Image description

হজ ব্যবস্থাপনা দলে কর্মকর্তাদের মধ্যে ফ্যাসিস্ট সমর্থক কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগপন্থি কর্মকর্তাদের প্রাধান্য নয় শুধু, নীতিমালা উপেক্ষা করে ও আওয়ামীগ সমর্থক কর্মকর্তাদের নামে গোপনে জিও ইস্যু করে সৌদি আরব পাঠানো হচ্ছে। এ সব কর্মকর্তা দেড় মাস সৌদি আরব অবস্থান করবেন এবং প্রত্যেকেই গড়ে ১০ লাখ টাকা করে পাবেন। 
২০২৫ সালে হজ নীতিমালায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, হজ প্রশাসনিক টিমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে গত বছর যারা গিয়েছেন এ বছর তাদের বাদ দেয়া হবে। বিভিন্ন মিডিয়ার সামনে কিছুদিন আগে ধর্ম উপদেষ্টা এ নীতিমালার কথা প্রকাশ করেছিলেন। 

নীতিমালার আলোকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনেক সিনিয়র পরিচালককে ও হজ প্রশাসনিক টিম থেকে বাদ দেয়া হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম কাণ্ড ঘটানো হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। আনোয়ার হোসেন নামক একজন দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা ও  সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গত বছর হজ প্রশাসনিক টিমে ছিলেন। তাকে এ বছরও তালিকায় রাখা হয়েছে। আনোয়ার হোসেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের গৃহশিক্ষক ছিলেন। তার একাডেমিক রেজাল্ট অত্যন্ত নিম্নমানের। সামীম মোহাম্মদ আফজালের নির্দেশে তাকে নিয়োগের জন্য রাতের বেলা অফিসে বসিয়ে লিখিত পরীক্ষায় পাস করানো হয়। 

কিছুদিন আগে ধর্ম উপদেষ্টা ডক্টর আ.ফ.ম খালিদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অফ গভর্নরস এর এক সভায় বলা হয়, আনোয়ার হোসেন আইন শাখায় কাজ করে সিন্ডিকেট করে আইনি লড়াইয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে সব মামলায় হারিয়ে দেয়। জরুরিভাবে তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করতে হবে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় তাকে ঢাকার বাইরে বদলি তো করা হয়নি বরং তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়। 

সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুত করা নীতিমালা নিজেরা লঙ্ঘন করে বিশেষ ব্যবস্থায় সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতাকে হজ প্রশাসনিক টিমে অন্তর্ভুক্ত করায় তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে। এর আগে রিফাত নামে এক ডাক্তারকে গত বছরের হজ প্রশাসনিক টিমে রাখার পরও  এ বছর ফের প্রশাসনিক টিমে দেয়া হয়েছিল। পরে ধর্ম উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে তা বাতিল করা হয়। ডা. রিফাত আওয়ামীপন্থি সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা।  শরীয়তপুরের ইউনিয়ন যুবলীগের এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পিয়ন টিটুকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ড্রাইভার হিসেবে পদায়ন করে হজ প্রশাসনিক টিমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডজনখানের ড্রাইভার থাকার পরও পিয়নকে ড্রাইভার হিসেবে পদায়ন করে হজে পাঠানোর ঘটনা বিরল। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক হিরণ বেপারীও হজ টিমে স্থান পেয়েছেন। ২০১২ সালে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চাকরি পান হিরণ বেপারী। 

এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আরেক আওয়ামীপন্থি পরিচালক ড. মো. হারুনকে  এক অর্থবছরে ৩য়বার বিদেশ সফরের সুযোগ দেয়ার পর আবার হজ প্রশাসনিক টিমে সৌদি আরব পাঠানো হচ্ছে। ড. হারুন এর আগে  চলতি অর্থবছর ২ বার চীন সফর এবং একবার জাপান সফর করে আসেন। সরকারি বিধি অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা এক অর্থবছরে ১ বারের বেশি বিদেশ সফর করতে পারেন না। 

সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের বিশেষ সুবিধা দানের ক্ষেত্রে ধর্মসচিব আফতাব হোসেন প্রামাণিকের বিরুদ্ধে অনেকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সুবিধাভোগী এবং গ্রেড-১ লাভ করে পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হওয়া এ  আমলার বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের আমলে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের পুনর্বাসনসহ বিশেষ সুবিধা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আফতাব উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, কাজের সুবিধা এবং সৌদি আরবের ভাষা বুঝে জানাশোনা আছে এ রকম লোকদের হজ প্রশাসনিক টিমে প্রধান্য দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে দল-মত বিবেচনা করা হয়নি। তিনি বলেন, পরিচালক ড. মো. হারুনকে একটি প্রকল্পের পিডি। প্রকল্পের কাজে তিনি এক বছরে একাধিকবার বিদেশ সফর করছেন। হজ প্রশাসনিক টিমে তার প্রয়োজনীয়তা আছে মনে করে তাকে নেয়া হয়েছে।