Image description
 

নিজের জীবন ও পরিবারের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন- এমন অভিযোগ করেছেন রাজধানীর ইংলিশ রোডের লোহা ব্যবসায়ী এমএমএ কাদের। তার অভিযোগ, ‘সন্ত্রাসী’ হোসেন মিজান ও পাভেল গংদের অব্যাহত হুমকিতে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় ওই সন্ত্রাসীরা তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদেরকে ১৪টি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। কিন্তু ব্যবসায়ীর দেওয়া মামলায় ওই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আদালত গ্ৰেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও রাজধানীর ভাসানটেক থানা পুলিশ সন্ত্রাসীদের আটক করছে না। 

 

তাছাড়া হোসেন মিজান সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দায়ের হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার আসামি হলেও তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী। 

শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের হল রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি।

লিখিত বক্তৃতায় এমএমএ কাদের বলেন, ‘আমার সাবেক কর্মচারী হোসেন মিজান আমার পরিবারের সদস্যসহ আমাকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। হোসেন মিজান বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এবং জুলাই আন্দোলন ঠেকাতে সশস্ত্র হামলার অন্যতম অর্থ জোগানদাতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। হোসেন মিজানের হুমকিতে বর্তমানে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের জীবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘হোসেন মিজান আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে আমার বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে। দীর্ঘ সময় চাকরি করার পর ২০০৫ সালে হোসেন মিজান ঠিকাদারি করার জন্য স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র করে ব্যবসায়িক লভ্যাংশ দেওয়ার শর্তে আমার কাছ থেকে কয়েক ধাপে ২০০৫-২০১৭ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মোটা অংকের টাকা নেয় এবং হিসাব করে আমাকে বিভিন্ন তারিখে তার স্বাক্ষর করা চেক দেয়। চেকগুলো ডিজঅনার হলে আমি প্রথমে উকিল নোটিশ এবং পরে মামলা দায়ের করি। এরপর হোসেন মিজান একের পর এক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়া শুরু করে। ২০২১ সালে আমার পাওনা টাকা পরিশোধের বৈঠক করার জন্য হোসেন মিজান আমাকে ভোলায় ডেকে পাঠায়। ওই সময় ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ক্যাডার লালমোহনের স্থানীয় ঈমাম কমিশনারের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বৈঠকে আসা বৃদ্ধ নারী পুরুষদেরকে মারধর করে ও মহিলাদের গায়ে হাত দেয়। তখন নারী নির্যাতন মামলাসহ কোর্টে ৬টি মামলা হয়। তৎকালীন সরকারের ক্ষমতা ও টাকার বলে সবগুলো মামলা খারিজ হয়ে যায়।ওই ঘটনায় আহত সিদ্দিক মোল্লা অসুস্থ থাকার কিছুদিন পর মারা যায়।’

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে হোসেন মিজানের নামে অর্থ আদায়, প্রতারণা, সাইবার ক্রাইম, চেক ডিজঅনার মামলাসহ ৮টি মামলা চলমান রয়েছে।

আমার দায়ের করা এনআই অ্যাক্টের মামলায় হোসেন মিজানকে দোষী সাব্যস্ত করে এক বছরের কারাদণ্ড ও চেকের সমপরিমাণ টাকা প্রদানের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ যুগ্ম দায়রা জজ আদালত। ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে গ্ৰেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়। তাকে গ্ৰেফতার করার জন্য আমি ৬ বার ভাষানটেক থানার ওসির সঙ্গে দেখা করলেও থানা পুলিশ এখনো তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তাকে গ্ৰেফতারের জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেও কোনো লাভ হয়নি। হোসেন মিজান পাওনা টাকা আত্মসাৎ করতে ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত কৌশলে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। ওই সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের প্রভাবশালী এমপি ভোলা-৩ আসনের সাবেক এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং ভোলা-৪ আসনের সাবেক উপমন্ত্রী জ্যাকবের সঙ্গে গভীর সখ্যতার কারণে প্রভাব খাটিয়ে আমার টাকা ফেরত না দিয়ে আমাকে মামলা, হামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল হোসেন মিজান। এরই মধ্যে প্রচুর অবৈধ সম্পদ অর্জন করে হোসেন মিজান।’

কাদের বলেন, ‘তাছাড়া বিগত পতিত সরকারের সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ, জিসানকে দিয়ে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। কিছুদিন পর পুনরায় লক্ষ্মীপুরের এমপি নয়নের ছোট ভাই বাপ্পি, ঢাকা দক্ষিণের ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী, কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন, পল্টন থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আল-আমিন, সন্ত্রাসী সুকান্ত সুমন কাশারীকে দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দেওয়া হলে প্রাণনাশের হুমকি দেয় তারা। তখন আমার দুই ছেলে হোসেন মিজানের সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে সপরিবারে আমেরিকা চলে যায়। ভোলার বোরহান উদ্দিন উপজেলার হাকিমুদ্দিন ইউনিয়নে হোসেন মিজানের এক পালিত সন্ত্রাসী পাভেল হাওলাদারকে দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের সবাইকে শেষ করে দিতে বলে। বিনিময়ে পাভেল পাবে হাকিমুদ্দিনে একটি দোতলা বাড়ি, ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে একটি ফ্ল্যাট। বিএনপি নেতা পরিচয় দেওয়া সন্ত্রাসী পাভেলের গ্রামের বাড়ি হাকিমুদ্দিন ইউনিয়নে হলেও সে ঢাকায় বসবাস করে। বিভিন্ন সময় আমি কোর্টে সাক্ষী দিতে গেলে এই পাভেল দলবল নিয়ে কোর্টে গিয়ে আমাকে এবং মামলার অন্যান্য সাক্ষীদেরকে আদালতে সাক্ষ্য দিতে বাধা দেয় এবং আমাদেরকে হত্যা করার হুমকি দেয়। পাভেল আগে নিজেকে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে আমাকে ভয়ভীতি দেখাতো।’

তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ক্যাডার পাভেল বর্তমানে নিজেকে বিএনপি নেতা বলে পরিচয় দেয়। হোসেন মিজান একের পর এক ষড়যন্ত্র করে উপায় না পেয়ে আমাকে আওয়ামী লীগ নেতা এবং আমার ছোট ছেলে মোস্তফা নবি ফাইয়াজকে ছাত্রলীগের নেতা সাজিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সঙ্গে ১৪টি হত্যা মামলায় আসামি করেছে। এর মধ্যে ৯টি মামলায় থানা পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ওই মামলা সাজানো, মিথ্যা। আর বাকি ৫টি মামলারই বাদী পাওয়া যাচ্ছে না। আমার ছোট ছেলে মোস্তফা নবী ফাইয়াজ লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সস্ত্রীক উচ্চশিক্ষা গ্ৰহণ করে। তাদের একমাত্র ছেলে সন্তান আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করে সে জন্মসূত্রে আমেরিকান নাগরিক। ফাইয়াজ জীবনের বেশির ভাগ সময় বিদেশে কাটিয়েছে। সে কিভাবে ছাত্রলীগের নেতা হয়? তাকেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যার দায়ে ১৪টি মিথ্যা মামলার আসামি করা হয়।আমি এবং আমার ছেলেরা কেউই জীবনে কোনো দিন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই।’

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘হোসেন মিজানকে আশ্রয় দিয়ে আজ আমি নিজেই নিঃস্ব হয়ে বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। আমার সন্তানেরা দেশ ছাড়া। অবিলম্বে ওই সন্ত্রাসীদের গ্ৰেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’