Image description
 

এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বরে শেষ হচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের সকল সক্ষমতা অর্জন করেছে। যদিও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য ছয় বছর সময় চাচ্ছে। তাদের সে দাবি কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সন্ধিহান।এদিকে এলডিসি উত্তরণের হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়ে জাতিসংঘ ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)-কে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে জানাতে হবে। 
জাতিসংঘ সিডিপির চেয়ার হোসে অ্যান্টোনিও ওকাম্পো হালনাগাদ তথ্য চেয়ে গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারকে এই চিঠি দেন। বাংলাদেশ চিঠির জবাব দেওয়ার পর আগামী ডিসেম্বরে একটি বৈঠক হবে। ভার্চুয়াল সে বৈঠকে বাংলাদেশকেও থাকতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
জাতিসংঘের চিঠি পাওয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই চিঠি সিডিপির কাছে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ বছরের ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এলডিসি উত্তরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বুধবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এলডিসি থেকে পেছানোর কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নেইনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ এলডিসির সময় বাড়ানো হবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, জাতিসংঘ তাদের নিজস্ব নিয়মে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে  উত্তরণ করতে চাইলে সরকারের পক্ষ থেকে পেছানোর আবেদন করা হবে না।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর নভেম্বর মাসে এমন প্রতিবেদন নিয়ে পর্যালোচনা করা  তাদের রুটিন কাজ। যার মাধ্যমে এলডিসি উত্তরণের অপেক্ষায় থাকা দেশগুলোর পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। তবে এলডিসির নিয়মে নেপাল ও লাওসের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো বলেও তিনি জানান।
সিডিপির অন্যতম সদস্য অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য‘ সিডিপির অ্যানহ্যান্সড মনিটরিং মেকানিজম (ইএমএম) কার্যক্রমের আওতায় দেশগুলোর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তিনি গত ২৫ আগস্ট সিডিপির চেয়ার বাংলাদেশসহ এলডিসি উত্তরণের অপেক্ষায় থাকা দেশগুলোকে চিঠি দিয়েছেন। এতে তাদের নিজ নিজ মসৃণ উত্তরণ কৌশল (এসটিএস) বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ নিয়ে সিডিপির সঙ্গে একটি পরামর্শ বৈঠক হতে পারে, যেখানে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা  কথাও জানান তিনি। 
কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপির) পরিসংখ্যান জানান, এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের যেসকল ধাপ নির্ধারিত ছিলে সেগুলো ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে। তবু বাংলাদেশের  একটা অংশ দাবি করছে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এলডিসি থেকে উত্তরণের অবস্থায় নেই। তাদের দাবি এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর কিছুটা চাপ পড়তে পারে সেটি অস্বিকার করার উপায় নেই। ওষুধ শিল্পে ট্যাক্সের পরিমাণ বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ বিভিন্ন সহায়তার হার থেকে বঞ্চিত হবে। এসকল পরিস্থিতির কারণে একটা অংশ আবারও পেছানোর দাবি রাখছে। তবে জাতিসংঘের শর্ত পূরণ হওয়ায় বাংলাদেশের সে দাবি জাতিসংঘ কতটুকু বাস্তবায়ন করবে সে বিষয়ে সন্দিহান রয়েছে বিশেষজ্ঞরা।

 

তাদের মতে, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। যে যে বিষয়ে এখন গ্যাপ পরিলক্ষিত হয় সেগুলো ওভারকাম করার সর্ব্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাদের ভাষ্যমতে, এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা যেমন রয়েছে তেমনি কিছুটা সমস্যাও রয়েছে। অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটবে। এতে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের কাছে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন,  এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশ বর্তমানে যেসব সুবিধা পাচ্ছে সব সুবিধা একসঙ্গে উঠে যাবে না। ইনহ্যান্স ইন্ট্রিগ্রেটেড ফ্রেমওয়ার্ক ও ইউএন ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড চুক্তির আওতায় ২০২৬ সালের পরও পাঁচ বছর বাণিজ্য সুবিধা থাকবে। ইউএন টেকনোলজি ব্যাংকের আওতায় আইসিটি ও জ্ঞান বিনিময়ের সুবিধা থাকবে আরও পাঁচ বছর। জলবায়ু প্রকল্পে লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিস ফান্ড সুবিধা বহাল থাকবে। ভ্রমণ সহায়তা ফান্ড থাকবে তিন বছর।
এছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে, কারণ উত্তরণ মানেই উন্নত অর্থনৈতিক পরিবেশের ইঙ্গিত। জিএসপি সুবিধার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ২০২৯ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। আন্তর্জাতিক সুনামের কারণে নতুন নতুন উন্নয়ন সহযোগী (যেমন এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক) সহযোগিতার হাত বাড়াবে। দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প, তৈরি পোশাক খাত, কৃষি ও মৎস্য খাত প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার দক্ষতা অর্জন করবে।
ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি (অস্ট্রেলিয়া) ইমেরিটাস প্রফেসর আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথে বাংলাদেশ নেপাল ও লাওস থেকে ভালো অবস্থানে আছে। ব্যবসায়ীদের নিজ উদ্যোগে প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে সময় বাড়াতে উচ্চ মানের লবিং করতে হবে। এটি ছাড়া এত অল্পসময়ের উদ্যোগে কোনোভাবেই সময় বাড়ানো সম্ভব হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার অর্থনীতিকে ভালো  পর্যায়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৮টি দেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হয়েছে। তাদের রপ্তানি বাজার অতটা বড় না হওয়ায় এটি সহজ হয়েছে।’
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তীতে কী কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে। আমাদের সঙ্গে বসেই ঠিক করতে হবে কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধান করলে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথ সহজ হবে বলে মনে করছি।’
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের বিকল্প নেই। তবে কখন গ্র্যাজুয়েশন হতে হবে সেটা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকার ও প্রাইভেট সেক্টরকে বসেই সময় ঠিক করে পরবর্তীধাপে এগুতে হবে।’
মাশরুর রিয়াজ আরও বলেন, ‘আমাদের জ্বালানি সংকট দূর করার প্রয়োজন। সরকার উদ্যোগ নিলেও এটির তেমন অগ্রগতি নেই। কাস্টমসে সমস্যা আছে। এগুলো সমাধান করার মাধ্যমে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিতে হবে।’
এদিকে বিশ্লেষকদের মতে, এলডিসি থেকে উত্তরণ করলে বাংলাদেশের  সীমাবদ্ধতা হয়তো কিছুটা থাকবে তবে লাভের পরিমাণ বেশি হবে। এলডিসি উত্তরণ আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো ও সক্ষমতা বাড়ানোর সোপান।’ দেশের মানুষের কর্মস্পৃহা বাড়বে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সক্ষমতা তৈরি হবে।দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল হবে।সর্বপুরি করুণার অবস্থান থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দিকে ধাবিত হবে দেশ। এলডিসি থেকে বের হলে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, রপ্তানি, ওষুধ শিল্পসহ এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা ধীরে ধীরে কমে যাবে।  নগদ সহায়তা ও ভর্তুকি নিয়ে আপত্তিসহ জাতিসংঘে চাঁদার পরিমাণ বাড়বে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন অর্জন শুধু সরকারের নয় বরং এটি দেশের বেসরকারি খাত ও জনগণের সম্মিলিত জাতীয় অর্জন।
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে হলে একটি ভালো নির্বাচন দরকার। কারণ বিনিয়োগকারীরা একটি স্থিতিশীল সরকারের নিশ্চয়তা চায়। আর সরকার ঘোষিত কাক্সিক্ষত সময়ে একটি ভালো নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।’
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ বিশ্বকে উন্নত ও উন্নয়নশীল এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছে। আবার উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে তুলনামূলক দুর্বল দেশগুলোকে রাখা হয় এলডিসি তালিকায়। ১৯৭১ সালে প্রথমবার এই তালিকা করা হয়। বর্তমানে বিশ্বে ৪৪টি দেশ এলডিসিভুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, নেপাল, লাওস, ইয়েমেন, সুদানসহ অনেক দেশ।
রপ্তানি খাত সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। ২০২৬ সালের পর এগুলো ধীরে ধীরে কমে যাবে। তবে ইইউ-তে জিএসপি সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে।
