Image description

নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিলেও স্বস্তি ফেরেনি বাজারে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার চাল, আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। গত এক বছরে ওষুধসহ প্রায় সকল প্রকার ব্যবহার্য ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সংসারের খরচ মেটাতে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে অনেক আগেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রতিটি বাজার ও সড়কে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য, অধিক মুনাফা, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, অধিক বৃষ্টিতে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হওয়াসহ সরকারের সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে নিত্যপণ্যের বাজার ক্রমশই সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারের ওপর মহলের নির্দেশনাও কাজে আসছে না।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চ্যালেঞ্জিং হলেও সরকারকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতি (ক্যাব) বলছে, মুদ্রাস্ফীতির নিয়ন্ত্রণে অর্থ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব রয়েছে।

 

জানা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন সরকারের সবাই। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের যেকোনও পণ্যের বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সরকারের সব উইং এ বিষয়ে কাজ করছে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে জরুরি সভা করেছেন। খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, দেশে কোনও সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না। তিনি জানান, এ বিষয়ে অর্থ, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে।

 

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, বাজারে পণ্যের জোগান ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য নেই। বাজারে সিন্ডিকেট আছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙার কাজ চলছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর অবস্থান নেবে।

তবে এত কিছুর পরেও বাজারে স্বস্তি মিলছে না সাধারণ মানুষের।

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য কেড়ে নিচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ/বাংলা ট্রিবিউনলাগামহীন দ্রব্যমূল্য কেড়ে নিচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ/বাংলা ট্রিবিউন

নেপথ্যে যেসব কারণ

সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র বলছে, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, সিন্ডিকেট ব্যবসা, লোকবল-সংকটে বাজার মনিটরিংয়ের অভাব এবং সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের অকার্যকারিতা।

সূত্র বলছে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, যা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে অধিক মুনাফার আশায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে, লোকবল-সংকটের কারণে সরকারের পক্ষে নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাজার সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত কার্যকর বাজার মনিটরিং এবং অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে শক্তিশালী আইন প্রয়োগ করা দরকার। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং পণ্যের সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখা জরুরি।

বাজার নিয়ন্ত্রণে তারা সিন্ডিকেট ও মজুতদারির বিরুদ্ধে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কেউ কেউ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে তিনটি হাতিয়ার রয়েছে। এগুলো হলো- পণ্যের ওপর শুল্ক ও কর কমানো; খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো ও বাজার তদারকি জোরদার; এবং ডলারের মজুত বাড়ানো।

এক বছরে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দ্রব্যমূল্য

 

বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার?

শফিকুল ইসলাম
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০১
 

নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিলেও স্বস্তি ফেরেনি বাজারে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার চাল, আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। গত এক বছরে ওষুধসহ প্রায় সকল প্রকার ব্যবহার্য ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সংসারের খরচ মেটাতে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে অনেক আগেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রতিটি বাজার ও সড়কে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য, অধিক মুনাফা, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, অধিক বৃষ্টিতে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হওয়াসহ সরকারের সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে নিত্যপণ্যের বাজার ক্রমশই সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারের ওপর মহলের নির্দেশনাও কাজে আসছে না।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চ্যালেঞ্জিং হলেও সরকারকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতি (ক্যাব) বলছে, মুদ্রাস্ফীতির নিয়ন্ত্রণে অর্থ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব রয়েছে।

 

জানা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন সরকারের সবাই। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের যেকোনও পণ্যের বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সরকারের সব উইং এ বিষয়ে কাজ করছে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে জরুরি সভা করেছেন। খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, দেশে কোনও সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না। তিনি জানান, এ বিষয়ে অর্থ, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে।

 

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, বাজারে পণ্যের জোগান ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য নেই। বাজারে সিন্ডিকেট আছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙার কাজ চলছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর অবস্থান নেবে।

তবে এত কিছুর পরেও বাজারে স্বস্তি মিলছে না সাধারণ মানুষের।

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য কেড়ে নিচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ/বাংলা ট্রিবিউনলাগামহীন দ্রব্যমূল্য কেড়ে নিচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ/বাংলা ট্রিবিউন

নেপথ্যে যেসব কারণ

সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র বলছে, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, সিন্ডিকেট ব্যবসা, লোকবল-সংকটে বাজার মনিটরিংয়ের অভাব এবং সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের অকার্যকারিতা।

সূত্র বলছে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, যা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে অধিক মুনাফার আশায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে, লোকবল-সংকটের কারণে সরকারের পক্ষে নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাজার সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত কার্যকর বাজার মনিটরিং এবং অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে শক্তিশালী আইন প্রয়োগ করা দরকার। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং পণ্যের সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখা জরুরি।

বাজার নিয়ন্ত্রণে তারা সিন্ডিকেট ও মজুতদারির বিরুদ্ধে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কেউ কেউ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে তিনটি হাতিয়ার রয়েছে। এগুলো হলো- পণ্যের ওপর শুল্ক ও কর কমানো; খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো ও বাজার তদারকি জোরদার; এবং ডলারের মজুত বাড়ানো।

এক বছরে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দ্রব্যমূল্য

সরকারের বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট যেদিন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে সেদিন বাজারে মোটা চালের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। খোলা আটার কেজি ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। খোলা সয়াবিনের লিটার ছিল ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা। পাম সুপারের লিটার ছিল ১৩৪ থেকে ১৪০ টাকা। বড় দানার মসুর ডালের কেজি ছিল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। ডিমের হালি ছিল ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। চিনির কেজি ছিল ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা। আর প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। 

