Image description
যাকে তাকে দোসর ট্যাগে বিরক্ত অনেকে

কী হতে যাচ্ছে আগামীতে। নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে, নাকি হবে না। দেশের শৃঙ্খলা কি আরও ভেঙে পড়বে? এ থেকে উত্তরণ কোন পথে? এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ রয়েছে প্রশাসনের মধ্যে। এ ছাড়া পছন্দের পোস্টিং না পেলে ঊর্ধ্বতনকে আওয়ামী দোসর ট্যাগ দেওয়ায় এ নিয়ে প্রশাসনে রয়েছে চরম অস্বস্তি।

জনপ্রশাসনসহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। মাঠ প্রশাসন থেকে সচিবালয়, অনেক স্থানে ঘেরাও ও নানান কর্মসূচিতে নিয়মিত কাজকর্ম প্রায়ই বিঘ্নিত হচ্ছে। শঙ্কা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আবার যে-কেউ তাদের দাবি আদায়ের জন্য যখন তখন রাস্তা দখল করে আন্দোলন করছেন। কারও আন্দোলনের যৌক্তিকতা থাকলেও অনেকেই অযৌক্তিক আন্দোলনও করছেন। কেন্দ্র থেকে মাঠ প্রশাসনের সর্বস্তরে ভেঙে পড়েছে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা তথা চেইন অব কমান্ড ব্যবস্থাও। মাঠ প্রশাসনে ভালো কাজ করেও অনেকে তিরস্কৃত হচ্ছেন সিনিয়র দ্বারা। এতে কাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন আবার গতিও কমে এসেছে। একজন সচিব নাম প্রকাশ না করে বলেন, এসিল্যান্ড, ইউএনও বা ডিসিরা অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। কারণ হলো পরে ওই কর্মকর্তার পাশে যদি মন্ত্রণালয় না থাকে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে কোনো ব্যানারে আন্দোলন করলেই কর্মকর্তাদের উঠিয়ে আনা হয়েছে ফলে এখন কর্মকর্তারা পরিস্থিতি দেখছেন। এদিকে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব (তৎকালীন দুদক সচিব) মোখলেস উর রহমানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর ৪৪ সচিব ও ৯৫ ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করেছে জুলাই ঐক্য নামে একটি সংগঠন। এসব নিয়েও অস্বস্তি রয়েছে প্রশাসনে। তবে মোখলেস উর রহমানের নামে মামলার আবেদনে অনেকে ভিতরে ভিতরে বেশ খুশি। কারণ তিনি অন্য কর্মকর্তাদের কথা শোনেন না, এ কারণে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনে ব্যর্থতার জন্য অনেকটা প্রকাশ্যে তাঁকেই দায়ী করা হচ্ছে। এ কারণে মামলার আবেদন হওয়ায় প্রশাসনের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলেও অনেকেই খুশি। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, জনপ্রশাসন সচিবকে নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তিতে রয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

সূত্র জানায়, প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে নানা আন্দোলনের কারণে প্রশাসন স্বস্তিতে নেই। পাশাপাশি বেশ কিছুদিন প্রশাসন বাদে বাকি ২৫ ক্যাডারদের আন্দোলন স্থগিত থাকলেও তাদের দাবিদাওয়ার সুরাহা না হওয়ায় আবার নানা কর্মসূচি দিচ্ছে। এতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাঝে নানা উৎকণ্ঠা তৈরি হচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর ৪৪ সচিব ও ৯৫ ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করে জুলাই ঐক্য নামে সংগঠনটি এসব আমলা ও ম্যাজিস্ট্রেটকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে। ৩১ মের মধ্যে দাবি মানা না হলে মার্চ টু সচিবালয় কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটি নিয়ে প্রশাসনের ভিতরে ভিতরে নানা আলোচনা চলছে। সব মিলিয়ে প্রশাসনে নতুন করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আবদুল আওয়াল বলেছেন, কাজ সততার সঙ্গে করতে হবে। ঢালাওভাবে দোসর ট্যাগ না লাগিয়ে বরং সৎ অফিসারদের উৎসাহ দিতে হবে। এদিকে বিগত নির্বাচনে রাতের ভোটের অভিযোগে অনেক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর ও ওএসডি করা হয়েছে। এতে আগামী নির্বাচন নিয়ে অনেক মাঠ কর্মকর্তার রয়েছে দুশ্চিন্তা। অনেকে নির্বাচনের আগেই মাঠ থেকে উঠে আসতে চাচ্ছেন বলে জানা গেছে।