Image description

জুলাই-আগস্টে হত্যার বিচার করতে না পারলে আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদষ্টো আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, এই বিচারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার, মার্চ মাস থেকে শুনানি শুরু হবে ট্রাইবু্যনালে। যত দ্রুত সম্ভব বিচার করব।

 তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ সুবিচার নিশ্চিত করা। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের চাইতে এ সরকারের বিচার যে ভিন্ন, আমরা তা প্রমাণ করতে চাই।

বুধবার সকালে বাংলা অ্যাকাডেমিতে ‘দ্য জুলাই রেভু্যলেশন : এভিডেন্স অব এট্রোসিটি' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই একদিনেই ১৪৮ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ জনকে মাথায় বা গলায় গুলি করা হয়। অধিকাংশেরই বয়স ৪০ বছরের মধ্যে। হতাহতের মাত্রা এত বেশি ছিল যে, ঢাকায় একটি হাসপাতালে আক্ষরিক অর্থে গজ এবং ব্যান্ডেজ ফুরিয়ে যায়। ঢাকা একটি যুদ্ধক্ষেত্রের মতো হয়ে ওঠে। ‘ব্লাডশেড ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (আইটিজেপি) এবং টেক গে্লাবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই)। তারা হাসিনা

সরকারের পতনের কয়েকদিন পর থেকে প্রমাণ সংগ্রহে মাঠে নামে এবং পরিবারগুলো ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাত্কার নেয়।

প্রতিবেদনের পাশাপাশি আইটিজেপি, টেক গে্লাবাল ইনস্টিটিউট এবং আউটসাইডার মুভি কোম্পানি দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করে। এতে সামাজিক মাধ্যমে প্রাপ্ত পুলিশি অত্যাচারের ভিডিও প্রমাণগুলো একত্রিত করে কী ঘটেছিল তা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। একটিতে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ বিপুলসংখ্যক তরুণ আন্দোলনকারীদের ঠান্ডা মাথায় হত্যা করছে। অন্যটিতে মোহাম্মাদ হূদয় নামে এক তরুণকে ৫ আগস্ট গাজীপুরে পুলিশ ধরে এনে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে হত্যা করে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, শহিদ হূদয়ের বোন জেসমিন ও শহিদ মুনতাসীর রহমান আলিফের বাবা গাজীউর রহমান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, আইটিজেপির নির্বাহী পরিচালক ইয়াসমিন সুকা, টেক গে্লাবাল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশিদ দিয়া। 

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, যারা নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেছে, তাদের শনাক্ত করার পাশাপাশি এটা বের করা জরুরি যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন এমন নিষ্ঠুর হয়ে উঠল? কেন রাষ্ট্র এ পর্যায়ে গিয়েছিল, কার নির্দেশে তারা এ কাজ করেছিল? এগুলো নিয়েও কাজ করছি। এভাবে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা সর্বত্র হয়েছে, একই মাত্রায় একই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীকে হত্যার গায়েবি নির্দেশ কোথা থেকে এসেছে সেটা যদি বের করা যায় তাহলে বোঝা যাবে সুপিরিয়র কমান্ড কতটুকু সম্পৃক্ত হয়েছিল। তাজুল ইসলাম বলেন, কারা পেছন থেকে এ কাজটা করেছিল, কার নির্দেশে এটা হয়েছিল। কীভাবে হুকুম করা হয়েছিল এই সূক্ষ্ম কাজ উদঘাটন না করা হলে পুরোপুরি জাস্টিস নিশ্চিত করতে পারব না। শহিদ পরিবারগুলো দ্রুত বিচার চাওয়ার প্রক্রিয়াকে আমরা শ্রদ্ধা করি। তবে বিচার প্রক্রিয়া যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত হওয়ার জন্য ধৈর্য ধরার অনুরোধ করব। সেটা যেন অপ্রয়োজনীয়ভাবে অনেক সময় না হয় সেজন্য আমরা সক্রিয় এবং সচেতন আছি।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, হেলিকপ্টার দিয়ে অপারেশন চালানো হয়েছে। অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে কিনা তা প্রমাণের আগেই তদানীন্তন নির্বাহী প্রধান বলেছিলেন হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছিটিয়েছি। তার মানে নির্দেশনা তার থেকে এসেছিল।

এদিকে ৬০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবল মানসিক আঘাতের মধ্যেও শোকাহত পরিবারগুলোকে ক্ষমতাসীনদের বৈরিতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। প্রিয়জনের মৃতদেহ দাফনের জন্য মৃত্যুসনদ ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সংগ্রহ করতেও নানা ঝুঁকি-ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। ভয় ও আতঙ্কে আচ্ছন্ন ছিল দাফনের আয়োজন, যেখানে কিছু পরিবার বাধা এড়াতে ভোরের আলো ফোটার আগেই গোপনে দাফন সম্পন্ন করেছে, যেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় কর্মীদের কোনো বাধার মুখে পড়তে না হয়।

অনুষ্ঠানে হূদয়ের বোন জেসমিন বলেন, আমার ভাই ৫ আগস্ট মিছিলে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে গোলাগুলি থেকে জীবন বাঁচাতে একটি জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিল। ভিডিওতে দেখছেন কীভাবে ধরে নিয়ে আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে। লাশ নিয়ে গেছে। লাশ কোথায় গুম করল, লাশটা কই গুম করল। আমি অত কথা বলতে পারি না, আমি শিক্ষিত নই। বড় বড় আইনজীবী এখানে আছে আমার ভাইরে যারা নির্মমভাবে হত্যা করছে, আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।

শহিদ মুনতাসীরের বাবা গাজীউর রহমান বলেন, আজ পর্যন্ত যত মামলা হয়েছে যাত্রাবাড়ী ছাড়া আর কোথাও কেউ গ্রেফতার হয়েছে দেখিনি। তাহলে কী হইতেছে, আজ পাঁচ-ছয় মাস হয়ে গেল কোনো পুলিশ হেলমেট বাহিনী অন্তত আমার মামলায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।