Image description

অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় গত মঙ্গলবার জর্ডানের সামরিক বাহিনীর বিমান থেকে ত্রাণ সহায়তা ফেলার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন গার্ডিয়ানের সাংবাদিক লরেনজো টোনডো ও ফটো সাংবাদিক অ্যালেসিও মামো। বিমান থেকেই তারা পর্যবেক্ষণ করে এসেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা। ফিরে এসে জানিয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতা।

আকাশ থেকে গাজাকে দেখে যেন প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ বলে মনে হয়। যেন শত শত বছর অজানা থাকার পর আকস্মিকভাবে তার অনুসন্ধান পাওয়া গেছে। জোড়াতালি দেওয়া কংক্রিটের কাঠামো ও ধসে পড়া দেয়াল, বিশাল বিশাল গর্তে দেবে যাওয়া মহল্লা এবং ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে আছে চারপাশে। শহরের স্থাপনা, রাস্তা সবকিছুই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার গার্ডিয়ানের দলকে অনুমতি দেওয়া হয় জর্দান সামরিক বাহিনীর বিমানে করে ত্রাণ সহায়তা ফেলার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের। গত সপ্তাহে ইসরাইল বিভিন্ন দেশের বিমান থেকে গাজায় ত্রাণ ফেলার কার্যক্রমে সহায়তার ঘোষণা করেছিল। ইসরাইলি আগ্রাসনের জেরে খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটের ফলে গাজায় ছড়িয়ে পড়া দুর্ভিক্ষ রোধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে এ ঘোষণা দেয় তেলআবিব।

এ অনুমতির মাধ্যমে গার্ডিয়ান শুধু গাজায় তিন টন ত্রাণ সহায়তা ফেলার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেনি, একই সঙ্গে আকাশ থেকে গাজাকে প্রত্যক্ষ করার বিরল সুযোগ পেয়েছে। গাজার বিপুল বাসিন্দার তুলনায় এ ত্রাণ সরবরাহ অবশ্য নিতান্তই অপ্রতুল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বিদেশি যে কোনো সাংবাদিকের জন্য গাজায় প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল।

দুই হাজার ফুট উচ্চতা থেকেও গাজায় আগ্রাসনের গভীরতা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। আগ্রাসনের ক্ষত পুরো গাজাতেই ছড়িয়ে রয়েছে।

ইসরাইলি হামলার স্থানগুলো থেকেই জীবনের বাজি রেখে খবর দিচ্ছেন গাজার সাহসী ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরা। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারানো ২৩০ জনের বেশি সাংবাদিক গাজার কবরস্থানগুলোতে শুয়ে আছেন।

উড্ডয়নের দেড় ঘণ্টা পর উত্তর গাজা ও গাজার শহরের ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে বিমান চলে আসে। পুরো অঞ্চলই এখন ধসে পড়া কংক্রিট ও ধুলায় ধূসরিত জনশূন্য স্থানে পরিণত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনাগুলো। গাজার মহল্লা ও সড়ক পুরোপুরি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

দূর থেকে গাজার কোনো বাসিন্দাকে দেখা অবশ্য অসম্ভব। প্রায় ৪০০ মিলিমিটার ক্যামেরার লেন্স দিয়েই স্থানীয়দের দেখা যায়, যারা ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ছিন্নভিন্ন ভূখণ্ডে তারাই একমাত্র জীবনের চিহ্ন।

বিমান যখন নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে পৌঁছাল, তখন বিমান থেকে ত্রাণ সহায়তা ফেলা শুরু হয়।

জর্ডান সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুসারে, মঙ্গলবারের সহায়তা নিয়ে তারা অন্তত ১৪০টি ত্রাণ সহায়তা প্রদানের অভিযান চালিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলে একত্রে তাদের ত্রাণ সহায়তা অভিযানের সংখ্যা ২৯৩টি। সব মিলিয়ে ২৭ জুলাই থেকে গাজায় তারা ৩২৫ টন খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন।

তবে এ সহায়তাও অপ্রতুল। মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, দ্রুতই পুরো গাজায় অনাহার ছড়িয়ে পড়ছে। ইসরাইলের তথ্য অনুসারে, ২১ মাসের মধ্যে ১০৪ দিন বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ সহায়তায় পুরো গাজার মাত্র চারদিনের আহারের ব্যবস্থা হয়েছে।

তবে এর ভয়াবহ আরো দিক রয়েছে। পানিতে পড়া ত্রাণ নিতে গিয়ে ডুবে অন্তত ১২ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া সরাসরি ত্রাণ সহায়তার নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন।

আকাশ থেকে গাজাকে অনেক ছোট মন হয়। ছোট একটুখানি ভূমি যা বিশ্বের ভয়াবহতম আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। লন্ডন থেকে চারগুণ ছোট এ ভূখণ্ড। মধ্যপ্রাচ্যের এক কোনায় ক্ষুদ্র এ ভূখণ্ডে ইসরাইলি বাহিনী ৬০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। এছাড়া হামলায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়ে আছে আরো হাজার হাজার বাসিন্দা, যাদের এখনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।