
সরেজমিন দেখা যায়, আনিসুল হক সড়কের রেলগেট এলাকার শুরুতেই বসেছে লেগুনাস্ট্যান্ড। রাস্তার অধিকাংশ জায়গা দখল করে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে লেগুনা। প্রায় আড়াআড়িভাবে লেগুনা দাঁড় করিয়ে তোলা হচ্ছে যাত্রী
ঢাকার অন্যতম ব্যস্ততম শিল্প এলাকা তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তার মোড় থেকে লেভেলক্রসিং পর্যন্ত সড়ক ফের দখলের কবলে পড়েছে। রাস্তার দুই পাশজুড়ে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ সারি সারি পার্কিং করে রাখায় এ সড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়ছে। যতদূর চোখ যায় সারি সারি লেগুনা, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান দাঁড়িয়ে। এ সড়কে ছোট গাড়ি কিংবা রিকশা চলতেও অনেক সময় পড়তে হয় বাধার মুখে। যানজট নিত্যসঙ্গী। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের নামে নামকরণ করা এই সড়কটি অবৈধ দখলদারদের থেকে উদ্ধার করেছিলেন তিনিই। ফের দখলের কবলে সড়কটিতে চলাচল করাই দায়। ফলে পথচারীদের চলাচল বিঘ্ন, যানজটে ভোগান্তি নিত্যসঙ্গী।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, আনিসুল হক সড়কের রেলগেট এলাকার শুরুতেই বসেছে লেগুনাস্ট্যান্ড। রাস্তার অধিকাংশ জায়গা দখল করে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে লেগুনা। প্রায় আড়াআড়িভাবে লেগুনা দাঁড় করিয়ে তোলা হচ্ছে যাত্রী। আর ফার্মগেট-কারওয়ান বাজার থেকে আসা যানবাহনগুলো যানজটে আটকা পড়ে রেললাইনের ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে। ফলে সেখানে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি। দখলের শুরুটা এখানে হলেও এর বিস্তৃতি সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত। পুরো সড়কের দুই পাশে লাইন করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সারি সারি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ। চার লেন সড়কের প্রশস্ততা নেমে এসেছে দুই লেনে। মাঝেমধ্যে ট্রাক পার্কিং বা ঘুরানোর সময় পুরো সড়কই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ট্রাক-কাভার্ডভ্যানগুলো আড়াআড়িভাবে রাখায় গাড়ির পেছনের অংশ উঠে পড়ছে ফুটপাতের ওপর। ফলে ফুটপাত দিয়ে পথচারীরাও হাঁটাচলার সুযোগ পাচ্ছেন না।
মেয়র আনিসুল হক সড়ক সাতরাস্তা হয়ে কারওয়ান বাজার, তেজতুরী বাজার, ফার্মগেট ও তেজগাঁও, মহাখালী, বনানী, গুলশান, নিকেতন, হাতিরঝিল এবং রামপুরার সঙ্গে যুক্ত। ফার্মগেট-তেজগাঁও ঘিরে এক ডজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া এই সড়ক হয়ে জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট, সংবাদপত্র ভবন, ছাপাখানা, প্রধান কার্যালয়সহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং সাধারণ মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করেন।
তবে ট্রাক শ্রমিক-মালিকরা বলছেন, তেজগাঁওয়ে ট্রাক পার্ক করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একটি তিনতলা পার্কিং নির্মাণের কথা। কিন্তু ডিএনসিসি তা না করায় নিরুপায় হয়ে সড়কেই তারা ট্রাক রাখছেন। বিকল্প ব্যবস্থা করলে সড়কে তারা আর ট্রাক রাখবেন না বলে জানানো হয়। মহিদুল ইসলাম নামের এক ট্রাকচালক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখানে সবাই ট্রাক রাখে, তাই আমরাও রাখি। নির্দিষ্ট ট্রাকস্ট্যান্ড থাকলে আমরা সেখানে রাখতাম, নিরুপায় হয়ে এখানেই রাখি।’
সূত্র জানায়, তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় থেকে লেভেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কটি আগে ট্রাকস্ট্যান্ড ছিল। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সড়কটি দখলমুক্ত করতে গিয়ে চালক ও শ্রমিকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন ডিএনসিসির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তবে উদ্ধারের পর সংস্কার করে সড়কটির চেহারা বদলে দেন তিনি। প্রায় ১০০ ফুট চওড়া এই সড়ক কারওয়ান বাজার, তেজতুরী বাজার ও ফার্মগেট এলাকাকে তেজগাঁও, মহাখালী, বনানী, গুলশান, নিকেতন, হাতিরঝিল এবং রামপুরার সঙ্গে যুক্ত করেছে। ফার্মগেট ও তেজগাঁও এলাকার অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট ও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রধান কার্যালয়সহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং সাধারণ মানুষ এই সড়ক ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছেন।
তেজগাঁও বেগুনবাড়ী থেকে রিকশায় করে ফার্মগেটে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন সানাউল্লাহ মিয়া। লেভেলক্রসিং এলাকায় যানজটে আটকে থাকা অবস্থায় তিনি বলেন, ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে এই সড়কটি পার্কিংমুক্ত ঘোষণা করেছিলেন আনিসুল হক। দীর্ঘদিন সড়কটি সুন্দরই ছিল। স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারতেন নাগরিকরা। কিন্তু এখন আবার দখল হয়ে গেছে সড়কটি।