Image description

৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ পেলেও নিয়োগ পাচ্ছেন না ২২৭ জন প্রার্থী। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) পরস্পরবিরোধী প্রতিবেদনের কারণে আটকে আছে তাঁদের ভাগ্য।

সরকারি নিয়োগের প্রক্রিয়া অনুযায়ী, প্রার্থীদের প্রাক-চরিত্র যাচাই শেষে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির কথা থাকলেও এই ২২৭ জনের ক্ষেত্রে তা এখনো হয়নি। এ অবস্থায় নিয়োগের দাবিতে গত ২৯ এপ্রিল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন করছেন বঞ্চিত প্রার্থীরা।গতকাল মঙ্গলবার ছিল অনশনের অষ্টম দিন। এরই মধ্যে অন্তত পাঁচজন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাদ পড়া ২২৭ জনের মধ্যে ১৯৫ জনের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা, অথচ তাঁদের বেশির ভাগের ব্যাপারে আরেক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে কোনো আপত্তি নেই। অন্যদিকে দ্বিতীয় সংস্থার প্রতিবেদনে ৭৭ জনের বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য রয়েছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা যাচ্ছে না।

পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে চার মাস আগে ৪৩তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্তদের একটি বড় অংশ চাকরিতে যোগ দিলেও এ ২২৭ জনের চাকরিতে যোগদানে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক বলেন, বাদ পড়া প্রার্থীদের নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে কবে নাগাদ প্রজ্ঞাপন জারি হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ১৭১ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে এবং তা প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেননি।

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন চলছে অষ্টম দিনে। নিয়োগ-প্রজ্ঞাপনের দাবিতে ৪৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত কিন্তু নিয়োগ না পাওয়া ২২৭ জন প্রার্থী অনশন করছেন সেখানে। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অন্তত পাঁচজন। চার মাস ধরে তাঁরা চাকরির অপেক্ষায়। অথচ নিশ্চিত কোনো আশ্বাস নেই সরকারের পক্ষ থেকে।

বঞ্চিতদের একজন মাসুমা আক্তার মিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের বন্ধুরা চাকরিতে যোগ দিয়ে পরিবার নিয়ে আনন্দে দিন কাটাচ্ছে। আর আমরা চার মাস ধরে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছি। খাওয়া, ঘুম, স্বাভাবিক জীবনসব কিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। সরকার যদি আমাদের নিয়োগ দিতে না চায়, তাহলে পরিষ্কারভাবে জানাক। অন্তত এই অনিশ্চয়তার অবসান হোক। সরকারের কাছে জানতে চাইআমরা কী অপরাধ করেছি? কেন আমাদের নিয়ে কেউ কথা বলছে না?

বক্তব্যে উঠে আসে হতাশা ও ক্ষোভনিয়োগের আশায় কেউ নতুন চাকরিতে যোগ দেননি, কেউ বা আগের চাকরিও ছেড়েছেন। অথচ এখন বলা হচ্ছে, ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনে সমস্যা আছে। কিন্তু তাঁরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন, কোনো অপরাধেও জড়িত নন বলে দাবি তাঁদের।

একাধিক প্রার্থী বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে আমাদের ভাগ্যে বরাদ্দ শুধু হতাশা। আমাদের পরিবারও মানসিক চাপে আছে। দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি না হলে অনেকেই আর্থিক সংকটে পড়বেন।

গত ১০ জানুয়ারি বাদ পড়া প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেছিলেন, ফৌজদারি অপরাধে জড়িত না থাকলে বাদ পড়া ২২৭ জনই নিয়োগ পাবেন। কিন্তু এখনো তা কার্যকর হয়নি।

২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসের প্রথম প্রজ্ঞাপনে দুই হাজার ৬৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাদ পড়েন ৯৯ জন। পরে ৩০ ডিসেম্বর নতুন প্রজ্ঞাপনে আরো ১৬৮ জন বাদ যান। সব মিলিয়ে ২৬৭ জনের চাকরি আটকে যায়।

এরপর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২২৭ জনের প্রাক-চরিত্র যাচাইয়ে বিরূপ মন্তব্য পাওয়া গেছে। এনএসআই ও ডিজিএফআইএই দুই সংস্থার তথ্য আলাদা হওয়ায় জটিলতা আরো বেড়ে যায়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগের বিরুদ্ধেই ফৌজদারি অপরাধে মামলা নেই। তবে এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কবে নাগাদ নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হবে।