
মামলা নয়, ১১ বিধানের অভিযোগে আগে যেতে হবে লিগ্যাল এইডে। সেখানে অবসরপ্রাপ্ত একজন জেলা জজ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি বিরোধপূর্ণ বিষয়টি মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবেন। তবে; এই সমাধানে সন্তুষ্ট না হলে বিচারপ্রার্থী যেতে পারবেন আদালতে। দেশের আদালতের মামলা জট কমাতে আইন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেটে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। কার্যক্রম সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ প্রণয়নের মাধ্যমে সরকার দেওয়ানি ও আপসযোগ্য ফৌজদারি বিরোধ এতে মীমাংসা করা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে- পারিবারিক বিরোধ, পিতা-মাতার ভরণপোষণের দাবি, বাড়িভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ, অগ্রক্রয়ের দাবি, বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত বণ্টন সংক্রান্ত বিরোধ। এছাড়া যৌতুক সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বাধ্যতামূলক বিধান সংযোজন করেছে। এর মধ্যে দেশের বিচারিক ব্যবস্থা এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করলো বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
শুধু সিলেটে নয় আজ থেকে মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ এবং ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও রাঙ্গামাটি জেলায় বৃহস্পতিবার একযোগে এ কার্যক্রম শুরু হবে। সিলেটে কার্যক্রম উদ্বোধনকালে আইন উপদেষ্টা ছাড়াও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক (সিনিয়র জেলা জজ) শেখ আশফাকুর রহমানসহ সিলেটের বিচারাঙ্গনের সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্টরা জানান- মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার পরই পক্ষরা আদালতে মামলা করতে সক্ষম হবেন। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যয়িত সময় তামাদি মেয়াদ গণনার ক্ষেত্রে বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিরোধীয় পক্ষদের কর্তৃক স্বাক্ষরকৃত এবং চিফ লিগ্যাল এইড অফিসার কর্তৃক প্রত্যায়িত প্রতিটি মধ্যস্থতা চুক্তি চূড়ান্ত, বলবৎযোগ্য এবং পক্ষদের ওপর বাধ্যবাধকতার ও আদালতের ডিক্রি অথবা ক্ষেত্রমতো চূড়ান্ত আদেশে হিসেবে গণ্য করার বিধান রাখা হয়েছে। এদিকে সিলেটের অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, এটা এমন একটা বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা যেখানে অনেক কম টাকা লাগে, অনেক কম সময় লাগে এবং ভোগান্তি কম হয়। এতে মানুষ সন্তুষ্ট থাকবে। এই প্রক্রিয়ায় আমরা এতোদিন নজর দেইনি।
আমরা শ’ শ’ কোটি টাকা আদালতের উন্নয়নে ব্যয় করে। অথচ অনেক কম টাকা দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করা যায় লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে। সেই চিন্তা থেকে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। এ নিয়ে দিনের পর দিন কনসালটেনন্সি করেছি। তিনি বলেন- লিগ্যাল এইড আগে কখনো বাধ্যতামূলক ছিল না। এবার আমরা মামলা জট কমাতে বাধ্যতামূলক করেছি। মামলার জট কমাতে আপনাকে আগে লিগ্যাল এইডে যেতে হবে। যেখানে যাওয়ার পর যদি আপনি অসন্তুষ্ট থাকেন তাহলে আদালতে যেতে পারবেন। তবে প্রথমে লিগ্যাল এইডে যেতে হবে। কোনো ধরনের মামলায় প্রথমে লিগ্যাল এইডে যেতে হবে সে ধরনের ১১ বিধান আমরা সুনির্দ্দিষ্ট করে দিয়েছি। আগে লিগ্যাল এইড করেছেন একজন বিচারক। এখন থেকে একাধিক বিচারিক কর্মকর্তারা নিয়োজিত থাকবেন। আসিফ নজরুল বলেন- আমরা এটা ঠিকমতো করতে পারলে মামলার জট কমে যাবে।
দরিদ্র ও অসহায় মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি অপূর্ব সুযোগ। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বিচার বিভাগে অনেক কাজ করা হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন- আমরা সিভিল আদালত ও ক্রিমিনাল আদালতকে পৃথক করেছি। যাতে মামলার নিষ্পত্তি দ্রতগামী হয়। কোনোদিন এটা বাংলাদেশে আগে করা হয়নি। বিচারিক পথ সৃজনের কাজ চিফ জাস্টিজের কাছে দেয়া হয়েছে। আগে সেটা মন্ত্রী ও এমপিদের হাতে ছিল। এমন একটি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে যেখানে সমালোচনা হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে এমেমমেন্ট করেছি সমালোচনা হয়নি। বর্তমান সরকার অনেক অনেক কাজ করেছে। তিনি বলেন- অন্তর্বর্তী সরকার যে পরিবর্তনগুলো করে দিয়েছে এই পরিবর্তন যদি পরবর্তীকালে রাজনৈতিক সরকার চালু রাখে অবশ্যই বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। ন্যায়বিচারপ্রার্থী মানুষের বিচার প্রাপ্তি সহজ হবে।