Image description
মাঠ প্রশাসন থেকে আপ্যায়ন ও গিফট প্রত্যাশা না করার নির্দেশ

সারা দেশে ৪৫টি কার্যালয়ের মাধ্যমে দুর্নীতি দমনে কাজ করে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এর মধ্যে প্রধান কার্যালয় ছাড়া বিভাগীয় কার্যালয় রয়েছে ৮টি। বাকি ৩৬টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে চলছে প্রতিষ্ঠানটির কাজ। বাকি জেলাগুলোতেও কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সাতক্ষীরা, নরসিংদী এবং বান্দরবান জেলা প্রশাসকের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ এই সিদ্ধান্ত নেয়। এ ছাড়াও সম্মেলনে অফিস প্রধানরা মাঠপর্যায়ে পরিদর্শনে গেলে আপ্যায়ন ও গিফট প্রত্যাশা করেন এই মনোভাব থেকে সরে আসার নির্দেশনাও দেয়া হয় সম্মেলন থেকে। মন্ত্রী পরিষদ সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অষ্টম অধিবেশনে দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পর্কিত বিষয়াবলিতে আলোচনা শেষে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) হাফিজ আহসান ফরিদ।

দুর্নীতি দমন কমিশন সচিব বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এ ১৭টি ধারার মধ্যে বর্তমানে ১১টি ধারার কার্যক্রম আছে। তন্মধ্যে ৬টি প্রতিরোধমূলক ও ৫টি দমন মূলক। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুর্নীতি দমন কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে দুর্নীতি বিষয়ে বক্তব্য রাখা যেতে পারে। জেলাপর্যায়ে দুদক কার্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে। বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি দমনবিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা যেতে পারে।

দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, দুদকে অভিযোগকৃত দুর্নীতির মধ্যে ৯৫% অতীতে সংঘটিত হয়। বর্তমানে দুর্নীতি হচ্ছে এ রকম অভিযোগ ৫%। অতীত দুর্নীতির ওপর বেশি গুরুত্ব না দিয়ে বর্তমান দুর্নীতি রোধে বেশি গুরুত্ব দেয়া যেতে পারে। অফিস প্রধানরা মাঠপর্যায়ে পরিদর্শনে গেলে আপ্যায়ন এবং গিফট প্রত্যাশা করেন। এই মনোভাব প্রত্যাহার করতে হবে। জেলাপর্যায়ে কারাপশন প্রিভেনশন ইনডেক্স (সিপিআই) তৈরি করতে পারেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, অফিস প্রধানের দায়িত্ব পেশাগতভাবে আওতাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা। রাজনীতিবিদ, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ফাঁদে না পড়ে আইনগতভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ভূমি অফিসে অনেক অভিযোগ আছে। ভূমি অফিসের দুর্নীতি দমন করতে হবে।

গত ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকগণ প্রধান বিচারপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ, সদয় নির্দেশনা গ্রহণ ও মতবিনিময় করেন। এবার মোট অধিবেশন ৩৪টি কার্য-অধিবেশন ৩০টি। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত ১ হাজার ২৪৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩৫৪টি প্রস্তাব কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলোতে জনসেবা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি, জনদুর্ভোগ হ্রাস করা, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটনের বিকাশ, আইন-কানুন বা বিধিমালা সংশোধন, জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়েছে।

ডিসি সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল, ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদারকরণ; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম; স্থানীয়পর্যায়ে কর্ম সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্নেন্স; শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ; পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ; ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়।