Image description

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হত্যা , গুম , হামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয় । এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে সারা দেশে এখনো বিশেষ অভিযানে প্রতিদিন এক - দেড় হাজার আসামিকে গ্রেপ্তার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী । এসব আসামিকে পাঠানো হচ্ছে কারাগারে । এতে বন্দীদের চাপ বাড়ছে কারাগারে । ফলে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দী রয়েছে কারাগারে ।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের ৭০ টি কারাগারের বন্দী ধারণ- ক্ষমতা ৪৩ হাজার ১৫৭ জন । ১ জুলাই এসব কারাগারে বন্দী ছিল ৭২ হাজার ১০৫ জন । অর্থাৎ ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ বন্দী রয়েছে কারাগারগুলোতে । সবচেয়ে বেশি বন্দী রয়েছে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে । ৪ হাজার ৫৯০ জন ধারণক্ষমতার কারাগারটিতে বন্দী রয়েছে ৭ হাজার ৯৮৭ জন । গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র - জনতার ওপর হামলা, হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যসহ সাবেক সচিব, সাবেক বিচারপতি, সেনা ও নৌ কর্মকর্তা, পুলিশের কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ বন্দী থাকে । তবে সব কারাগারেই বন্দীর সংখ্যা বেশি, তা নয় । কোনো কোনো কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বন্দীর সংখ্যা কমও রয়েছে ।

মো . জান্নাত - উল ফরহাদ সহকারী কারা মহাপরিদর্শক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা , ব্যবসায়ী , সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা - কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে । এ ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ বিভিন্ন মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা । কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় , দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দীদের মধ্যে পুরুষ ৬৯ হাজার ৪৩৮ , নারী ২ হাজার ৬৬৭ জন । এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত বন্দী রয়েছে ১৮ হাজার ৪২৬ জন । এসবের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দী রয়েছে ২ হাজার ৬০২ জন । এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার ও সাজাপ্রাপ্ত , নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ও অন্যান্য সংগঠনের আসামিরাও কারাবন্দী হিসেবে রয়েছে ।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় , ঢাকা বিভাগে ১৮ টি কারাগার রয়েছে । এসব কারাগারে ১৩ হাজার ৫৮২ জন বন্দীকে জায়গা দেওয়ার কথা । কিন্তু বর্তমানে বন্দী রয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৮ জন । এর মধ্যে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন । সেখানে এখন রয়েছে ৭ হাজার ৯৮৭ জন । ২ হাজার ধারণক্ষমতার গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার - ২ - এ বন্দী রয়েছে ৩ হাজার ৩৬৩ জন । ১ হাজার ধারণক্ষমতার কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারেও দ্বিগুণ বন্দী রয়েছে । কারাগারটিতে বর্তমানে বন্দী ২ হাজার ৫৩২ জন । ৫৪০ জন ধারণক্ষমতার নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দী রয়েছে ১ হাজার ৩৩৫ জন । এ ছাড়া মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে ধারণক্ষমতার প্রায় তিন গুণ বন্দী রয়েছে । ২০০ জন ধারণক্ষমতার কারাগারটিতে বর্তমানে বন্দী রয়েছে ৫৪৫ জন ।

চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ টি কারাগার রয়েছে । এর মধ্যে দুটি কেন্দ্রীয় কারাগার । কারাগারগুলোর ৬ হাজার ৯৫০ জন ধারণক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে বন্দী রয়েছে ১৪ হাজার ৬৭২ জন । এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্দী রয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে । ১ হাজার ৮৫৩ জন ধারণক্ষমতার কারাগারটিতে তিন গুণ বেশি কারাবন্দী রয়েছে । কারাগারটিতে বন্দীর সংখ্যা বর্তমানে ৫ হাজার ১৪৭ জন । এ ছাড়া মাত্র ৮৩০ জন ধারণক্ষমতার কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দী রয়েছে ২ হাজার ৪৩৬ জন ।

রাজশাহী কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ১৭৯ জন । কারাগারগুলোতে বর্তমানে বন্দী রয়েছে ৯ হাজার ২২৭ জন । এর মধ্যে ধারণক্ষমতার দেড় গুণ বেশি কারাবন্দী রয়েছে বগুড়া জেলা কারাগারে । ৭২৩ জন ধারণক্ষমতার কারাগারটিতে বন্দী রয়েছে ১ হাজার ৭৩০ জন । বরিশাল বিভাগের ৬ টি কারাগারের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৯১৩ জন । বর্তমানে এই ছয়টি কারাগারে রয়েছে হাজার ৯১৩ জন বন্দী । ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ টি কারাগারের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৮০৩ জন হলেও বন্দী রয়েছে ৪ হাজার জন । খুলনা বিভাগের ১০ টি কারাগারে ৫ হাজার ৬৯ জন ধারণক্ষমতায় বন্দী রয়েছে ৬ হাজার ৫৭২ জন । সিলেট বিভাগের ৫ টি কারাগারে ৪ হাজার ৪৮২ জন ধারণক্ষমতার মধ্যে বন্দী রয়েছে ৪ হাজার ৫৪০ জন । রংপুর বিভাগের ৮ টি কারাগারের ধারণক্ষমতা ৫ হাজার ১৭৯ জন । বর্তমানে বন্দী ৪ হাজার ৮৪৫ জন ।

কারাগারগুলো বলছে , বন্দীর সংখ্যা বাড়লে জেলকোড অনুযায়ী কারাবন্দীদের সুযোগ - সুবিধায় ঘটতি পড়ে । ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি থাকায় বিভিন্ন রোগে ভোগে বন্দীরা । স্ক্যাবিস , হাড়ক্ষয়সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভোগে তারা । ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সহকারী সার্জন মো . মেহেদী হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন , কারাবন্দীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা যায় ত্বকের । স্ক্যাবিস ধরনের রোগে বেশি ভোগে তারা । এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে হাড়ের ক্ষয় , হার্টের রোগসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে । তবে কারা ব্যবস্থাপনায় বন্দীদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় । ধারণক্ষমতার চেয়ে কারাগারে বন্দীর সংখ্যা বেশি হওয়ার বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক মো . জান্নাত - উল ফরহাদ বলেন , বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আদালতের নির্দেশে কারাগারে রাখা হয় । কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ বন্দী থাকে । তবে সব কারাগারেই বন্দীর সংখ্যা বেশি , তা নয় । কোনো কোনো কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বন্দীর সংখ্যা কমও রয়েছে ।