
আমি কাজ করছি, যার ফল ইতিহাসে থেকে যাবে বলে মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তা যদি পরবর্তী সরকার অব্যাহত রাখে তবে সাধারণ মানুষ সঠিক ন্যায়বিচার পাবে।
তিনি বলেন, অনেক কাজ করা হয়েছে যার সুফল ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে মিলবে।
গতকাল বুধবার বিকালে সিলেটের গ্র্যান্ড সিলেট হোটেলে আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ এর আওতায় মামলাপূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিচারক, আইনজীবী, স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে পারিবারিক বিরোধ, পিতামাতার ভরণপোষণ, বাড়িভাড়া, অগ্রক্রয়, বণ্টন ও যৌতুকসহ বিভিন্ন বিষয় মামলাপূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার আওতায় আনা হয়েছে। এই বিধান অনুযায়ী, আদালতে মামলা করার আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে মধ্যস্থতায় বসতে হবে এবং সমঝোতা না হলে পরে আদালতে মামলা দায়েরের সুযোগ থাকবে।
আসিফ নজরুল বলেন, এ ব্যবস্থায় অনেক বিরোধ মামলা ছাড়াই কম সময় ও খরচে সমাধান হবে। দেশের বিচারব্যবস্থায় মামলার জট অনেকটা কমবে। সাধারণ মানুষ হয়রানি না হয়ে দ্রুত সমাধান পাবে। তিনি বলেন, আমরা প্রায়ই শুনি—‘আপনি কী করেছেন? শহীদের রক্তের উপর আপনি এখানে বসেছেন, আমরা আপনাকে বসিয়েছি। আমি তো ফুটবল খেলোয়াড় বা মঞ্চের অভিনেতা নই যে কাজটি চোখে দেখা যাবে। আমি কাজ করছি, যার ফল ইতিহাসে থেকে যাবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইনগত সহায়তা সম্প্রসারণ ও আরও গতিশীল করতে ইতিমধ্যে আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশের আওতায় নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে আদালতের পরিবর্তে বাধ্যতামূলকভাবে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হবে, এতে একদিকে মামলার জট কমবে এবং অন্যদিকে সময় ও খরচও বাঁচবে। প্রথম ধাপে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের ১২ জেলায় এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে এবং ধীরে ধীরে সারা দেশে বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সিলেটে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যক্রমটি শুরু হলো।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মামলাপূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা চালু হলে দেশে চলমান মামলার জট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে এবং পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধের দ্রুত সমাধান সম্ভব হবে। এছাড়া সাধারণ মানুষ এ ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ, সময় ও মানসিক চাপ বাঁচিয়ে সহজে সমাধান পাবে। এই নতুন পদক্ষেপ আইন, বিচার ও প্রশাসনে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হিসেবে ধরা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।
অনুষ্ঠানে আইনগত সহায়তা প্রদান আইনের সাম্প্রতিক সংস্কার বিষয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও সিনিয়র জেলা জজ শেখ আশফাকুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা বাস্তবায়নে জেলা বিচার বিভাগের ভূমিকা তুলে ধরেন সিলেটের জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী। তারা বলেন, এ ধরনের যুগোপযোগী সংস্কার বিচার ব্যবস্থাকে অধিক গতিশীল ও জনবান্ধব করবে এবং জেলা লিগ্যাল এইড জনগণের আস্থার প্রতীক হবে।
অনুষ্ঠানে বন্ধু রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জিআইজেড বাংলাদেশের বর্তমান কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্টিনা বুরকার্ড। অনুষ্ঠানে মঞ্চনাটক ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বাধ্যতামূলক বিধানের প্রয়োজনীয়তা ও সুফল তুলে ধরা হয়।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আইনগত সহায়তা সম্প্রসারণ ও গতিশীল করার লক্ষ্যে গত ১ জুলাই আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করা হয়েছে। এ অধ্যাদেশের তফসিলভুক্ত বিষয়গুলো যেমন পারিবারিক বিরোধ, পিতামাতার ভরণপোষণ, বাড়ি ভাড়া, বণ্টন, যৌতুক ইত্যাদি ক্ষেত্রে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জসহ মোট ১২ জেলায় ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে এই বিধান কার্যকর হবে এবং ধীরে ধীরে তা সারা দেশে বিস্তৃত হবে।