Image description

বাংলাদেশের জনপ্রশাসন মাথাভারী বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের উচ্চপদে অনুমোদিত পদের বিপরীতে অতিরিক্ত পদোন্নতি ছিল গত সরকারের আমলে নিয়মিত ঘটনা।

সরকারের উচ্চপদে পদায়নে বৈষম্য নিরসনসহ বেশকিছু লক্ষ্য নিয়ে সিনিয়র সার্ভিস পুল (এসএসপি) চালু করেছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। জনমুখী, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও দক্ষ প্রশাসন কাঠামো গড়ে তুলতে এসএসপির মাধ্যমে সে সময় লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চপদের জন্য বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়। এতে জনপ্রশাসনে প্রশাসন ক্যাডারের প্রাধান্য কমে যাওয়ার বাস্তবতা তৈরি হয়। তাই সে সময় প্রশাসন ক্যাডারদের একটি অংশ এর বিরোধিতা করেন। ফলে এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেভাবে গতি আসেনি। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর এসএসপির কার্যক্রম অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং পরে এরশাদ সরকার সেটি বাতিল করে। বিশ্লেষকরা বলেন, এর মধ্য দিয়ে জনপ্রশাসনে প্রশাসন ক্যাডারের কর্তৃত্ব পাকাপোক্ত হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী আমলাতন্ত্রে ঔপনিবেশিক আমলের প্রভাব কাটাতে এবং অন্যান্য পদের ওপর প্রশাসন ক্যাডারের প্রাধান্যের অবসান ঘটাতে ১৯৭৯ সালের ২৩ আগস্ট এসএসপি গঠন করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরকার। এ পুলে সে সময় পদ ছিল ৬২৫টি। ওই সময় উপসচিব থেকে ওপরের পদে কর্মকর্তাদের জন্য গঠিত এসএসপি সব ক্যাডারের জন্য উন্মুক্ত ছিল। পুলে লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডার থেকে আসা কর্মকর্তাদের জন্য যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি স্তরবিন্যাসের সর্বোচ্চ পদে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে ১৯৮২ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের পর আগের সরকারের তৈরি করা এসএসপি অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং ১৯৮৯ সালে তা বিলুপ্ত করা হয়।

এসএসপি গঠন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এসএসপি অবশ্যই ভালো ব্যবস্থা ছিল। এটা চালু থাকলে ভালো হতো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটা বাতিল করা হয়।’ এ বিষয়ে তিনি তার বইয়ে (সিভিল সার্ভিস অ্যাট দ্য ক্রসরোড) আলোচনা করেছেন বলেও উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশের জনপ্রশাসন মাথাভারী বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের উচ্চপদে অনুমোদিত পদের বিপরীতে অতিরিক্ত পদোন্নতি ছিল গত সরকারের আমলে নিয়মিত ঘটনা। রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার উদ্দেশ্য থেকেই এটা করা হতো। প্রচলিত রয়েছে যে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) ২৮টি ক্যাডারের মধ্যে ক্ষমতা ও প্রভাব বিবেচনায় সবার আগে থাকে প্রশাসন ক্যাডার। প্রতি বিসিএসে এ ক্যাডারে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় সরকার। সম্প্রতি ৪৪তম বিসিএসে ২৫০ জন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি)। ঠিক এর আগের বিসিএসে (৪৩তম) একই ক্যাডারে আরো ৩০০ কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ওই বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত একটি অংশের নিয়োগ এখনো চূড়ান্ত করা যায়নি। সরকারি কর্মচারী বাতায়নের তথ্য অনুযায়ী, প্রশাসন ক্যাডারে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৩৫ জন কর্মরত রয়েছেন।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রশাসন ক্যাডারকে বলা হয় ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (আইএএস)। প্রতি বছর দেশটির সরকার ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (ইউপিএসসি) মাধ্যমে গড়ে প্রায় ১৮০ জন নতুন আইএএস কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। বিপুল আয়তন ও প্রায় দেড়শ কোটি জনগোষ্ঠীর দেশটিতে প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার সংখ্যা বাংলাদেশের প্রায় সমান। দেশটির পার্সোনেলস, পাবলিক গ্রেভেন্সেস অ্যান্ড পেনশনস-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০২৫ সালের তথ্য অনুসারে, ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোয় বর্তমানে মোট অনুমোদিত আইএএস ক্যাডার পদ সংখ্যা ৬ হাজার ৮৭৭, যার মধ্যে কর্মরত আছেন ৫ হাজার ৫৭৭ জন কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে মাথাভারী প্রশাসন গড়ে উঠেছে। বিগত সরকার কর্মকর্তাদের হাতে রাখার জন্য বেশি সুবিধা দিয়েছে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে গণহারে পদোন্নতি দিয়েছে। এখন এদিকটায় নজর দেয়া উচিত।’

