Image description

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার ঘটনার পর রোববার রাতেও নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। এ নিয়ে টানা চার রাত ধরে পাল্টাপাল্টি গুলির ঘটনা ঘটল। এ ছাড়া হামলার পর কাশ্মীরে প্রায় ২ হাজার জনকে আটক করেছে ভারতীয় বাহিনী। হামলায় জড়িত সন্দেহের অনেকের ঘর–বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

রোববার রাতের গোলাগুলির বিষয়ে ভারতের সামরিক বাহিনীর ভাষ্য আগের দিনগুলোর মতোই। তারা জানিয়েছে, কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখায় কোনো উসকানি ছাড়াই গুলি ছোড়েন পাকিস্তানি সেনারা। এরপর ভারত এর পাল্টা জবাব দেয়। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আর আগেই মতোই এদিনও গোলাগুলির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি পাকিস্তান সরকার বা দেশটির বাহিনী।

এই গোলাগুলি নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি অবস্থান করা বাসিন্দাদের নতুন করে দুর্দশার মধ্যে ফেলেছে। এমনই একজন ভারতের ডাওকে এলাকার বাসিন্দা হরদেব সিং। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মাঠে কৃষিকাজ করতে যেতে পারছি না।’ অন্যদিকে লানজোত এলাকার বাসিন্দা শওকাত আওয়ান বলেন, ‘আমরা এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বড় হয়েছি। আমাদের মধ্যে আর ভয় কাজ করে না।’

পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আব্বাসি শনিবার বলেছেন, পাকিস্তানের ১৩০টির বেশি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা নতুন নয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে কাশ্মীরের মালিকানা নিয়ে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে দুই দেশ। তবে ২২ এপ্রিল পেহেলগামে হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর শুরু হওয়া গোলাগুলি বড় উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কারণ, ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে নয়াদিল্লি। যদিও এ অভিযোগ নাকচ করেছে ইসলামাবাদ।

হামলার পর ভিসা বাতিল, সিন্ধু পানিচুক্তি বাতিল, আকাশসীমা বন্ধসহ একরাশ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের নাম না নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘কঠিন জবাব’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। আর পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আব্বাসি শনিবার বলেছেন, পাকিস্তানের ১৩০টির বেশি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় স্বজনের মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন একজন নারী
কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় স্বজনের মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন একজন নারীছবি: এএনআই

পেহেলগাম হামলা ঘিরে এই যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আজ সোমবার পাকিস্তানের কয়েক ডজন ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করেছে ভারত। অভিযোগ—ওই চ্যানেলগুলো কাশ্মীর হামলা নিয়ে উসকানিমূলক তথ্য প্রচার করছে। এ ছাড়া ইউটিউবে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন, সামা টিভি, এআরওয়াই নিউজ, বোল নিউজ, রাফতার, জিও নিউজ ও সুনো নিউজের চ্যানেল নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার।

২ হাজার আটক

পেহেলগামে হামলায় জড়িত সন্দেহে তিনজনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে ভারতীয় পুলিশ। তাঁদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি বলে দাবি করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, এই তিনজন পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর–ই–তাইয়েবার সদস্য। গোষ্ঠীটিকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় রেখেছে জাতিসংঘ। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছে ভারত।

হামলার পর ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের একজন পুলিশ কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাশ্মীরের প্রায় দুই হাজার বাসিন্দাকে আটক করা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তাঁদের অনেককে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই ধরপাকড় ছাড়াও অনেককে থানায় তলব করা হয়েছে।