
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় আজ সারাদেশ ছিল উৎকণ্ঠায়। নিহতদের পরিবারগুলো হয়ে পড়ে বাকরুদ্ধ, প্রাণহীন। আর আহত শিক্ষার্থীদের মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন হাসপাতালে ছোটাছুটিতে ব্যস্ত।
এদিকে হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ঠ সবাই আজ পার করেছেন ভিন্ন রকম এক ব্যস্ততম দিন। ছুটিতে থাকা ব্যক্তিরাও ছুটে এসেছেন হাসপাতালে, যেন আহতদের চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি না হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দগ্ধ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে আবেগঘন বর্ণনা দিয়েছেন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. নাজমুল আহসান সিদ্দিকী
সোমবার (২১ জুলাই) রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে তিনি এক স্ট্যাটাসে এ বর্ণনা দেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে ডা. নাজমুল লেখেন, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা মাস্ ক্যাজুয়ালটি ম্যানেজ করতে কিছুটা হলেও অভ্যস্ত। কিন্তু আজ আমরা যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি, তার সাইকোলজিকাল ট্রমা আমরা কতদিনে কাটিয়ে উঠতে পারব, জানি না।
তিনি লেখেন, খবর পাওয়ার পরেই অফিসিয়াল হোযাটসঅ্যাপ গ্রুপে সবাইকে নোটিশ করা হয়। এরপরের রেসপন্সের একটা স্ক্রিনশট দিলাম, সবাই ইনস্ট্যান্ট হাসপাতালে রওয়ানা হয়ে আসছে। আমাদের সব চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় যারা হাসপাতালের বাইরে ছিলেন, এমনকি যারা ছুটিতে ছিলেন, তারাও চলে এসেছেন।
তিনি আরও লেখেন, কয়েকটা বাচ্চার সিভি লাইন করলাম, তার মধ্য দুজন আমার রামিনের (নিজের ছেলে) বয়সী। পুড়ে যাওয়া মুখমন্ডল আর ক্ষণে ক্ষণে পানি পানি বলে বিলাপ! নিতে পারছিলাম না।
তিনি লেখেন, বিভিন্ন হাসপাতালের অনেকেই ফোন করে সাপোর্ট লাগবে কিনা জানতে চেয়েছেন, সবার কাছে কৃতজ্ঞতা। বার্ন পেশেন্টের শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়া হচ্ছে ভয়ের কথা। অনেকেরই এমন ইনহেলেসনাল ইঞ্জুরি হয়েছে। যারা বেঁচে আছে তাদের বার্ন পরবর্তি ইনফেকশন হচ্ছে মেইন কনসার্ন।
ডা. নাজমুল বলেন, সারাদিন না খেয়ে খাটাখাটনি করে এরপর বের হওয়ার সময় (হাসপাতাল থেকে) মেইন গেটে দেখি বিরাট জটলা। তারা সবাই সাংবাদিক, সবাই ভেতরে ঢুকবেন, ছবি, ভিডিও নেবেন। কিন্তু আমাদের আনসার সদস্যরা বাঁধা দিচ্ছিল। এতজন সাংবাদিক ভাই যদি হাসপাতালে ঢুকে ঘুরতে থাকেন বিভিন্ন জায়গায়, তাহলে ইনফেকশন কন্ট্রোলের কী অবস্থা হবে সেটা বলাই বাহুল্য।
তিনি বলেন, আর বের হয়ে রাস্তায় দেখি অনেক মানুষ, এদের অনেকেই রক্ত দিতে এসেছেন। কিন্তু বার্ন পেশেন্টের প্রথম দিনেই রক্ত দরকার নেই। ধীরে ধীরে পরে লাগে রক্ত। তাই রক্ত দেওয়ার জন্য সবাই ভিড় না করাটাই ভালো।
উল্লেখ্য, সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়। দুর্ঘটনা মোকাবিলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে। এ আকস্মিক দুর্ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বৈমানিকসহ ২০ জন নিহত এবং ১৭১ জন আহত হয়েছেন।