Image description

হঠাৎ করে বৃষ্টি আর বন্যার অজুহাতে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম। সবজি, মাছ, মুরগি কোথাও স্বস্তি নেই। দামের উত্তাপে পুড়ছে ক্রেতাদের পকেট। বাজারে ৮০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না কোনো সবজি। এক সঙ্গে প্রায় সকল পণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে ক্রেতারা। বাজারে আলু, কাঁচা পেঁপে ও কচুরমুখী ছাড়া আর কোনো সবজি ৮০ টাকার নিচে কেনা যাচ্ছে না।

বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি বছর জুলাই ও আগস্টে বৃষ্টি ও বন্যায় সবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এ সময়ে দামও বেড়ে যায়। এ ছাড়া চাঁদাবাজি, নতুন সিন্ডিকেট ও বর্ষার কারণে বেশ কিছু মহাসড়কের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় ট্রাক ভাড়া বেড়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।  

সরজমিন রাজধানীর শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, শসা ৮০ টাকায়, ঢেঁড়স ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ১৬০-১৮০ টাকা, পটোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ধুন্দুল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কাকরোল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বেগুন (গোল) ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, বেগুন (লম্বা) ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচু ৮০ টাকা, কুমড়া (জালি) প্রতি পিস ৬০ টাকা এবং লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিম, পিয়াজ ও মুরগির দামও। বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে যা এক মাস আগে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে। এদিকে দু’সপ্তাহের ব্যবধানে পিয়াজের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৩০ টাকা। ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হওয়া পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। 

ওদিকে আগের মতোই উত্তাপ রয়েছে চালের বাজার। বাজার ঘুরে দেখা যায়, মিনিকেট প্রতি কেজি ৭৮-৮৫ টাকা, ভালো মানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চালের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা, বিআর ২৮ প্রতি কেজি ৬৫-৭২ টাকা ও পাইজাম ৬২-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাজ্জাদ হোসেন। তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সেগুনবাগিচা এলাকায় ভাড়া থাকেন। তিনি  বলেন, আমাদের আয় সীমিত, টানাটানির সংসার। এরমধ্যে কোনো ক্ষেত্রে বেশি খরচ হলে অন্যদিকে টান পড়ে যায়। বাজারে প্রায় সকল সবজির দাম বেড়ে গেছে। আগে যেখানে ২ কেজি নিতাম এখন ১ কেজি কিনতে হচ্ছে। কিছু করার নেই; আমাদের বাজেট সীমিত। মূল্যবৃদ্ধি আসলেই আমাদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারেক হোসেন পরিবার নিয়ে বসবাস করেন শনির আখড়া এলাকায়। এসেছেন বাজারে। বলেন, মাছ, মুরগির দাম বেড়ে গেলে আমরা সেগুলো কেনা কমিয়ে দিয়ে সবজি কিনে থাকি। আমাদের অঢেল টাকা পয়সা নেই। এখন সবজির দামও বিলাসিতা হয়ে গিয়েছে। দু’সপ্তাহ ধরে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। সরকারের উচিত বাজার মনিটরিং করা। যাতে করে আমরা নিম্ন আয়ের লোকজনরা একটু চিন্তামুক্ত ভাবে চলতে পারি। 

আরেক ক্রেতা রবিন হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশ কিছুদিন চাঁদাবাজি, পরিবহন ও বাজারকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট ছিল না। এতে সবজির দাম কমে গিয়েছিল। এখন আবার সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি শুরু হওয়ায় দাম পুনরায় বেড়েছে। এ অবস্থায় আমরা পড়েছি বিপাকে। সরকারের উচিত সিন্ডিকেট কঠোর হাতে দমন করা।

সবজি বিক্রেতা রাকিব বলেন, প্রতি বছর জুলাই ও আগস্টে বৃষ্টি ও বন্যা হয়। বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় সবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়; পাশাপাশি এ সময়ে সবজির চাষও কম হয়। তাই দামও বেড়ে যায়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় মহাসড়কের অবস্থা খারাপ হওয়ায় ট্রাকের ভাড়া বেড়েছে; যার প্রভাব বাজারে পড়েছে। 

বিক্রেতা রাশেদ আলম বলেন, বৃষ্টি, বন্যা ও ট্রাকের ভাড়া ছাড়াও আরও কিছু কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে। আড়ত থেকে কয়েক হাত ঘুরে ক্রেতাদের কাছে পণ্য আসায় দাম বেড়ে গিয়েছে। আড়তে সবজি নিয়ে আসার পর ট্রাকে থাকা অবস্থাতেই বিক্রি হয়। আরেকজন কিনে নেন। এভাবে হাতবদলে দাম বাড়ে।