
কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস ও প্রকৌশল কর্মক্ষেত্র কুক্ষিগত করার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তারা এ কর্মসূচি করেন। রাজধানীতে তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড়ে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সোয়া ১১টার দিকে তারা ঢাকার এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকলে তেজগাঁওয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর রেশ ছড়িয়ে যায় ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায়।
চার দফা দাবিতে তেজগাঁওয়ের সাড়ে তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এই শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন শিক্ষকও এসে দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
আন্দোলনরতদের দাবির মধ্যে রয়েছে- প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন থেকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ‘প্রকাশ্যে গুলি ও গলা কেটে হত্যার হুমকি’ প্রদানকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক তিন দফা দাবির পক্ষে পরিচালিত সব কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে; কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের ছয় দফা দাবির রূপরেখা ও সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ান-চ্যানেল এডুকেশন চালু করতে হবে। বুধবার বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই মোড় অবরোধ করে রাখার পর পুলিশের অনুরোধে সড়ক ছেড়ে যাওয়ার আগে তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনরত কারিগরি শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনে সারা দেশে কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মো. মাশফিক ইসলাম।
তিনি বলেন, সারা দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নিজ নিজ জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। বৃহস্পতিবার ‘কাকতাড়ুয়া দহন কর্মসূচি’ পালন করা হবে। এর মাধ্যমে অযৌক্তিক তিন দফা দাবির কবর রচনা করা হবে।
এসব দাবিতে রাজশাহী, দিনাজপুর, গাজীপুর ও বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। গাজীপুরে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে, দুপুর ১২টার দিকে জয়দেবপুর এলাকায় অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ঢাকা থেকে জয়দেবপুর ও শিমুলতলী সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাদের দাবি, কারিগরি শিক্ষা ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন।
এদিকে প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবিগুলোর যৌক্তিকতা পরীক্ষানিরীক্ষা করে সুপারিশ দিতে গঠিত কমিটির তৃতীয় সভা শেষে গতকাল তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলী অভিভাবকদের সঙ্গে বসেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপালরা এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে আমাদের একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় আমরা কয়েকটি সিদ্ধান্তে এসেছি। কমিটির সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান এতে উপস্থিত ছিলেন।