এসএসপি আদেশের দ্বারা সচিবালয়ের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদগুলো এ পুলের অন্তর্ভুক্ত হয়। বিধান করা হয় যে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে বিপিএসসি কর্তৃক বাছাইকৃতদের সরকার এ পুলের অন্তর্ভুক্ত করবে। পুলে অন্তর্ভুক্তির জন্য পরীক্ষা নেয়া হবে। অনূর্ধ্ব-৪০ বছর বয়সী কর্মকর্তারা পুলে অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় অনধিক তিনবার অংশগ্রহণ করতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে পিএসসি কর্তৃক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা ও সিলেবাস প্রকাশ করা হলেও সে পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়নি। এ প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এসএসপি গঠনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত ছিল যে একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এ পুলে কর্মকর্তাদের যুক্ত করা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতি রয়েছে। অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা যোগ্য, দক্ষ ও অধিকতর মেধাবী তাদের দেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিয়ে আসা। কর্মরতদের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এ পুলে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করা হয়। তবে সে সময়ে যারা সচিবালয়ে কর্মরত ছিলেন তারা পরীক্ষা ছাড়াই পুলে যুক্ত হয়ে যান। তাদের পরবর্তী সময়ে যারা আসবেন তারা পরীক্ষার মাধ্যমে যুক্ত হবেন। কিন্তু পরে এ পদগুলো আর খালি হয়নি। এরপর এরশাদ সাহেব এসে এগুলো বাতিল করে দেন।’

এসএসপি জারীকৃত আদেশে পুলটির কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তিসহ পরবর্তী উচ্চতর পদগুলোয় নিয়োগের বিধান সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। এ পুল গঠনের পর এতে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে পিএসসিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পিএসসি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সিলেবাস প্রণয়ন ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে বিতরণ করে। পরীক্ষার জন্য মোট ১ হাজার নম্বর স্থির হয়। লিখিত পরীক্ষায় ৭০০ নম্বর, মৌখিক পরীক্ষায় ১৫০ নম্বর এবং বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে (এসিআর) ১৫০ নম্বর। ১৯৮৮ সালের ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো এসএসপি পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরে সরকারের নির্দেশে পরীক্ষা বাতিল করে পিএসসি। এ পরীক্ষা আর কখনো অনুষ্ঠিত হয়নি এবং এসএসপি অবলুপ্ত করা হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জাবিউল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জিয়াউর রহমান এসএসপির যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন ওই সময়ে সেটিই ছিল সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। নানা সময়ে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। এক ক্যাডারের বিরুদ্ধে অন্য ক্যাডারের নানা ধরনের আপত্তি এবং প্রত্যেকেরই নিজস্ব যুক্তি রয়েছে। আসলে প্রত্যেক ক্যাডারের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেই বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। সেজন্য দেশে যে চাকরিবিধি, পদোন্নতির বিধি রয়েছে সেগুলো অনুসরণ করলে আপাতত কোনো সমস্যা নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এসএসপির মতো একটা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে এটা নিয়ে নানা ধরনের ঝামেলা রয়েছে। এটার ভেতরে যেতে চাই না। সবচেয়ে বড় কথা সুপ্রিম কোর্টে আপিলের মামলায় একটা রায় রয়েছে। এখন রায়টাকে এ অবস্থায় রেখে অন্য কিছু করা যাবে না। রায়কে অনুসরণ করতে হবে। এটা সংস্কার কমিশনে যারা প্রস্তাব করেছে তারাও এ কথা বলেছে।’

বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসে কর্মরত ও সাবেক বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসএসপির মূল ধারণাটি ছিল জনপ্রশাসনে সব ক্যাডারের কর্মকর্তার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা; মেধার ভিত্তিতে দক্ষ কর্মকর্তাদের উচ্চপদে পদায়ন করা। এ প্রসঙ্গে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এসএসপিটা মূলত করা হয়েছিল প্রত্যেকটা সেক্টরকে স্পেশালাইজড করার জন্য, যেটা জিয়াউর রহমান তার দূরদর্শিতার মাধ্যমে করেছিলেন। উচ্চপদের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করতে এবং প্রতিটি সেক্টরে বিশেষজ্ঞ তৈরির লক্ষ্যে তিনি এমন ব্যবস্থা চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ হওয়ার শঙ্কায় একটা শ্রেণী এতে অসন্তুষ্ট হয় এবং বিভিন্ন কায়দায় সেটিকে বাধাগ্রস্ত করে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে প্রথমে এখানে কোটা আরোপিত হয়। বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় এলে কোটা বাতিল হলেও ২০১০-এ সাবেক বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বেঞ্চ কোটাকে সমুন্নত রাখেন।’

