
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী কাব্য। একই স্কুলে পড়াশোনা করে তার যমজ বোন। গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় দগ্ধদের চিৎকার আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ। এ সময় কাব্যর বোনকে খুঁজে পেলেও কাব্যকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না মা। আতঙ্কিত মা সন্তানের খোঁজে কুর্মিটোলা হাসপাতালের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন। করছিলেন কান্না আর আহাজারি।
সোমবার দুপুরে কুর্মিটোলা হাসপাতাল এলাকার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে দগ্ধদের চিৎকার আর তাদের স্বজনদের আহাজারিতে। কেউ দগ্ধ শিশুসন্তানকে নিয়ে দৌড়াচ্ছিলেন দ্রুত চিকিৎসার আশায়, কেউ চেষ্টা করছিলেন বুকের মানিক সন্তানটি কোথায় আছে জানার জন্য। সবার চোখেমুখেই ছিল দুর্বিষহ কষ্ট, আর্তনাদ আর ভয়ের ছায়া।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পর খবর পেয়ে এমন আতঙ্ক নিয়েই হাসপাতালে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ওই মা বলছিলেন, ‘স্কুল থেকে আমার মেয়ে আমাকে ফোন দিয়েছে। আমার মেয়েকে পেয়েছি, ছেলেটাকে পাইনি এখনো। আমার যমজ দুইটা বাচ্চা, আর কেউ নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে আমাকে ফোন দিয়েছিল। সে সুস্থই আছে। কাব্যকে পুরো স্কুলে খুঁজেছি, কোথাও পাইনি। যেখানে বিমান বিস্ফোরণ হয়েছে আমার ছেলে ওখানেই ছিল। কিন্তু তার বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছে না। রাস্তায় একটা আননোন (অপরিচিত) নম্বরের মোবাইল কল থেকে জানতে পারি আমার ছেলেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। পরে বলেছে সেখানে রাখেনি। আমি এখনো বলতে পারি না, আমার ছেলে কোথায়। আমি তো আমার ছেলেকে পাচ্ছি না। আমার আর কেউ নেই।’
কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন আর হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই অভাগী মা তার সন্তানকে খুঁজে পাননি।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরায় বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমানটি দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে ১টা ১৮ মিনিটে বিধ্বস্ত হয়।
জানা গেছে, মাইলস্টোন কলেজ সংলগ্ন মাঠে ‘এফটি-৭ বিজিআই’ মডেলের একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। তখন স্কুল শাখায় প্রথম শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চলছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে বিমানটি ভেঙে পড়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ঘটনার খবর পেয়ে অভিভাবকরাও দ্রুত সেখানে ছুটে যান।