Image description

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ অজ্ঞাত ১১৪ জনের লাশ উত্তোলন শুরু হচ্ছে কাল বুধবার থেকে। রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে সমাহিত এই শহীদদের পরিচয় শনাক্ত এবং মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার আদালতের আদেশ আসে লাশ উত্তোলনের। তবে আদেশের কপি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)–এর কাছে পৌঁছাতে সময় লেগে যাওয়ায় মঙ্গলবার লাশ উত্তোলন শুরু করা সম্ভব হয়নি। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আগামীকাল বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সিআইডির মুখপাত্র ও বিশেষ পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন খান জানান, ‘লাশ উত্তোলনের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম। তবে আদালতের আদেশ শেষ মুহূর্তে হাতে পাওয়ায় আজ কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। কাল থেকে রায়েরবাজার গণকবরে লাশ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হবে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা বলেন, ‘জুলাই ও আগস্ট মাসে রায়েরবাজার গণকবরে যে সব অজ্ঞাত লাশ দাফন করা হয়েছে, আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর সেগুলো উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। প্রতিটি মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে পরিচয় শনাক্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হয়।’

তিনি জানান, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সিআইডির ফরেনসিক টিম এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল এই লাশ উত্তোলন এবং নমুনা সংগ্রহের দায়িত্বে থাকবেন।

গত ২ আগস্ট রায়েরবাজার কবরস্থানে সরেজমিনে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, এখানে ১০০ জনেরও বেশি শহীদকে দাফন করা হয়েছে। তাদের অনেকের পরিচয় জানা যায়নি। এতদিন স্বজনরা লাশ উত্তোলনে রাজি না থাকলেও এখন তারা সম্মতি দিয়েছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আদালতের মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতের আদেশ আসে সোমবার। পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ১১৪ জন শহীদের মরদেহ উত্তোলনের অনুমতি দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের অতিরিক্ত পিপি মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন।

মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম এই আবেদনে উল্লেখ করেন, গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষে অংশ নিয়ে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ শহীদ হন। এদের মধ্যে ১১৪ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়। আইনানুগ প্রক্রিয়ায় লাশ উত্তোলনের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত, ডিএনএ সংগ্রহ এবং পরিচয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে তাদের পরিবার চিহ্নিত হলে মরদেহ হস্তান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আদালত আবেদনটি অনুমোদন করে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

সরকারের এই উদ্যোগকে শহীদদের পরিবার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। অনেকেই বলছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইতিহাসের সত্য উদঘাটন এবং শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা প্রকাশ পাবে।