
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ভারতের সঙ্গে তাঁদের দেশের এই শুল্কযুদ্ধ সাময়িক। ফক্স বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সম্পর্ক খুবই ভালো। কিছুদিনের মধ্যেই সব মিটে যেতে পারে।
এই আশাবাদ সত্ত্বেও ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যা করেছেন, তা ভারতের কাছে ‘ওয়াক আপ কল’ বা ঘুম থেকে জেগে ওঠার বার্তা। তিনি বলেন, ভারতের আর কখনো কোনো এক দেশের প্রতি অতিনির্ভর হওয়া উচিত হবে না।
সর্বভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রঘুরাম রাজন বলেন, আজকের ভূরাজনীতিতে বাণিজ্য ও লগ্নির মতো অর্থনৈতিক বিষয় আধিপত্য বিস্তারের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের কাছে এই শুল্কযুদ্ধ তাই ঘুম ভাঙানোর ঘন্টি।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের মতো ভারত সরকারের একাংশও মনে করে, শুল্ক নিয়ে যে সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসন নিয়েছে, তা সাময়িক। সরকারি সূত্রের বরাতে সংবাদ সংস্থা পিটিআই গতকাল বুধবার রাতে জানায়, জটিলতা কাটানোর জন্য দুই দেশের মধ্যে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে। সাময়িক অসুবিধা সৃষ্টি হলেও আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ শিগগিরই খুলে যাবে বলে ভারতের ধারণা।
শঙ্কা দূর করতে সরকার ইতিমধ্যেই কিছু কিছু ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। বস্ত্র ও পোশাকশিল্পকে কিছুটা স্বস্তি দিতে কেন্দ্রীয় সরকার তুলার আমদানি শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। ১৮ আগস্ট সরকারিভাবে ওই ছাড় দেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। মেয়াদ ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
তবে গতকাল সেই মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে রপ্তানিকারকদের কিছুটা সুরাহা হবে। ভারত ২০২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ২০০ কোটি ডলারের বেশি বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানি করেছিল। ২০২৫ সালে এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারের মতো।
গয়না রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজারও যুক্তরাষ্ট্র। রাজস্থানের জয়পুর হলো গয়না রপ্তানির সবচেয়ে বড় কেন্দ্র। শুধু এখান থেকেই বছরে গয়না রপ্তানি হয় ১৮ হাজার কোটি রুপির। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি রুপি। বড়দিনের বরাত পাওয়ার সময় এখনই। কিন্তু এখনো যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো অর্ডার আসেনি বলে জানিয়েছেন জয়পুর জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক অলোক সোনখিয়া।
ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ অর্থবছরে ২৪০ কোটি ডলারের চিংড়ি মাছ রপ্তানি হয়েছিল। এটা মোট চিংড়ি রপ্তানির ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ। রত্ন ও গয়না রপ্তানি হয়েছিল এক হাজার কোটি ডলারের। বস্ত্র রপ্তানির পরিমাণও ছিল এক হাজার কোটি ডলার।
মোট বস্ত্র রপ্তানির ৩৫ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। ওই দেশে গালিচা বা কার্পেট রপ্তানি হয়েছিল ১২০ কোটি ডলার। নতুন বাজার ধরতে ভারত এখন যুক্তরাজ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের ৪০টি দেশ চিহ্নিত করেছে। এসব দেশে ঢালাও প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।