
রাত তখন একটা। দুই বন্ধুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সবুজ। পথে কাটাখাল ব্রিজে দেখা মিললো পুলিশের। ঠিক আধা কিলোমিটার দূরে যেতেই লাশ হলেন সবুজ। ছিলেন মোটরসাইকেলে। ড্রাইভ করছিলেন নিজেই। ডাকাতরা ব্রিজের রেলিংয়ে এপাশ থেকে ওপাশে রশি টানিয়ে রাখলো। অন্ধকারে রশি না দেখে ব্রিজে উঠতে গলায় রশি পেঁচিয়ে মারা যান সবুজ। দুই বন্ধু গুরুতর আহত হন। বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের দ্বিতীয় তেলিখাল ব্রিজের কাছে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে আতঙ্ক বেড়েছে কোম্পানীগঞ্জে। শুধু এ ঘটনাই নয়, কোম্পানীগঞ্জ জুড়ে এখন চুরি ও ডাকাতি নিয়ে আতঙ্ক। যে সড়কে ডাকাতের হাতে সবুজ মারা গেছে সেই সড়কের ডাকাতির ঘটনা এবারই নয়। বর্ষা এলেই ডাকাতি বাড়ে। ঘটনার পর শুক্রবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুল আলীম। স্ট্যাটাসে তিনি বলেন-‘কোম্পানীগঞ্জে ২-৩ দিন পর পর রাস্তায় রশি বেঁধে ডাকাতি হচ্ছে। ব্যাপারটি খুবই উদ্বেগের। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছেন। থানা পুলিশের ঘুম আর কখন ভাঙবে?’ স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন- ‘গত এক সপ্তাহ আগে আমার ডাক্তার দেখিয়ে দেরি হওয়ায় রাত ১১টার দিকে আম্বরখানা থেকে বাড়িতে আসার জন্য ফোন দিয়ে রাস্তায় পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। কারণ আমার সঙ্গে ৪০ হাজারের মতো টাকা ছিল। তারা বলেছিল পুলিশ নাকি সিএনজি দিয়ে রোডে টহল দিচ্ছে। তাদের কথায় রওয়ানা দিয়ে পুরো রাস্তায় দুরুদ আর কালেমা পড়ে পড়ে থানা পর্যন্ত এলাম। কিন্তু কোথায়ও কোনো জায়গায় পুলিশ দেখিনি।
৪ দিন আগে উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তাকে রশি বেঁধে মোবাইল ফোন ও নগদ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে ডাকাতদল।’ এ কথা কেবল সাংবাদিক আলীমের নয়। গোটা কোম্পানীগঞ্জের মানুষেরও। ডাকাতদের ফাঁদে সবুজ নিহত হওয়ার পর পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায় সরব মানুষ। তবে কোম্পানীগঞ্জের পুলিশের ভাষ্য হচ্ছে- পুলিশের একাধিক টিম ওইদিন টহলে ছিল। পুলিশ একদিকে গেলে অন্যদিকে ডাকাতি হয়। আর বর্ষার মৌসুম হওয়ায় ডাকাতরা নৌকাযোগে এসে ডাকাতি করে চলে যায়। তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। কোম্পানীগঞ্জের একই সড়কের আগের সারি-গোয়াইনঘাটের ডাকাতির একটি ভিডিও প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ভাইরাল হয়। রাত ১টার দিকে লাফনাউটের একটি ব্রিজের কাছে ওই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। একটি বেসরকারি কোম্পানীর চলতি একটি গাড়ির সামনে দা ও রামদা নিয়ে দাঁড়ায় কয়েকজন যুবক। কাছে এসে থামতেই ডাকাতরা গাড়ি থেকে মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনাটিও নৌ-ডাকাতরা ঘটিয়েছে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। সিলেটের জকিগঞ্জে কয়েকটি ডাকাতি ও চুরি সংঘটিত হয়েছে। কানাইঘাটের দুর্গম এলাকাতেও বেড়েছে চুরি। সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা সিনিয়র এসএসপি সম্রাট হোসেন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- পুলিশের পক্ষ থেকে টহল বাড়ানো হয়েছে। বর্ষাকাল ও দুর্গম এলাকা হওয়ার কারণে দুর্বৃত্তরা মাথাচাড়া দেয়ার চেষ্টা করছে। তবে এ ব্যাপারে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। টহল আরও বাড়ানো হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জের ঘটনার পর পুলিশ অভিযানে রয়েছে বলে জানান তিনি। সিলেটের ধোপাগুল ও ভোলাগঞ্জ এলাকার স্টোন ক্রাশার মিল মালিকরা জানিয়েছেন- জেলা প্রশাসকের অভিযানের দুটি এলাকায় শতাধিক স্টোন ক্রাশার মিলে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় স্টোন ক্রাশার মিলে চুরি হচ্ছে। গত ১৫ দিনে অন্তত ৫-৬টি স্টোন ক্রাশার মিলে চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়টি তারা পুলিশকেও অবগত করেছেন। ভোলাগঞ্জের বিএনপি নেতা ও পাথর আমদানি ও রপ্তানিকারক আক্তারুজ্জামান নোমানের বাাসায়ও দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়েছে। চোররা দরজা ভেঙে মোবাইল, ল্যাপটপসহ নগদ টাকা লুটে নিয়েছে। জৈন্তাপুরের সারিঘাটসহ কয়েকটি এলাকায় প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এদিকে- রাতের সিলেট নগরেও বেড়েছে চুরি, ছিনতাইসহ নানা ঘটনা। কয়েকটি ঘটনা জনমনে আতঙ্ক বাড়িয়েছে। বুধবার রাতে নগরের মেজরটিলার মোহাম্মদপুরের ১নং গলির একটি বাসায় ডাকাতি হয়েছে।
প্রবাসী পরিবারের এক বৃদ্ধা একাই বাসায় ছিলেন। ভোররাতে ডাকাতদল তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে বৃদ্ধাকে ছুরিকাঘাত করে বাসা লুট করে। ঘটনার পর পুলিশ ওই বাসা তদন্ত করেছে। ইতিমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্তে নেমেছে। মোহাম্মদপুরের এই ডাকাতির ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নগরের চুরির হওয়ার নানা দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছে। সিসিটিভি ফুটেজে চোরদের কার্যক্রম ধরা পড়ার পর এই ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়া হয়। নগরে পাড়াভিত্তিক চুরি ছিনতাই বেড়েছে। গত সপ্তাহে নগরের নয়াসড়কের একটি স্কুলে ও মিরাবাজারে চুরির সময় দুই চোরকে হাতেনাতে আটক করা হয়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা এডিসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেট নগরে মধ্যরাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারাও মাঠে টহলের দায়িত্বে থাকেন। গলিপথে কিছু কিছু ঘটনা ঘটলেও পরবর্তীতে আইনি উদ্যোগ নিয়ে গেলে বাদী পাওয়া যায় না। তবে ঘটনাকারীদের ধরতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে বলে জানান তিনি।