
ময়মনসিংহ নগরীর প্রাণকেন্দ্র ‘পাটগুদাম’ এলাকায় শতকোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি মাত্র ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আদালত থেকে দ্রুত নির্দেশে দলিল স্থগিত করা হয়েছে এবং তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল রোববার সকালে দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও জেলা জজ আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় অভিযান চালায়। দীর্ঘ সময় নথিপত্র ঘেঁটে তারা একের পর এক জালিয়াতির তথ্য পান।
সূত্র জানায়, ১৯৬৩ সালে রেবতী মোহন দাস নামে এক ব্যক্তি জমিটি আইনগতভাবে আদমজী জুট মিলস লিমিটেডের নামে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে মিল বন্ধ হয়ে গেলে জমিটি সরকারি সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়। কিন্তু ২০২২ সালে নিজেকে রেবতী মোহনের ছেলে পরিচয় দিয়ে রবীন্দ্র মোহন দাস জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে ২০২৪ সালের ৮ই মে আদালত সেই মামলা খারিজ করে দেন। এর আগেই রবীন্দ্র মোহন দাস মিরাশ উদ্দিন সুমন নামে এক ব্যক্তিকে আমমোক্তারনামা প্রদান করেন। এর কিছুদিন পর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে নতুন ছানি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় চলতি বছরের ৬ই জুন সরকারি ওই ৮৪ শতক জমি মাত্র ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। যেখানে জমিটির বাজারমূল্য শতকোটি টাকারও বেশি। দলিলে দাতার নাম রবীন্দ্র মোহন দাস থাকলেও, তার পক্ষে আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ পবন চন্দ্র বর্মণ স্বাক্ষর করেন। এ নিয়েই তৈরি হয় ব্যাপক বিতর্ক। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে আদালত ও দুদক। ইতিমধ্যে আদালত দলিল ও ডিক্রি সাময়িক স্থগিত করেছে।
২৪শে আগস্টের আদেশে আদালত জানায়, দলিল বাতিলের জন্য ছানি মোকদ্দমা করা হয়েছে এবং ২৭শে এপ্রিলের ডিক্রি ও দলিল কার্যক্রম স্থগিত রাখা হলো। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আজিম উদ্দিন বলেন, আমরা তদন্তে কিছু গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছি। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। ছানি মামলা হয়েছে। দুদক কর্মকর্তা রাজু মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ দেখেই আমরা তদন্ত শুরু করি। কয়েকটি দপ্তরের গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছি। দলিল ও ডিক্রি বাতিলের জন্য আদালতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্থানীয় ভূমি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি জমি কীভাবে ব্যক্তি মালিকানায় চলে গেল তা অবিশ্বাস্য। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, আদালতপাড়া ও মামলার বাদী-বিবাদীর ভূমিকা খতিয়ে দেখা জরুরি। সচেতন মহল মনে করছে, সঠিক তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া এরকম জালিয়াতি বারবার ঘটতেই থাকবে।