দোলনে প্রথমে ইসলামী জোট এবং পরে আট দলের সমন্বয়ে ফ্রন্ট করার তোড়জোড় করলেও এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ বেশির ভাগ ইসলামী দলকে ধরে রাখতে পারেনি। এখন পর্যন্ত বিগত ১৫ বছর শেখ হাসিনার সুবিধাভোগী ইসলামী আন্দোলন আর জামায়াত পিআর নিয়ে আন্দোলন করছে। এখন বিএনপিকে ভেবেচিন্তে হাঁটতে হবে। একই সঙ্গে মাজার-দরগায় কারা হামলা করছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।