Image description
 

সময়টা ২০১৮ সাল। ভালোবাসার টানে মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য মাইকেল হোয়াইট পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে। অনলাইনে পরিচয় হওয়া ইরানি নারী সামানেহ আব্বাসির সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে তিনি দেশটিতে পা রাখেন। তবে তার এ সফর শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে। প্রেমের পরিণতির বদলে তাকে আটক করা হয় এবং আনা হয় রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ।

ইরানি কর্তৃপক্ষ হোয়াইটের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে, তিনি দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন এবং কিছু ব্যক্তিগত ছবি অনলাইনে প্রকাশ করেছেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

 

গ্রেপ্তারের পর হোয়াইটকে রাখা হয় মাশহাদ শহরের একটি গোপন বন্দিশালায়। সেখানে তাকে মুখোমুখী হতে হয় দীর্ঘ জেরা ও মানসিক-শারীরিক নির্যাতনের। কারাগারের একঘেয়েমি, নিঃসঙ্গতা ও নিষ্ঠুর আচরণে তিনি একসময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এমনকি আত্মহত্যার চেষ্টা পর্যন্ত করেন।

 
 

কিছু সময় পর তাকে স্থানান্তর করা হয় ভয়ঙ্কর হিসেবে পরিচিত ভাকিলাবাদ কারাগারে, যেখানে দুর্ধর্ষ অপরাধীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক বন্দিদেরও রাখা হয়। এখানেই হোয়াইটের জীবনে আসে মোড় ঘোরানো এক ঘটনা- তার দেখা হয় মেহদি ওয়াতানখাহ নামের এক ইরানি রাজনৈতিক বন্দির সঙ্গে।

 

মেহদি ছিলেন এক তরুণ, যিনি নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও সরকারবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় কারাবরণ করেন। তিনি ইংরেজিতে দক্ষ ছিলেন, যা হোয়াইটের সঙ্গে তার যোগাযোগকে সহজ করে তোলে। হোয়াইট জানান, ‘মেহদিকে প্রথম দেখার পরই আমি বুঝেছিলাম, সে আলাদা। তার চোখে ছিল মানবতা, করুণা আর ছিল সাহস।’

দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। মেহদির সাহচর্যে হোয়াইট আবার বাঁচার আশায় বুক বাঁধেন। মেহদি তার অবস্থান সম্পর্কে হোয়াইটের পরিবারের কাছে তথ্য পৌঁছাতে চাইলেন। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি যোগাযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং হোয়াইটের পরিবারের সঙ্গে।

এই উদ্যোগই হোয়াইটের ভাগ্য পরিবর্তনের সূচনা করে। কারণ, এতদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র জানত না হোয়াইট ইরানে বন্দি আছেন।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময় কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন হোয়াইট। ইরানি কর্তৃপক্ষ তার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, বিশেষ করে একজন মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু হলে তার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া যে ভয়াবহ হতে পারে, তা বুঝতে পেরেছিল তারা। এ কারণেই হোয়াইটকে স্থানান্তর করা হয় তেহরানের একটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে।

পরে ওই বছরের ৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রে আটক থাকা ইরানি চিকিৎসক মাজিদ তাহেরির সঙ্গে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে হোয়াইটকে মুক্তি দেওয়া হয়। অবশেষে দুই বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান তিনি।

কারাগারে যার বন্ধুত্ব জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিল, সেই মেহদির প্রতিও হোয়াইট ছিলেন কৃতজ্ঞ। মুক্তির পর তিনি প্রতিশ্রুতি দেন- যেভাবেই হোক মেহদিকে নিরাপদ জীবনের সুযোগ করে দেবেন। তিনি নিজের যোগাযোগ ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে মেহদিকে মানবিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নিতে সক্ষম হন।

ইরান ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বর্তমানে মেহদি যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগো শহরে বসবাস করছেন এবং একজন পাইলট হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেছেন। নিজের অতীত স্মরণ করে মেহদি বলেন, ‘সবকিছু যেন এক ভয়ানক দুঃস্বপ্ন, তবে এমন দুঃস্বপ্ন, যা কখনো ভুলতে পারব না।’