
জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় কিছুতেই টিকছে না সনাতন ডিজাইনের বেড়িবাঁধ। ফলে বছরকে বছর সমুদ্রের ভাঙনে ছোট থেকে অতি ছোট হয়ে যাচ্ছে সমুদ্রবুকে জেগে থাকা দ্বীপ কুতুবদিয়া। তাই এই দ্বীপকে জলবায়ুর ঝুঁকিমুক্ত করতে আধুনিক ডিজাইনের ‘সুপার ডাইক বেড়িবাঁধের’ দাবি ২ লাখ দ্বীপবাসীর।
উত্তর-দক্ষিণে লম্বা অনেকটা দেখতে লাউয়ের মতো এই দ্বীপের উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমে গভীর বঙ্গোপসাগর এবং পূর্বে দীর্ঘ ৩৫ কিলোমিটার লম্বা কুতুবদিয়া চ্যানেল। প্রায় ৬০০ বছর আগে সৃষ্ট এই দ্বীপের আয়তন ছিল প্রায় ২শ’ বর্গকিলোমিটার। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিগত ১৯৬০ সালের পর থেকে এই দ্বীপের ওপর বয়ে যায় অন্তত বড়-ছোট প্রায় দেড়শ’ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে করে বিলীন হয়ে যায় প্রায় কয়েক হাজার একর আবাদি জমি, বসতবাড়ি ও দ্বীপ ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় অনেক মানুষ।
আবার প্রতি বছর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বরাদ্দে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে সমুদ্র সাইডে জায়গা ছেড়ে দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় ভূমিহীন হয়ে পড়েছে হাজার-হাজার মানুষ। ভাঙন ও অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণের কারণে বর্তমানে দ্বীপের আয়তন দাঁড়িয়েছে ২৭ বর্গকিলোমিটারে।
এই দ্বীপের প্রায় সোয়া কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে চট্টগ্রাম বাঁশখালীর গন্ডামারা এলাকায় স্থাপিত কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ২ কিলোমিটার পূর্বে পেকুয়া উপজেলায় স্থাপিত দেশের প্রধান সাবমেরিন নৌ-ঘাঁটি। এ ছাড়া দ্বীপের আড়াই কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও বাস্তবায়নাধীন দেশের প্রধান গভীর সমুদ্রবন্দর। ভূ-গর্ভের অনুত্তোলিত প্রাকৃতিক গ্যাস, লবণ, মাছ সর্বোপরি পর্যটনের অপার সম্ভাবনার এই দ্বীপ সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়বে উপকূলসহ সরকারের বিশাল এই অর্থনৈতিক জোন।
তাই জরুরি ভিত্তিতে আপৎকালীন বাঁধ দিয়ে অত্যাসন্ন বর্ষায় জনবসতি ও চাষাবাদ রক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে দ্বীপের চারপাশে আধুনিক ডিজাইনের ‘সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ’ দিয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ কুতুবদিয়াকে রক্ষা করার দাবি জানিয়েছেন কুতুবদিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আ ন ম শহীদ উদ্দিন ছোটন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে বেড়িবাঁধের চিত্র পরিদর্শন করে গেছেন বলে জানিয়েছেন উপসহকারী প্রকৌশলী এলটন চাকমা।