
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় গ্রেপ্তার রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে কলিমুল্লাহসহ পাঁচজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন। গতকাল ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন। এদিন শুনানিতে ড. কলিমুল্লাহ আদালতকে বলেন, ‘আজ সকালে আকস্মিকভাবে নাশতার পর ডিবি পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। আমি আপত্তি করিনি।’ কলিমুল্লাহকে উদ্দেশ্য করে আদালতের বিচারক বলেন, কবরেও একা যেতে হবে, দুর্নীতি করলে জেলখানায়ও একা যেতে হবে। সঙ্গে কেউ যাবে না। দুর্নীতি যারা করছেন, তারা জেলে পচছেন। আর দুর্নীতির টাকায় আত্মীয়রা অনেকে বিদেশ ভ্রমণে মজা করছেন।’
বিচারক আরও বলেন, ‘চাকরিকালে আপনি তো ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিনই ঢাকায় ছিলেন।’ জবাবে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বলেন, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি অন্যায় আবদার করতেন। তার কারণে ক্যাম্পাসে যেতাম না। আমি এ আবদারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করি। তিনি রাগান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়িয়েছেন। এ সময় বিচারক বলেন, ‘আপনি ও আপনার মা একই নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন?’ জবাবে কলিমুল্লাহ বলেন, তিনি (তার মা) মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডিজি ছিলেন। এজন্য সরকার নিয়োগ বোর্ডে তাকে সদস্য করে। এ সময় বিচারক বলেন, আপনি কি (একসঙ্গে) ভিসি, বিভাগীয় প্রধান ও ডিন ছিলেন?’ তখন তিনি বলেন, ‘আমিই প্রথম না। আমার আগের ভিসির ধারাবাহিকতা রক্ষায় এসব দায়িত্বে ছিলাম। বিশেষ পরিস্থিতিতে এ দায়িত্বে থাকতে হয়েছে।’ বিচারক জানতে চান, চার বছরে উন্নয়ন খাতে কোনো টাকা পেয়েছেন?’ এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার আগের ভিসি নূর নবীর সময় ৯৯ কোটি টাকার কাজ চলমান ছিল। আমি দায়িত্ব নিয়ে কাজ চলমান রেখেছি। আর নকশা পরিবর্তনের অভিযোগ আগের ভিসির বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটাই উন্নয়ন প্রজেক্ট। আমি এসে নিয়োগ বাণিজ্য, চাকরি বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছি।’
তখন বিচারক বলেন, নিয়োগ বাণিজ্য, চাকরি বাণিজ্য আপনার বিরুদ্ধেই। এ সময় কলিমুল্লাহ বলেন, নো, নেভার, নেভার। এ সময় দুদকের কৌঁসুলি দেলোয়ার জাহান রুমি বলেন, উনি ১৭ ঘণ্টা কাজ করেছেন। আমরা তো তাকে টকশোতে দেখেছি। তখন কলিমুল্লাহ বলেন, সেটা তো রাতে।
বিচারক বলেন, অভিযোগ আগে তদন্ত হোক। আপনি কী করেছেন, সেটা আলিমুল গায়েব জানেন, আপনি জানেন। কিছুদিন পর দুদক জানবে। এরপর মানুষ জানবে।’ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ও এ কে এম নূর-উন-নবীসহ পাঁচজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এ আদেশ দেওয়া হয়।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অন্যরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদার মো. আ. সালাম বাচ্চু এবং এম এম হাবিবুর রহমান।