এসএসপি চালু হলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জনপ্রশাসনে যোগ্যতা অনুযায়ী যুক্ত হওয়ার সুযোগ ছিল। এতে সরকার পরিচালনা প্রক্রিয়ায় ভারসাম্য রক্ষা হতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে দূরত্ব কমত এবং অনেক বিশেষায়িত বিভাগে সংশ্লিষ্ট খাতের দক্ষ কর্মকর্তাদের উচ্চপদে কাজের সুযোগ হতো। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিষদের আরেক সদস্য বলেন, ‘কিছুদিন আগে মন্ত্রণালয়ে যে ক্যু হওয়ার কথা উঠেছিল, সব সেক্টরের কর্মকর্তার সমন্বয়ে যদি মন্ত্রণালয় পরিচালিত হতো তাহলে হয়তো এসব কথা উঠত না। ছোট একটি গ্রুপ, তারা রাষ্ট্র-সমাজকে এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলা হলেও একটা শ্রেণীর কাছে সরকারও জিম্মি হয়ে আছে।’

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সিভিল সার্ভিসের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও এটিকে জনমুখী করতে এসএসপি চালু করেছিলেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অধ্যাপক ড. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এটা জিয়াউর রহমানের মহৎ উদ্যোগ ছিল। এটা চালু থাকলে সিভিল সার্ভিস আরো পেশাদার হিসেবে গড়ে উঠত। “‍আমলাতন্ত্র” নামের জনক ম্যাক্স ওয়েবার। তিনিও বলেছেন, এটার কিছু ডিসফাংশন থাকবে। সেই ডিসফাংশনগুলো মোকাবেলা করে গতিশীল করা গেলেই সেটি ফাংশনাল হয়। এখন সেদিকে দৃষ্টি দেয়া উচিত। আমলাতন্ত্রকে জনমুখী করা উচিত।’

আমলাতন্ত্রে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এসএসপি চালু করেছিলেন বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মো. মাহমুদুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য বেশি, এটা সত্য। আমলাতন্ত্রে এ জায়গাটা সমন্বয় করা উচিত। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এটি সমন্বয় করতে চেয়েছিলেন। এসএসপি চালুর মধ্য দিয়ে তিনি উচ্চপদে পদায়নের যে বৈষম্য সেটি দূরীভূত করতে চেয়েছিলেন।’

এসএসপির মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে সরকারের উচ্চপদে পদায়ন নিশ্চিত করার ভাবনা ছিল। এতে একদিকে যেমন উপযুক্ত মানুষটি পদোন্নতি পেতে পারতেন, তেমনি কোনো একটি বিশেষ ক্যাডারের কর্তৃত্বমূলক অবস্থান তৈরি হওয়া কঠিন হতো। সাবেক সচিব আখতার হোসেন খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর তিনবারে চার শতাধিক অ্যাডমিন ক্যাডারের কর্মকর্তা নিয়োগ হয়। এসএসপি গঠনের পর এরশাদ সাহেব উপজেলা প্রশাসন করার সময় প্রশাসন ক্যাডারে বড় সংখ্যায় নিয়োগ হয়। পরে ১৯৮৪ সালে আবারো প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া হয়। আমার ধারণা, এত এত কর্মকর্তা নিয়োগের ফলে এসএসপি আর কার্যকর করা যায়নি। এসএসপির মূল বিষয় ছিল লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তা বের করে আনা। একবার পরীক্ষার ঘোষণা হলেও পরীক্ষা আর হয়নি। এই এসএসপির অকার্যকরের ফলে প্রশাসন ক্যাডারদের কর্তৃত্ব বেড়েছে।’

দেশে বিভিন্ন সময়েই আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনও দেখা গেছে। কিন্তু সমস্যাটির সমাধান এখনো হয়নি। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করেন। আবার অন্যান্য ক্যাডারের অভিযোগ হলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা তাদের ওপর বিভিন্নভাবে আধিপত্য বিস্তার করেন। আমরা ঐকমত্য কমিশনে তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। আমরা চেষ্টা করেছিলাম আন্তঃক্যাডার সমস্যাগুলো সমাধান করতে। আমরা এখন পর্যন্ত তা করতে পারিনি। আমাদের সবার স্বার্থে এটা সমাধান হওয়া দরকার। আমরা চেষ্টা করেছিলাম, তবে এখন পর্যন্ত সফল হইনি, দেখা যাক কী হয়।’