Image description

স্যাটেলাইটের আর্থিক ক্ষতি পোষাতে এখন বিদেশি বাজার খুঁজছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানে কীভাবে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট ১(বিএস-১)-এর সার্ভিস শুরু করা যায় তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশও টার্গেট করা হয়েছে।

বাংলাদেশের লক্ষ্য কয়েক বছরের মধ্যে এসব বিদেশি বাজার সম্প্রসারণ করা। এর মূল লক্ষ্য স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের খরচ ওঠানো। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট থেকে আয় হয়েছে ১৭২ কোটি টাকা। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে আরও ১০০ কোটি টাকা আয় বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যথাযথ মার্কেট পলিসি গ্রহণ করা হলে এ স্যাটেলাইট থেকে বাংলাদেশ লাভ করতে পারত। বাড়তি আয় করতে পারত।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ ইমাদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্যাটেলাইট নিয়ে মূলত মার্কেট অ্যানালাইসিস ও কাস্টমার বেইজ তৈরি করা হয়নি। এগুলো না করেই ব্যবসা শুরু করা হয়েছে। যেমন ধরুন আমরা নেপালে গিয়েছি ১০০ টাকার অফার নিয়ে। সেখানে অন্য দেশ নিয়ে গেছে ৫০ টাকার অফার। এসব বিশ্লেষণ না করায় এতদিন বিদেশি বাজারে ঢোকা সম্ভব হয়নি। এখন বিদেশি কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলকে সেবা দিচ্ছে মাত্র। তিনি বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন হতে যাচ্ছে প্রথম বিদেশি কোনো গ্রাহক। পাশাপাশি স্যাটেলাইটের বাজার হিসেবে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশকে টার্গেট করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এগুলো হচ্ছে কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তান। তিনি বলেন, স্যাটেলাইটের বাকি যে মেয়াদ আছে তার মধ্যে হয়তো খরচের টাকা উঠে আসবে। উচিত ছিল খরচের বাইরে আয় করা। সেটা আর হবে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এর মেয়াদ ছিল ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। অপেক্ষাকৃত কম ফুয়েল ব্যবহারের কারণে স্যাটেলাইটটির মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ছে। ওই হিসেবে স্যাটেলাইটটির মেয়াদ এখন ২০৩৬ সাল পর্যন্ত। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প নিয়ে বিটিআরসির প্রকল্প প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্যাটেলাইটির ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি বাংলাদেশের জন্য এবং ২০টি দেশের বাইরের জন্য ব্যবহার করা যাবে। ট্রান্সপন্ডার বিদেশে ইজারা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। অবশ্য ছয় বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে, দেশের জন্য রাখা ২০টি ট্রান্সপন্ডার প্রায় পুরোটা ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশের বাইরের জন্য রাখা ট্রান্সপন্ডারের ব্যবহার কম হচ্ছে। বিএসসিএল বলছে, ৪০টির মতো টেলিভিশন চ্যানেল স্যাটেলাইটটির সেবা নেয়। বাংলাদেশে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে ভারতীয় চারটি চ্যানেল বাংলাদেশ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। সেগুলো হলো স্টার, সনি, জি নেটওয়ার্ক ও কালারস টিভি। বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের আওতার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া রয়েছে।

বিএসসিএলের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ (বিএস-১) নামকরণের অনুমোদন হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ৩ মার্চ এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি এর মালিকানা হস্তান্তর করা হয় নতুন কোম্পানি বিএসসিএলের কাছে। এ কোম্পানি গঠন করা হয় স্যাটেলাইটটি পরিচালনার জন্য। বিএসসিএল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট তৈরি করেছে ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মাধ্যমে ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের ক্লাবে যুক্ত হয় বাংলাদেশের নাম।