
গত কয়েক দিন ধরে দেশে ও উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতে অতিভারী বৃষ্টিতে বন্যাপ্রবণ নদনদীর পানি বাড়ছে। এতে করে প্লাবিত হতে পারে ৯ অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল। গতকাল এমন পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
পাউবো জানিয়েছে, সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগে এবং উজানে ভারতের ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম প্রদেশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা দেশের রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, বিহার ও ত্রিপুরা প্রদেশে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানির সমতল আগামী তিন দিন বাড়তে পারে। এ সময় তিস্তা ও দুধকুমার নদীসমূহ বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হতে পারে। এ ছাড়া সুরমা, কুশিয়ারা ও সারিগোয়াইন নদীসমূহের পানির সমতল আগামী তিন দিন বাড়তে পারে এবং সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এ সময় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার উক্ত নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হতে পারে সাময়িকভাবে। চট্টগ্রাম বিভাগের হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, মুহুরী ও ফেনী নদীসমূহের পানির সমতল আগামী তিন দিন বাড়তে পারে। এ সময় মুহুরী, সিলোনিয়া, ফেনী ও হালদা নদীসমূহ সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে এবং ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার উক্ত নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হতে পারে সাময়িকভাবে। এ ছাড়া আবহাওয়া অফিস আভাস দিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাবে ঢাকাসহ ছয়টি বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় কিশোরগঞ্জের নিকলিতে সর্বোচ্চ ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একই সময়ে ঢাকায় ৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এক বিশেষ সতর্কবার্তায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, গতকাল সকাল ৯টা থেকে পরের ৭২ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। অতিভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে ভারী বর্ষণজনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। বর্তমানে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। এদিকে রংপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের ফলে রংপুর বিভাগের নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। তিন দিন উজানের ভারী বর্ষণের পূর্বাভাসে নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নদীর তীরবর্তী মানুষের জানমাল ও কৃষি রক্ষায় সতর্ক করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিকাল ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগে এবং এর উজান ভারতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এতে করে রংপুর বিভাগের তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। সেই সঙ্গে নদী সংলগ্ননিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপচর প্লাবিত হতে পারে। আমাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রামের তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদসহ সবকটি নদনদীর পানি দ্রুত বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি অনেক বেড়েছে। একই সঙ্গে দ্রুত বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি।