Image description

নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে প্রায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে পর্যটন দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের বিভিন্ন অংশ। জোয়ারের আঘাতে ১২টি হোটেল-রিসোর্ট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে টানা চার দিন বন্ধ থাকার পর আবারও নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌযান (সার্ভিস ট্রলার) নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও ৭৭ জন যাত্রী নিয়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এর আগে বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে নৌপথটিতে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নৌ চলাচল শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, খাদ্য ও আটকে পড়া লোকজন নিয়ে দুটি ট্রলার গতকাল সেন্ট মার্টিন গেছে।

টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ বলেন, নিম্নচাপ ও অমাবস্যার কারণে সাগর উত্তাল ছিল। বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত কোনো নৌযান টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে চলাচল করেনি। টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া ঘাট থেকে এসবি রাফিয়া ও এসবি আশিক নামে দুটি ট্রলার সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। সেন্ট মার্টিনের জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানান, গত দুই দিনে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বড় বড় ঢেউ যেন তাণ্ডব চালিয়েছে। পাকা স্থাপনাসহ ১২টি হোটেল তছনছ হয়ে গেছে। উপড়ে পড়েছে নারিকেল গাছসহ বহু গাছপালা। ক্ষতিগ্রস্ত হোটেলগুলো হলো- হোটেল অবকাশ পর্যটন, নোনাজল বিচ রিসোর্ট, আটলান্টিক রিসোর্ট, বিচ ক্যাম্প রিসোর্ট, নিল হাওয়া বিচ রিসোর্ট, শান্তি নিকেতন বিচ রিসোর্ট, মেরিন বিচ রিসোর্ট, পাখি বাবা রিসোর্ট, সি-ভিউ রিসোর্ট, ড্রিমার্স প্যারাডাইস রিসোর্ট, সানডে বিচ রিসোর্ট ও প্রবাল রিসোর্ট।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১-৩ ফুট বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হওয়ায় দ্বীপের বিভিন্ন অংশের গাছপালা ভেঙে পড়েছে। লোকালয়ে জোয়ারের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এমন ভয়াবহতা এর আগে দেখেনি দ্বীপবাসী। ঢেউয়ের আঘাতে ১২টির মতো হোটেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেন্ট মার্টিনের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, বিচ-সংলগ্ন হোটেলেগুলো জোয়ারের পানির আঘাতে অধিকাংশ তলিয়ে গেছে। এবারের মতো এত ভাঙন আগে দেখিনি। আরেক বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, সেন্টমার্টিনে টেকসই বেড়িবাঁধের কোনো বিকল্প নেই। গত দুই দিনের জোয়ারের পানিতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সেন্টমার্টিনের চারপাশ। স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর আকাশ বলেন, জমিতে জোয়ারের লবণাক্ত পানি ঢুকে আমাদের ফসল নষ্ট হয়েছে। কৃষকরা দুশ্চিন্তায় আছেন। এ অবস্থায় কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। সেন্টমার্টিন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খান বলেন, টেকনাফ থেকে পণ্য না পৌঁছানোয় পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে। দ্রুত সি ট্রাক ও সি অ্যাম্বুলেন্স চালুর দাবি জানাচ্ছি।

৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবল নোয়াখালী শহর, দুর্ভোগ চরমে : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা তিন ঘণ্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে নোয়াখালী শহর আবারও পানিতে ডুবে গেছে। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এমন বৃষ্টিপাতে ডুবেছে নোয়াখালীর জেলার প্রধান সড়কের বিভিন্ন অংশসহ শহর ও অলিগলির রাস্তাঘাট। এমনকি অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িও পানিতে ডুবেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, ধীর গতিতে পানি নামার কারণে সড়কের পাশাপশি রাস্তাঘাট ও কিছু বাসাবাড়ি, জেলা শহরের সরকারি, আধাসরকারি অফিস, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশদ্বারেও পানি উঠে গেছে। এতে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এমন জলাদ্ধতায় নোয়াখালী পৌরবাসীসহ নিম্নাঞ্চলের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও চরমে পৌঁছেছে।

বেগমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা লাল মিয়া জানান, গত ২০ দিন ধরে জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়ন, হাজীপুর ইউনিয়ন, দুর্গাপুর ইউনিয়ন ও নরোত্তমপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়কসহ বাড়ির আঙিনায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি রয়েছে। এতে স্থানীয় লোকজন বাধ্য হয়ে নৌকায় যাতায়েত করছে।

অপরদিকে, টানা বর্ষণে নতুন করে জেলা শহর মাইজদীর স্টেডিয়াম এলাকা, ইসলামিয়া রোড, টাউন হল মোড় রোড, পৌর বাজার সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পর্যাপ্ত ড্রেনেজব্যবস্থার অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আরও ৩-৪ দিন থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

নারায়ণগঞ্জে বৃষ্টি এলেই পানিতে তলিয়ে যায় রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি : নারায়গঞ্জে বৃষ্টি এলেই পানিতে যেন তলিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি। ভারী বর্ষণ হলে তো বলার অপেক্ষা রাখে না। হাঁটুসমান পানি মাড়িয়েই পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এখানেই বসবাস করতে হয়। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।

সোমবার (২৮ জুলাই) দিনব্যাপী ভারী বর্ষণে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। চারদিকের ময়লা পানি এখানে এসে জমে ফাঁড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে কক্ষেও প্রবেশ করেছে। থাকার জন্য প্রতিটি বেড তিন-চারটি ইট দিয়ে উঁচু করতে হয়েছে। এরপরও যেন ময়লা পানি থেকে রক্ষা হচ্ছে না। আরেকটু বৃষ্টি হলে যেন সেখানে বসবাসেরই কোনো উপায় থাকবে না।

পুলিশ সদস্যদের খাবারের জন্য ফাঁড়ির ভিতরে রান্না করতে হয় কাঠের মাচায়। সেই সঙ্গে রয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ময়লা পানিতে এডিস মশার লার্ভা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় ফাঁড়িতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ডেঙ্গু ঝুঁকিতেও আছেন। যে কোনো সময়ে তারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। পাশাপাশি ময়লা পানি মাড়িয়ে চলার কারণে তাদের পায়ে চুলকানিসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। মাঝে-মধ্যে পানিতে আবার জোঁকের দেখা মেলে। পুলিশ সদস্যরা জানান, একজন উপপরিদর্শক (এসআই) এবং একজন সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে ছয়জন পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। এসব পুলিশ সদস্যের এখানেই নিয়মিত থাকতে হয়। একই সঙ্গে রাতেও এখানেই ঘুমাতে হয়। বর্তমানে ফাঁড়িটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে ময়লা পানি মাড়িয়ে একটি জরাজীর্ণ জায়গায় তাদের থাকতে হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল মো. হোসাইন শেখ বলেন, বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে যায়। আমাদের চলাফেরায় অনেক কষ্ট হয়। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানেন। আমাদের পাশে একটি বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে। সেটা সম্পন্ন হলে আমাদের সেখানে নিয়ে যাবে।

নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা এএসআই হুমায়ুন কবির বলেন, বৃষ্টি এলেই আমাদের এখানে পানি উঠে যায়। প্রায় দুই মাস ধরে নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে আর বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যাচ্ছে। প্রতিবারই পানি কমতে এক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। আমাদের এসপি স্যার এসে দেখে গেছেন। তিনি রেলওয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা লিখিতভাবেও আবেদন জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে থাকার পরিবেশ নেই। পানির কারণে আমাদের সব কার্যক্রমেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের থাকা-খাওয়া কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খাবারের পানি পাওয়া যায় না। পোশাক পরে ডিউটিতে যেতে পারি না। পাশে একটা বিল্ডিং হচ্ছে। বিল্ডিংয়ের কার্যক্রম শেষ হলেই আমাদের সেখানে নিয়ে যাবে। তখন এই সমস্যাটা থাকবে না।

নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নাসরিন আক্তার বলেন, এটা অনেক পুরাতন ভবন। এটা ভেঙে ফেলা হবে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখে গেছেন। নতুন করে স্টেশনের পাশে ভবন তৈরি করা হচ্ছে। এটার কাজ চলমান। সেই ভবনের কাজ শেষ হলেই তাদের সেখানে শিফট করা হবে। তখন আর কোনো দুর্ভোগ থাকবে না। সব স্টাফই ভালোভাবে থাকতে পারবে।