Image description
চট্টগ্রামে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা কি গচ্চা

সামান্য বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরকে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে তিনটি সংস্থা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে গৃহীত এ প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে ৮২ ভাগ শেষ হয়েছে। কিন্তু আগেও যেমন বৃষ্টি নামলেই নগর ডুবে যেত, এখনো তাই-ই হচ্ছে। ফলে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে কি না-তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনটি সংস্থা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তার মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পটির মেয়াদ আগামী বছরের জুনে শেষ হবে। প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ। ৩৬টি খালের মধ্যে ২৫টি খালের কাজ শতভাগ শেষ। বাকিগুলোর মধ্যে ছয়টি খালের কাজ ৯০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। আর পাঁচটি খালের কাজ ৯০ শতাংশের নিচে।

তা ছাড়া সিডিএ ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের কাজ প্রায় ৮২ শতাংশ শেষ। চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। চসিক ‘নগরের বহাদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খনন’ শীর্ষক ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ১ হাজার ৩৪৩ কোটি ২১ লাখ টাকার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৪ সালের জুন মাসে। কাজ শেষ না হওয়ায় এটির আরও দুই বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ শতাংশ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৪ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। তবে আবারও মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। জানা গেছে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন সত্ত্বেও চলতি বর্ষা মৌসুমে এরই মধ্যে অন্তত তিনবার ডুবেছে চট্টগ্রাম নগর। এবারের বৃষ্টিতে নগরের নতুন নতুন এলাকাও প্লাবিত হয়েছে। সড়ক-অলিগলি ডুবে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগামী শিক্ষার্থী, এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল ভোর থেকে হওয়া ভারী বৃষ্টিতে নগরের কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাদুড়তলা, বড় গ্যারেজ, সিরাজ-উদ-দৌলা রোড, মুরাদপুর, আতুরার ডিপো, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, হাজীপাড়া এলাকা, মেহেদীবাগ, দুই নম্বর গেট, দেওয়ানহাট, নয়াবাজার, রিয়াজুদ্দিন বাজার তিনপুল, জামাল খান, প্রবর্তক মোড়সহ বিভিন্ন এলাকার মূল সড়ক-অলিগলি পানিতে ডুবে যায়। অনেক এলাকার নিচতলার বাসা ও দোকানে পানি ঢুকেছে।

জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। কিছু সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টেম্পু, রিকশা, ইজিবাইক চলাচল একেবারে কমে যায়। এ ব্যাপারে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতা ৫০ শতাংশ কমাতে পেরেছি। এটা সময়ের ব্যাপার। ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টির কাজ করছে সিডিএ। এর মধ্যে ২২টি খালের কাজ শেষ হয়েছে। ১৪টি খালের কাজ বাকি আছে। এর বাইরে আরও ২০টি খাল বাকি, সেগুলোও আমাদের সংস্কার করতে হবে। বর্ষাকাল শেষ হলে ওই এলাকার সড়ক উঁচু করার কাজ করা হবে। আগে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, মির্জাপুল এলাকায় পানি উঠত। সেখানে নালার ওপর মার্কেট ভেঙে দেওয়ার পর অনেকটা কমেছে। আগ্রাবাদে বক্স কালভার্টের কাজ চলছে। সেটা শেষ হলে আগ্রাবাদ এলাকার জলাবদ্ধতা অনেকটা কমবে। তবে নগরে এখন আগের মতো পানি জমে থাকে না। বৃষ্টি বন্ধের দেড়-দুই ঘণ্টা পর পানি চলে যায়।