অপরদিকে, এক বছর পরে এসে ২০২৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে দেশের বাজারে মোটা চালের কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা। আটার কেজি ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের কেজি ১৭৬ থেকে ১৭৮ টাকা। পাম সুপার বলতে বাজারে কোনও তেল নেই; সবই সয়াবিন নামে বিক্রি হচ্ছে। বড় দানার মসুর ডাল ১২০ থেকে ১৩৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। প্রতিকেজি চিনির দাম বর্তমানে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। আলুর কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খোলা ভ্যানে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এদিকে, ২০২২ সালে জুলাইতে প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ৮৫ টাকা। বর্তমানে দেশের বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১৮ থেকে ১২০ টাকা।

শুধু খাদ্য পণ্যই নয়, বেড়েছে সাবান, সোডা, শ্যাম্পু, লোশনসহ সকল প্রকার ওষুধের দামও।

বাড়ছে উৎপাদন

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের-২০২৩-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলু উৎপাদন দ্বিগুণ, ডাল উৎপাদন চারগুণ ও সবজি উৎপাদন বেড়েছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সবজি উৎপাদন হয়েছে ২৯ লাখ ৯ হাজার টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ ৪১ হাজার টন। ২০২৪ সালে তা বেড়েই দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭৬ লাখ টনে। ২০২৫ সালে তা আরও বাড়বে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

২০২৩ সালে বোরোতেও বাম্পার ফলন হয়েছে। ওই বছর ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ কোটি ১৫ লাখ টন। ২০২৪ সালে বোরো উৎপাদন ২ কোটি ৮৫ লাখ মেট্রিকটন ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৫ সালে বোরো উৎপাদন ৩ কোটি অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ১৩ লাখ ১৭ হাজার টন। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৪ কোটি ১ লাখ ৭৬ হাজার টন চাল। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৪ কোটি ৪ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছর উৎপাদন ৪ কোটি ৬৬ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে।

২০০৮-০৯ সালে ভুট্টার উৎপাদন ছিল ৭ লাখ ৩০ হাজার টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৪ লাখ ২২ হাজার টন।

তথ্য বলছে, বর্তমানে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কারণে ধানসহ সব ধরনের ফসল উৎপাদন বেড়েই চলছে।

দেশে বছরে পরিশোধিত চিনির চাহিদা ১৮ লাখ টন। রোজার এক মাসের চাহিদা ৩ লাখ টন। সব মিলিয়ে বছরে ১৯ লাখ টন চিনি আমদানি করতে হয়। বছরে মসুর ডালের চাহিদা ৫ লাখ টন। রোজার সময় চাহিদা থাকে ৭০ হাজার টন। গত বছর জুন-ডিসেম্বর মাসে ৩ লাখ টন আমদানি করা হয়েছে।

নানা উদ্যোগ সরকারের

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকেও উদ্যোগের কোনও কমতি নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সাধারণ মানুষের কথা ভেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, মজুত ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ট্যারিফ কমিশন এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কাজ করছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজার দরের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কিছু সংখ্যক আমদানি পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক ডিউটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুল্ক ছাড় দিয়ে চাল আমদানির পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি ও পেঁয়াজের সঙ্গে টিসিবির মাধ্যমে ৭০ লাখ ফ্যামিলি কার্ডে ৩০ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি চাল বিক্রি করছে। সারা দেশের ২ হাজার ৩৬৩টির বেশি ওএমএস ডিলারদের মাধ্যমেও প্রতি মাসে এই চাল দেওয়া হচ্ছে।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পণ্যের সংকট যাতে দেখা না দেয়। সেজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। ব্যবসায়ীদের রেজিস্টারভুক্ত থাকতে হবে। সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে ও রসিদ রাখতে হবে। বাজারে যেকোনও কিছুর বিনিময়ে সরকারের মনিটরিং বাড়াতে হবে।’

ক্যাবের সদ্য দায়িত্ব নেওয়া প্রেসিডেন্ট এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ক্যাবের দায়িত্ব নিলাম মাত্র ১০ দিনও হয়নি। এরই মধ্যে আমরা সারা বছরের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে কাজ করছি। ক্যাব সরকারের পাশে থেকে সেভাবেই বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।’

তবে ক্যাব মনে করে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় খাদ্যপণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব খুচরা ব্যবসায়ী ছয় বা তিন মাসের ব্যবধানে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করবেন না তাদের কর সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের সুবিধা দিতে হবে। এ ব্যাপারে একটি অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে ক্রয় করা পণ্যের মেমো সরবরাহ করার সুযোগ থাকবে। ফলে এই পোর্টালের মাধ্যমে কোন কোন ব্যবসায়ী কখন কী মূল্যে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করছেন, তার একটি রিপোর্ট থাকবে। এক্ষেত্রে নগদবিহীন কেনাবেচা উৎসাহিত এবং জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ- যেমন অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রাজস্ব বোর্ড ও ব্যবসায়িক সংগঠন মিলে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে, সেটি বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।

সংরক্ষণের অভাবে বছরে ৩০ শতাংশ খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়ে যায়। এতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর চাপ পড়ে। যা দ্রব্যমূল্য বাড়াতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাপ কমাতে পচনশীল খাদ্যপণ্য- যেমন আলু, মরিচ, বেগুন, পটলসহ বিভিন্ন সবজি যথাযথ সংরক্ষণের জন্য উপজেলাভিত্তিক হিমাগার স্থাপন করা যেতে পারে। যথাযথভাবে এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে বলে ক্যাব মনে করে।