Image description

দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ‘কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই)’-ভুক্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সচিবালয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বেশি থাকে। এরপরও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র যেন অনেকটাই অরক্ষিত। যখন-তখন আন্দোলনের ছোঁতোয় যে কেউ সচিবালয়ের আশপাশে জমায়েত হচ্ছে, হুটহাট নিরাপত্তাবলয় ভেঙে ঢুকে যাচ্ছে সচিবালয়ের ভিতরে। এ কারণে সচিবালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বেড়েছে নানা শঙ্কা। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর একটি সচিবালয়। এর নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও কয়েক স্তর বাড়ানো দরকার।

গত বছর শেখ হাসিনা সরকার পতনের দিন থেকেই জনরোষ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন কেপিআই প্রতিষ্ঠানেও। তারই অংশ হিসেবে সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবনসহ দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় জনরোষের ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়। তবে সে সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা ভঙ্গুর থাকলেও সুরক্ষিত ছিল প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়। তবে এরপর গত এক বছরের মধ্যে সচিবালয়ের ভিতর ও বাইরে নানা জমায়েতসহ আন্দোলনকারীদের অবাধ প্রবেশ দেখা গেছে। সর্বশেষ চলতি মাসের ২২ তারিখ শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগসহ কয়েকটি দাবিতে সচিবালয় গেট ভেঙে ঢুকে যায় শত শত শিক্ষার্থী। গাড়ি ভাঙচুর চালায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৮০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে করা মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, এভাবে সচিবালয়ে প্রবেশ অনভিপ্রেত। এসব ঘটনায় সচিবালয়ে নিরাপত্তা অবশ্যই আরও বাড়ানো দরকার। কারণ ভিতরে কর্মপরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে সরকারকে আরও সতর্ক হতে হবে। দাবিদাওয়া থাকবেই, তবে সচিবালয়ে অবাধ প্রবেশ গ্রহণযোগ্য নয়।

গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের ছুটির দিন গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার পর বাংলাদেশ সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের শীর্ষ দপ্তর বাংলাদেশ সচিবালয়সহ বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের (ইউএনও অফিস) নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে চলতি বছরের শুরুতেই নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এরপর আবার সচিবালয়ের মতো জায়গায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটল।

সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং ৮ আগস্ট ড. ইউনূস সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মহল বৈষম্যের অভিযোগ সংবলিত নানা দাবি নিয়ে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে। এখনো সুযোগ পেলেই সচিবালয়মুখী কর্মসূচির ডাক দেয় বিভিন্ন সংগঠন। গত বছর নিজেদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে সারা দিন বিক্ষোভের পর সন্ধ্যায় সচিবালয়ের ভিতরে প্রবেশ করেন আনসার সদস্যরা।

গত বছরের ২০ আগস্ট এইচএসসি ও সমমানের কিছু পরীক্ষা বাতিল করে অটো পাসের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে গেট ভেঙে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভিতরে ঢুকে পড়েছিল শিক্ষার্থীরা। এইচএসসির ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে গত ২৪ অক্টোবরও সচিবালয়ের ভিতরে প্রবেশ করে বিক্ষোভ করেছিল শিক্ষার্থীরা। সে সময় বিক্ষুব্ধ ৫৪ শিক্ষার্থীকে আটক করেছিল পুলিশ। অনুমতি ছাড়া সচিবালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তাবলয় ভেঙে এভাবে ভিতরে ঢুকে পড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এসব বিষয় নিয়ে ভিতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদ্বিগ্ন। একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কর্মস্থলে নিজেদের অনিরাপদ মনে হচ্ছে। অথচ এটি সর্বোচ্চ প্রশাসনিক জায়গায় যে কেউ মন চাইলেই ঢুকে যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে সচিবালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে আরও কড়াকড়ি আরোপ করে নিরাপত্তা জোরদার করাসহ কার্ড রিডার স্ক্যানিং ব্যবহার ও অত্যাধুনিক পদ্ধতি সংযুক্ত করে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপরও নিরাপত্তাবলয় নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

সচিবালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা প্রত্যাহার : সম্প্রতি সচিবালয়ে ঢুকে পড়ার ঘটনায় সচিবালয় নিরাপত্তা শাখার উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনকে সরিয়ে এ কে এম জহিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ডিসি মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, সচিবালয়ে গেট ভেঙে প্রবেশের ঘটনার পর সেখানে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত ১৫০ জনকে ভিতরে আমরা অ্যাকটিভ রাখি, আরও ফোর্স আছে। এ ছাড়া বাইরের বিভিন্ন পয়েন্টে গুরুত্ব বুঝে অপারেশন থেকে ২-৩ প্লাটুন করে ফোর্স থাকে।