Image description

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরাইলি সামরিক হামলা এবং মানবিক সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। এর মধ্যেই চীন জাতিসংঘে সরাসরি আহবান জানিয়েছে- ইসরাইল যেন গাজায় ‘বিপজ্জনক’ অভিযান বন্ধ করে। একই সঙ্গে তারা আরব দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার কথাও বলেছে, যাতে ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি দীর্ঘস্থায়ী ও ন্যায়সংগত সমাধান সম্ভব হয়। বুধবার (৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

চলতি আগস্টের প্রথম সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে এই বার্তা দেন চীনের জাতিসংঘে উপস্থায়ী প্রতিনিধি গেং শুয়াং। এই সময় তিনি বলেন, ইসরাইলের সম্ভাব্য গাজা পুনর্দখলের সিদ্ধান্ত শুধু বিপজ্জনকই নয়, এতে পুরো অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়বে। এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সাম্প্রতিক বৈঠকে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে গাজা সম্পূর্ণ দখলের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। খবরে প্রকাশ, গাজা পুরোপুরি পুনর্দখল ইসরাইলের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হবে, যেখানে হয়তো জিম্মি বন্দীদেরও রাখা হয়েছেÑএমন এলাকাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে এতে মানবিক বিপর্যয় গভীরতর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, সীমিত ত্রাণ সংগ্রহের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে বহু মানুষ নিহত এবং আহত হচ্ছেন। একই সঙ্গে দুর্ভিক্ষ, অপুষ্টি ও রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুদের মৃত্যুর হার বেড়েছে। ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজার পাঁচ বছরের নিচের প্রতিটি শিশু এখন মারাত্মক পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে। এদের মধ্যে হাজার হাজার শিশু ইতিমধ্যেই ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট মালনিউট্রিশন’-এ আক্রান্ত।

জাতিসংঘে বক্তব্য দিতে গিয়ে গেং শুয়াং বলেন, “ইসরাইলকে এখনই এই বিপজ্জনক পদক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই ফিলিস্তিন সংকটের একমাত্র টেকসই পথ।” চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার উদ্ধৃতি অনুযায়ী, তিনি একটি বাধ্যতামূলক ও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়েছেন। চীনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত ঝাই জুন বেইজিংয়ে আরব রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করে ফিলিস্তিন সংকটের স্থায়ী সমাধানে আরব ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, “ফিলিস্তিন সংকট এখন এক সংকটময় মোড়ে পৌঁছেছে।”

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজার পুনর্দখলের পরিকল্পনাকে ঘিরে কড়া নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছে। তারা এটিকে শুধু চাপে রাখার কৌশল নয়, বরং বাস্তবায়নের চেষ্টাও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে। একই সময়ে, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও মাল্টা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায়। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনও তা দেয়নি।