Image description
পথচারী পারাপারে জেব্রা ক্রসিংয়ে সিগন্যাল বাতি

লাল, হলুদ ও সবুজ বাতি জ্বলছে। এসব সিগন্যাল লাইট নিরাপদে যানবাহন ও পথচারী পারাপারের জন্য। লাল ও হলুদ বাতি জ্বলা মানে জেব্রা ক্রসিংয়ের আগে বা ফুটপাতে থামতে হবে। এ সময়ে কোনোভাবেই রাস্তা পার হওয়া যাবে না। যখন সবুজ বাতি জ্বলবে তখন জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করে রাস্তা পার হতে হবে। রাস্তা পার হওয়ার জন্য ফুটপাতে থাকা পুশ স্যুইচ বাটনে চাপ দিতে হবে। সবুজ বাতি জ্বলার আগ পর্যন্ত ফুটপাতে অবস্থান করতে হবে। রাজধানী ঢাকার তিনটি স্পটে নিরাপদে পথচারী পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিংয়ে এই সিগন্যাল লাইট স্থাপন করা হয়েছে।

কিন্তু যানবাহনের চালক কিংবা পথচারীদের এই সিগন্যাল লাইট মানতে অনীহা দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সহযোগিতায় এ প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ তিন স্পটের জেব্রা ক্রসিংয়ে এটি স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো হলো- ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সামনের সড়কে, পুরাতন রমনা থানা সংলগ্ন শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সড়কে এবং বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে। নিরাপদ পথচারী পারাপার নিশ্চিত করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ সব স্পটে স্থাপন করা হবে।

সরেজমিন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, পথচারীদের পারাপারে সিগন্যাল লাইট জ্বালাতে পুশ বাটন না চেপেই শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা যে যার মতো করে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। যানবাহনও নিজেদের মতো করেই চলছে। কিছু লোক পুশ বাটন চাপছে এবং সবুজ সংকেতের জন্য অপেক্ষা করছে। সবুজ বাতি জ্বলার পর রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করলেও লাল বাতি জ্বলা অবস্থায়ও যানবাহন চলাচল করছে। ট্রাফিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে ক্রসিং কমিয়ে আনতে হবে। জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে পথচারী এবং যানবাহন চালকদের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি উভয়ের আইন মানার প্রবণতাও থাকতে হবে। গত ১৫ মে নিরাপদ পথচারী পারাপারে ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলা সংক্রান্তে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ডিএমপি। জেব্রা ক্রসিংয়ে পথচারীরা পুশ বাটন চাপলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট সময় পর পথচারী পারাপারের জন্য সবুজ বাতির সংকেত এবং একই সময়ে উভয় দিক হতে আগত যানবাহনের জন্য লাল বাতির সংকেত দেখাবে। এ সময়ে যানবাহন জেব্রা ক্রসিংয়ের পূর্বে নির্ধারিত স্থানে থেমে নিরাপদে পথচারী পারাপারের জন্য থামতে হবে। লাল বাতি জ্বলা অবস্থায় যানবাহনকে অবশ্যই থামাতে হবে এবং পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারে সুযোগ করে দিতে হবে। লাল বাতি জ্বালানো অবস্থায় না থেমে অর্থাৎ ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে যানবাহন চালালে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই সঙ্গে পথচারীরাও পুশ বাটনে চাপ দিয়ে সবুজ সংকেতের জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং সবুজ বাতি জ্বললে নিরাপদে রাস্তা পারাপার হতে হবে। এ ক্ষেত্রেও লাল বাতি জ্বালানো অবস্থায় পথচারীরা না থেমে রাস্তা পারাপার হলে অর্থাৎ লাল বাতির সিগন্যাল অমান্য করলে পথচারীদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেব্রা ক্রসিংয়ে পথচারী নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য লাল বাতি জ্বলা অবস্থায় যানবাহন চালকদের থেমে এবং সবুজ বাতিতে নির্বিঘ্নে যান চলাচলের জন্য পথচারীদের লাল বাতি জ্বলা অবস্থায় থেমে সহযোগিতার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ অনুরোধ করছে। এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, উন্নত দেশে জেব্রা ক্রসিংয়ে সিগন্যাল বাতি ছাড়া পথচারী পারাপার হতে পারে না। ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা অধিকতর নিরাপদ করতে আমরাও একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি সিগন্যাল লাইট ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদে পথচারী পারাপার ও যানজট নিরসনে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পথচারীরা রাস্তা পারাপারের জন্য পুশ বাটনে চাপ দেবে। নির্দিষ্ট সময় পর সবুজ বাতি জ্বলে উঠলে রাস্তা পারাপার হবে। ঢাকার ক্রসিং কমিয়ে আনতে কাজ চলছে। জেব্রা ক্রসিং ছাড়া রাস্তার অন্যান্য স্থানে কাটা তারের বেড়া, লোহার বেড়া এমনকি ফুটপাতেও বেড়া দেওয়া হচ্ছে। ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং ছাড়া কেউ যেন রাস্তা পারাপার হতে না পারে। যানজট নিরসন, নিরাপদ পথচারী পারাপার ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে এর বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্পটে এটি স্থাপন করা হয়েছে। বেসরকারি সহযোগিতা নিয়ে ক্রমান্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব ক্রসিং আধুনিক সিগন্যাল লাইটের আওতায় আনা হবে, এতে ট্রাফিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে।