
তৃতীয় স্ত্রী রিয়া মনিকে তালাক দেওয়ায় প্রতিহিংসাবশত অন্য নারীকে দিয়ে আদালতে ধর্ষণ, নির্যাতন ও গর্ভপাত করানোর অভিযোগে মামলা করিয়েছেন বলে দাবি করেছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়া সদরের এরুলিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।
হিরো আলম দাবি করেন, ‘ধর্ষণ মামলা শুধু করলেই হবে না। প্রমাণ করতে হবে। আইন চায় সাক্ষ্যপ্রমাণ। তিনি (বাদী নারী) যদি ধর্ষণ প্রমাণ করতে পারেন, তবে অবশ্যই তাঁকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেব। বিয়ের কাগজপত্র দেখাতে পারলে, বাচ্চা নষ্ট করা এবং শারীরিক সম্পর্ক থাকার বিষয়টি প্রমাণ করতে পারলে অবশ্যই শাস্তি মেনে নেব।’
সংবাদ সম্মেলনে হিরো আলম দাবি করেন, ‘নিজের ভুলের কারণে রিয়া মনির ডিভোর্স হয়েছে। ডিভোর্স দেওয়ার পর আমাকে আটকানোর মতো কোনো তথ্যপ্রমাণ রিয়া মনির কাছে নেই। আমার বিরুদ্ধে মামলাও করতে পারছে না। তালাকের কাগজ বুঝিয়ে দিছি। এখন মাঝখান থেকে রিয়া মনি অন্য মেয়েকে নিয়ে খেলছে, গুজব ছড়াচ্ছে। চালবাজি করে রিয়া মনি আমাকে হয়রানি করতে অন্য একটি মেয়েকে দিয়ে খেলা খেলছে, তাকে দিয়ে ধর্ষণ মামলা দিয়েছে। রিয়া মনি ও ওই মেয়ে দুজন মিলে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করেছে। সেখানে বিয়ের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ওই মেয়ে বিয়ের কাগজপত্র দেখাতে পারলে তাকে বউ হিসেবে মেনে নেব। ধর্ষণ প্রমাণ করতে পারলে আইনে যে শাস্তি হয়, মাথা পেতে নেব। আর আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে রিয়া মনি এবং ওই নারীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব।’
বিয়ের প্রতিশ্রুতি ও নায়িকা বানানোর আশ্বাসে ধর্ষণ, নির্যাতন ও গর্ভপাত করানোর অভিযোগে গত রোববার এক নারী বাদী হয়ে বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। আদালতের বিচারক মো. আনোয়ারুল হক বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলার অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও বগুড়ার পুলিশ সুপারকে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন হিরো আলমের শিশুকন্যা, সহকারী আল আমিন, মালেক, মালেকের স্ত্রী জেরিন এবং আহসান হাবিব।
মামলার আরজি অনুযায়ী, হিরো আলম বিয়ের প্রতিশ্রুতি ও নায়িকা বানানোর আশ্বাস দিয়ে একাধিকবার বাদী ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। পরে এক মৌলভি ডেকে কবুল পড়িয়ে তাঁকে বিয়ে করার কথা বলে বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করেন। একপর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে গত ১৮ এপ্রিল বগুড়ার নিজ বাড়িতে নিয়ে গর্ভপাতের জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় ২১ এপ্রিল হিরো আলমসহ অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁকে মারধর করেন। এতে গুরুতর রক্তক্ষরণ হলে ওই নারীকে শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর গর্ভপাত ঘটে। পরবর্তী সময়ে ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, সিনেমা তৈরির কথা বলে হিরো আলম ওই নারীর কাছ থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ধার নেন।
হিরো আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সাংবাদিকদের মাধ্যমে আদালতে ধর্ষণ মামলা দায়েরের বিষয়টি জানতে পেরে আজ সকালে নথি তুলেছি। আইনের প্রতি আস্থা আছে। পিবিআই যেন অবশ্যই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে, সেই দাবি জানাচ্ছি।
হিরো আলম দাবি করেন, ‘ওই নারী (মামলার বাদী) মিডিয়ার কেউ নয়। তার স্বামী আছে। দুটি সন্তান আছে। স্বামীর সঙ্গে যখন তার ঝামেলা হয়, তখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পরে আমার বাড়িতে দুই মাস ভাড়া ছিল। সেই সুবাদে আমার বাবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হয়। ৩২ দিন হাসপাতালে তিনি ঢাকায় বাবার সেবা করেছে। আমার মেয়ের সঙ্গেও ভালো বন্ধুত্ব হয়।’
হিরো আলম বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও রিয়া মনিকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ওই নারী দাবি করেছিল, হিরো আলম নাকি তাঁকে বিয়ে করেছে। কিন্তু বিয়ের কাবিন দেখাতে পারেননি। ১০১ টাকা নাকি দেনমোহর। এসব গুজবের পেছনে আছে রিয়া মনি। রিয়া মনি আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছে, তুই ১০টা মেয়েকে নিয়ে নাচগান করবি, তোর ব্যবস্থা করতেছি। তোকে চৌদ্দ শিকের ভেতর রাখব। কিন্তু আমাকে আটকানোর মতো তথ্যপ্রমাণ রিয়া মনির কাছে নেই।’
নায়িকা বানানোর কথা বলে ওই নারীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে হিরো আলম বলেন, ‘ওই নারী মিডিয়ার কেউ না। ১৫ লাখ টাকা সে কোথায় পাবে? এত টাকা থাকলে দুই মাস আমার বাড়িতে ভাড়া থাকত না।’