
যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১৭ বছর পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই)এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি।
১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোর আলবুকারকিতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের একটি পারমাণবিক অস্ত্রঘাঁটি থেকে একটি সামরিক পরিবহনবিমান যুক্তরাজ্যের লেকেনহিথ ঘাঁটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও উন্মুক্ত উৎসের তথ্যমতে, বিমানটি নিজের পরিচয় এবং অবস্থান প্রকাশ করে উড়েছিল, যা সচরাচর পারমাণবিক অস্ত্র পরিবহনের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
জানা গেছে, বিমানটি ছিল ‘প্রধান পারমাণবিক পরিবহন ইউনিট’-এর অংশ, যা সাধারণত পারমাণবিক অস্ত্র পরিবহনেই ব্যবহৃত হয়। এটি কোনো তৃতীয় দেশের আকাশসীমা অতিক্রম না করেই সরাসরি যুক্তরাজ্যে পৌঁছে যায়।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, উভয় দেশই সাধারণত তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কোথায় রাখা হয়েছে তা প্রকাশ করে না। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট দলিলে দেখা গেছে, লেকেনহিথ ঘাঁটিতে পারমাণবিক অস্ত্র সুরক্ষার জন্য ‘নিরাপত্তা অবকাঠামো উন্নয়ন’-এর নামে বহু বছর ধরে কোটি কোটি ডলারের কাজ চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অস্ত্রগুলো হতে পারে নতুন ধরনের বি৬১-১২ পারমাণবিক বোমা, যেগুলো তীব্রতা অনুযায়ী সামঞ্জস্যযোগ্য এবং অত্যন্ত নির্ভুলভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ঠান্ডা যুদ্ধের পর এই প্রথম ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা বাড়ানো হলো।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পারমাণবিক তথ্য প্রকল্প পরিচালনাকারী হ্যান্স ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘জোরালো ইঙ্গিত রয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র আবারও যুক্তরাজ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ফিরিয়ে এনেছে।’
অন্যদিকে, ইউরোপভিত্তিক বিশ্লেষক উইলিয়াম আলবেরকে মনে করেন, ট্রান্সপন্ডার (পরিচয় সংকেত) চালু রেখে উড্ডয়ন করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে দেখাতে চায় যে, তারা ইউরোপে নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতা কমাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ‘এটি কেবল একটি শুরু। ন্যাটোর প্রতিরোধ নীতিকে আরও শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্র আরও পদক্ষেপ নিতে পারে। পারমাণবিক অস্ত্র যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনা নিঃসন্দেহে বড় একটি পদক্ষেপ।’
বিশ্লেষক সিদ্ধার্থ কাউশাল মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ইউরোপে আরও নমনীয় পারমাণবিক সক্ষমতা গড়ে তুলছে, যা রাশিয়ার থিয়েটার-স্তরের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যাগত শ্রেষ্ঠত্বকে ভারসাম্য আনতে সহায়তা করবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও পুতিনের প্রতি কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেছেন। তিনি ইউক্রেনকে আরও ক্ষেপণাস্ত্র সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং ৫০ দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে রাশিয়ার ওপর নতুন আর্থিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে, যুক্তরাজ্যও অন্তত এক ডজন নতুন মার্কিন নির্মিত যুদ্ধবিমান কিনছে, যেগুলো এই নতুন বি৬১-১২ বোমা বহন করতে সক্ষম। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ন্যাটোর পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপে মোতায়েন করা অস্ত্র ও মিত্রদের সহায়তা নির্ভর করে।’
এই সিদ্ধান্তের ফলে ঠান্ডা যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ রয়্যাল বিমানবাহিনী পারমাণবিক দায়িত্বে ফিরে আসছে।
বি৬১-১২ ধরনের বোমার শক্তি ০.৩ কিলোটন থেকে শুরু করে ৫০ কিলোটন পর্যন্ত পরিবর্তনযোগ্য। এগুলো নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে পারে এবং প্রয়োজনে জনবহুল এলাকাতেও ব্যবহারযোগ্য।
হ্যান্স ক্রিস্টেনসেন জানিয়েছেন, এই অস্ত্র এখন ইউরোপে ছয়টি ন্যাটো দেশের সাতটি ঘাঁটিতে সম্পূর্ণ মোতায়েন হয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র—তা অন্য দেশের মাটিতে থাকলেও—ব্যবহার করা যাবে কেবল মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরাসরি অনুমোদনের পরই।