Image description

নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও বন্দি পলায়নের আশঙ্কায় দেশের সব কারাগারে রেড অ্যালার্ট (সর্বোচ্চ সতর্কতা) জারি করেছে কারা অধিদপ্তর। গত শনিবার দেওয়া ওই নির্দেশনায় প্রত্যেক কারা কর্তৃপক্ষকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার এবং বন্দিদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বিক বন্দি ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

এ নির্দেশনার পর নড়েচড়ে বসেছেন সব কারাগারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। বিশেষ করে যেসব কারাগারে সন্ত্রাসী, দাগি অপরাধী, জঙ্গি, দুর্ধর্ষ প্রকৃতির বন্দি এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা বন্দি রয়েছেন; সেসব কারাগারে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত তিন আসামি পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে পালানোর আগেই বিষয়টি নজরে আসে (৫ আগস্ট) কারা কর্তৃপক্ষের। এর পরই কারাগারটির নিরাপত্তায় বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সব কারাগারে রেড অ্যালার্ট জারির ক্ষেত্রে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের এ ঘটনাও আমলে নেয় কারা অধিদপ্তর।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন গতকাল রবিবার আমাদের সময়কে বলেন, সব কারাগারে সতর্কতা জারি রুটিন কাজের অংশ। বন্দি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা কারাগারগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করতে বলেছি। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সতর্কতা জারির ক্ষেত্রে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিন আসামি পালানোর চেষ্টার ঘটনাটিকেও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

কারা সূত্র বলছে, গত ২৭ জুলাই দেশের কারাগারগুলোর বন্দি পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, ৭৩টি কারাগারে মোট বন্দি ধারণক্ষমতা ৪৩ হাজার ১৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪১ হাজার ১৭১, নারী ১৯৮৬ জন। কারাগারগুলোয় মোট বন্দি রয়েছে ৭৭ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৫ হাজার ৭১ জন এবং নারী ২৭৩২ জন। কয়েদি

আছে ১৮ হাজার ৮৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ কয়েদি ১৮০৭৮ জন, নারী ৮০৮ জন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছে ৬ হাজার ৭২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ৪২৫ জন এবং নারী ৩০৪ জন। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বন্দি রয়েছে ২৬২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৫৩১ জন, নারী ৯০ জন। বিদেশি বন্দি ৩৯৯ জন এবং বিডিআর ৫৩৮ জন। এ ছাড়া ডিভিশনপ্রাপ্ত (শ্রেণিপ্রাপ্ত) বন্দি রয়েছেন ১৬২ জন। এর মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী ৪১ জন, সাবেক এমপি ৩৯ জন, সরকারি কর্মকর্তা ৭৬ জন এবং অন্যান্য ৬ জন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অপচেষ্টাসহ নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীরা। আবার কারাগারের ভেতরে আওয়ামী লীগের যেসব সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাকর্মী আছেন, তারাও কারাগারের ভেতরে বড় ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতে পারে বলে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য রয়েছে। যে কারণে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কারা মহাপরিদর্শকের দপ্তর থেকে সব কারাগারে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি কারাগারগুলোর বন্দি ব্যবস্থাপনা নতুন করে ঢেলে সাজাতেও বলা হয়েছে। কারাগারের ভেতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে যত ধাপ রয়েছে, এর সবগুলোই গত শনিবার রাত থেকে বাস্তবায়নে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একাধিক কারাগারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারা অধিদপ্তরের নির্দেশনার পর দেশের সব কারাগারের প্রধান ফটকে শনিবার রাত থেকেই অস্ত্রধারী কারারক্ষীদের সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বন্দিদের সঙ্গে স্বজনের দেখা সাক্ষাতেও বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বন্দিদের সেলগুলোয় কারা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যদের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন আদালতে হাজিরা শেষে বন্দিদের কারাগারে ঢোকানোর সময় সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে তল্লাশি করা হচ্ছে যেন বন্দিরা অস্ত্র, গুলি, চাকুসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক বস্তু নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে কারাগারের চৌহদ্দিতে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া কারাগার থেকে বন্দিদের আদালতে আনা-নেওয়ার সময় যাতে বন্দি ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মৃত্যুদ-প্রাপ্ত তিন আসামি। এ জন্য তারা বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে ‘তমাল’ ভবনের নিচতলায় ১২ নম্বর কক্ষের দেয়াল খুঁড়ছিলেন। ৫ আগস্ট রাতে বিষয়টি টের পায় কর্তৃপক্ষ। পরদিন ৬ আগস্ট সকালে ওই কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে একটি লোহার পাত, দুই টুকরা রড, কম্বল কেটে বানানো ২৮ ফুট লম্বা রশি, ২৫ ফুট লম্বা বেল্ট, লোহার তৈরি ২টি আংটা, ১০ ফুট লম্বা একটি খুঁটিসহ বিভিন্ন উপরকরণ জব্দ করা হয়।

এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার কোনাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করে কারা কর্তৃপক্ষ। মামলার এজাহার অনুযায়ী, ওই তিন আসামি কারাগার থেকে পালানোর প্রস্তুতি হিসেবে এসব উপকরণ সংগ্রহে রেখেছিলেন।

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন গতকাল রবিবার আমাদের সময়কে বলেন, কারাগারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভেতরে বাড়ানো হয়েছে নিজস্ব গোয়েন্দা নজরদারি। এছাড়া কারাগারের প্রধান ফটকসহ চৌহদ্দিতে বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।