যেসব সুবিধা অব্যাহত থাকবে ॥ সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যেকোনো শিক্ষিত মানুষ এলডিসি উত্তরণ চাইবে। বিভ্রান্তি ছড়ানো ক্ষতিকর। আমরা আবেদন করে নয়, আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ হয়েছি। সময় পিছিয়ে দিলে আন্তর্জাতিক পরিম-লে ধারণা হবে, বাংলাদেশ আফগানিস্তানের মতো অযোগ্য দেশ।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত নই। বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে উত্তরণ পেছানো দরকার। আগের সরকারের সময় সূচকগুলো ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের (আইআর) ইমিরেটাস অধ্যাপক ডক্টর ইমতিয়াজ আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেন,  এলডিসি থেকে উত্তরণের যথেষ্ট যোগ্যতা বাংলাদেশের রয়েছে।  তবে বাংলাদেশ থেকে যেসকল টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে সেগুলো না হলে বাংলাদেশ আরও শক্ত অবস্থানে চলে  যেত।
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য পর্যাপ্ত রেমিট্যান্স, জিডিপির স্থায়ীত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকার সে বিষয়ে ভালো জানবে। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ যোগ্য, যা এই অবস্থায় কতটুকু সফল হবে সময়েই বলে দেবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এলডিসি থেকে উত্তরণ বাংলাদেশের জন্য একদিকে মর্যাদার স্বীকৃতি, অন্যদিকে নতুন চ্যালেঞ্জের সূচনা। তবে  স্বল্পোন্নত দেশের বিশেষ সুবিধা ধরে রাখা, নাকি মর্যাদার সঙ্গে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।
অন্যদিকে, এলডিসির সময়সীমা বাড়ানোর দাবিতে ‘প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে পোশাক খাতে বড় কারখানাগুলোর তেমন অসুবিধা না হলেও ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওষুধ শিল্পে প্যাটেন্ট সুবিধা থাকবে না বিধায় কিছু কিছু ওষুধের দাম বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। যদিও  বিগত সরকারের তথ্য বিভ্রাটে ব্যাংকসমূহে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা দেখানো হলেও প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৫ লাখ কোটি টাকা। তাই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সিঙ্গেল উইন্ডো, পোর্টে কম সময় ও লিড টাইম কমিয়ে আনার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
পেছাতে কী করতে হবে ॥  যেকোনো দেশের এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দুটি প্রচলিত পথ আছে। প্রথমত, বাংলাদেশের সরকার প্রধান জাতিসংঘের সিডিপিকে চিঠি দিতে পারেন। চিঠিতে বলতে হবে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিত এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে; যা সামাল দিতে ২০২৬ সালের পরও সময় প্রয়োজন। এ ধরনের চিঠি পাওয়ার পর সিডিপি একটি উপকমিটি গঠন করবে, যারা প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে এবং পরবর্তী সময়ে পুরো সিডিপির কাছে সুপারিশ করবে।
সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এভাবেই ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাড়তি তিন বছর সময় পেয়েছে; যা ২০২৩ সালের আগস্টে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অনুমোদন করে। অস্ট্রেলিয়ার মতো কৌশলগত স্বার্থসম্পন্ন দেশের সমর্থন থাকায় সলোমন দ্বীপপুঞ্জের এলডিসি উত্তরণ ২০২৭ সালে নির্ধারণ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় পথটি হলো, বাংলাদেশের সরকারপ্রধান এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার জন্য সরাসরি জাতিসংঘের মহাসচিবকে লিখতে পারেন। এরপর বিষয়টি বিবেচনার জন্য সাধারণ পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। যেমন তেলের দামের ধসের কারণে সব সূচক নেমে যাওয়ায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অ্যাঙ্গোলার এলডিসি উত্তরণ অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যায়। সাধারণ পরিষদে বিষয়টি সামাল দিতে প্রভাবশালী দেশের সমর্থন প্রয়োজন হয়। যেমন অ্যাঙ্গোলার ক্ষেত্রে পর্তুগাল বড় ভূমিকা রেখেছিল।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ এলডিসি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এলডিসি উত্তরণের তিনটি মানদ- আছে। এগুলো হলো মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা।
বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালের ত্রিবার্ষিক মানদ-ের তিনটিতেই উত্তীর্ণ হয়। ২০২১ সালেই বাংলাদেশ চূড়ান্ত সুপারিশ পায় যে ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ হতে পারে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে প্রস্তুতির জন্য আরও দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ যদি এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হয়, তাহলে বাংলাদেশই হবে প্রথম দেশ, যারা তিনটি সূচকেই উত্তীর্ণ হয়ে বের হবে।